॥মাহবুব হোসেন পিয়াল॥ আজ ২৯শে মার্চ ফরিদপুরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরবাসীর মনে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরে প্রশাসন, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মহলে ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে ফরিদপুর শহর নবরূপে সজ্জিত হয়ে উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুরে ১হাজার ৩৮কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত ২০টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৪২৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য ১২টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এবং বিকেল ৩টায় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সরকারী রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে জনসভায় ভাষন দেবেন।
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তৃতীয় বারের মত দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুর সফরে আসছেন। ইতিপূর্বে একাধিকবার তাঁর ফরিদপুর সফরে আসার কথা শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত তা ফলপ্রসূ হয়নি। শেখ হাসিনা সর্বশেষ ফরিদপুরে এসেছিলেন ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে নানা প্রাপ্তি ও প্রত্যাশায় বুক বেঁধেছে দল মত নির্বিশেষে ফরিদপুরের সর্বস্তরের মানুষ। এ কারনেই হয়তো প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের চাওয়া তথা প্রত্যাশার বিষয়টিও হয়ে উঠেছে অভিন্ন। রাজনীতির ময়দানে সংঘাত-দ্বন্দ্ব থাকলেও জেলার উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক নেতার তাদের চাওয়া পাওয়ার হিসেবে কষেছেন যেন একই অবস্থানে থেকে, একই সুরে, একই প্রত্যাশায়।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা বলেছেন, আমরা ফরিদপুরকে বিভাগ হিসেবে দেখতে চাই। ফরিদপুরে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় চাই। সিটি কর্পোরেশন ও দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া পয়েন্টে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু চাই ।
প্রায় একই সুরে নিজের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোদাররেস আলী ওরফে ইছা। তাঁর প্রত্যাশা, ফরিদপুর বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়, পাট নির্ভর শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা, গ্যাস সংযোগ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু।
ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার নাজমুল ইসলাম বলেন, বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়, সিটি কর্পোরেশন ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু চাই।
জেলা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, সর্বপ্রথম একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় চাই। ফরিদপুরের নামে ফরিদপুর বিভাগ চাই, তবে বিভাগ ছাড়া সিটি কর্পোরেশন চাই না।
ফরিদপুর সদরের মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা রিক্সা চালক আকমল মন্ডল বলেন, শহর যানজট মুক্ত করা হোক যাতে আমরা নির্বিঘেœ রিক্সা চালাতে পারি।
সংবাদপত্রের হকার নূরল ইসলাম বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় পদ্মা সেতু চাই, পরিস্কার শহর চাই, শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ফ্লাইওভার চাই।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) এরাদুল হক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ২৯শে মার্চ বেলা সাড়ে ১১টায় ফরিদপুরের শেখ জামাল স্টেডিয়ামে হেলিকপ্টারে অবতরণ করবেন। ১১.৪০ থেকে ২.৪০ পর্যন্ত নামাজ ও মধ্যাহ্ন বিরতি। ২.৪৫ থেকে ৩টা পর্যন্ত সরকারী রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে বিভিন্ন স্থাপনার উদ্বোধন ও উন্নয়ন কাজের ভিত্তি স্থাপন করবেন। ৩টা থেকে ৪.২৫ পর্যন্ত ওই মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জসনভায় বক্তব্য রাখবেন। বিকেল সাড়ে ৪টায় প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে ফরিদপুর শহর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ চলছে। ফরিদপুরকে একটি তিলোত্তমা শহর হিসেবে গড়ে তুলতে সবধরণের কর্মযজ্ঞ চালানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে গেট, ব্যানার, পেস্টুন ও পোস্টার সাটানো হয়েছে। সড়কের ডিভাইডারসহ আশে পাশের ভবনগুলি রঙ করা হয়েছে। সড়কের দুই পাশসহ গুরত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় করা হয়েছে আলোকসজ্জা।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তনাজিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে আমরা অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছি। এ লক্ষ্যে প্রশাসন এবং স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সমন্বয় করে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সামনে একটি তিলোত্তমা শহর তুলে ধরতে কাজ করছি।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা বলেন, ফরিদপুর সফরকালে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার ব্যাপারে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।