॥মাহ্ফুজুর রহমান॥ চৈত্রের মাঝামাঝিতে খাল-বিলের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে কাদা-পানি হাতরে মাছ ধরায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে শিশু-কিশোররা।
গতকাল ৩০শে মার্চ দুপুরে রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের সম্রাটনগর এলাকায় পাকা রাস্তার পাশের খালে দেখা গেছে এমনই এক চিত্র। কয়েকজন শিশু-কিশোর খালের শুকিয়ে যাওয়া কাদা পানিতে নেমে দেশীয় প্রজাতির কৈ, শিং, মাগুর, পাবদা, পুটি, চিংড়ি, টেংরা, টাকি, শৌল, চাপিলা মাছ ধরার চেষ্টা করছে।
ওই এলাকার বাসিন্দা মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এলাকার বিল ও রাস্তার পাশের খালে এখন পানি কমে যাওয়ায় প্রচুর দেশী মাছ পাওয়া যাচ্ছে। ভোর হতেই গ্রামের অনেক মানুষ জাল, পলো নিয়ে খাল-বিলে মাছ ধরছে। দেশী মাছ বেশি সুস্বাদু হওয়ায় এই মাছ ধরার ব্যাপারে সবারই আগ্রহ রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, খাল-বিলের শুকিয়ে যাওয়া কাদা পানিতে হাতরে মাছ ধরার প্রথা সেই আবহমান কাল থেকেই চলে আসছে। ফাল্গুন-চৈত্র থেকে শুরু করে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত খাল-বিল, পুকুর-ডোবার শুকিয়ে যাওয়া পানিতে এভাবেই মাছ ধরা চলে। বর্ষার নতুন পানি না আসা পর্যন্ত এটি অব্যাহত থাকে। যদিও এখন আর আগের মত দেশীয় প্রজাতির মাছ মিলে না। তারপরেও মাছ ধরার নেশা এখনো রয়ে গেছে প্রতিটি বাঙ্গালীর মনে। গ্রামীণ নারী, শিশু ও কিশোরেরা এভাবে মাছ ধরতে বেশী আগ্রহী।
সেখানে কিছুক্ষণ থেকে দেখা গেল, শিশু-কিশোররা আনন্দ-উল্লাস করতে করতে কাদা পানির ভিতরে হাত ঢুকিয়ে একের পর এক মাছ তুলে আনছে। এর মধ্যে রয়েছে শোল, টাকি, গজার, পুটি, খলসে, ভেদি, কৈ, মাগুর, সিং, ট্যাংরাসহ বিভিন্ন দেশী প্রজাতির মাছ।
একসময় জলাশয়গুলোতে বিভিন্ন প্রকার মাছ পাওয়া গেলেও এখন দেশীয় প্রজাতির মাছ অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। এসব মাছ বিলুপ্তির কারণ হিসেবে কারেন্ট জালের অবাধ ব্যবহার, ডিমওয়ালা মাছ নিধন, পানি দূষণ, কীটনাশকের ব্যবহার ইত্যাদিকে দায়ী করা হয়। এছাড়াও রয়েছে মাছের নিরাপদ আশ্রয়ের অভাব। দেশে দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে, মাছের চাহিদাও বাড়ছে কিন্তু নদ-নদী, খাল-বিল দখল ও ভরাট হচ্ছে। তাই সচেতন মহলের দাবী, সরকারী হ্যাচারীতে বিলুপ্ত প্রায় মাছের পোনা উৎপাদন করে বর্ষাকালে মাঠে, খালে-বিলে ছাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কারেন্ট জাল বিক্রয় ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে।