॥আশিকুর রহমান॥ রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের আড়কান্দী উচ্চ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনারের বেদীতে মঞ্চ বানিয়ে নাচ-গান পরিবেশন করা হয়েছে। এতে স্থানীয় এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, গত ৬ই মার্চ আড়কান্দী উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ওই অনুষ্ঠানের মঞ্চ বানানো হয় বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের বেদীতে। সাউন্ড বক্স ও বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে ওই মঞ্চে হিন্দি ও বাংলা গান এবং গানের তালে তালে নৃত্য পরিবেশন করা হয়।
স্থানীয় ইশারত, রহিম, রাকিবসহ কয়েকজন বলেন, শহীদ মিনারের বেদীতে মঞ্চ বানানোর আগে আমরা এলাকার অনেকেই প্রধান শিক্ষককে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু তিনি কারও কথা না শুনে শহীদ মিনারের অবমাননা করেছেন। আমরা এর বিচার চাই।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তারেক জানায়, গত দুই বছর ধরে বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের বেদীতে মঞ্চ বানিয়ে এ রকম অনুষ্ঠান করা হয়। শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠান করার জন্য টাকা দিলেও টাকা বাঁচানোর জন্য আলাদা মঞ্চ না করে শহীদ মিনারের বেদীতেইি মঞ্চ বানিয়ে অনুষ্ঠান করা হয়।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সুলতান আলী বলেন, এই শহীদ মিনার বহু রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। এই মিনার ভাষা শহীদদের স্মরণ করার জন্য, শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। এটা নাচ-গান করার জায়গা না। এই ন্যাক্কারজনক কাজ যারা করেছে তাদের বিচার হওয়া দরকার।
শহীদ মিনারের বেদীতে মঞ্চ বানিয়ে অনুষ্ঠান করার কথা স্বীকার করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পলাশ কুমার দে বলেন, শহীদ মিনারটি বহরপুর ইউনয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম বানিয়ে দিয়েছেন। তিনি শহীদ মিনারের সঙ্গে সংযুক্ত করে ওই মঞ্চটি বানিয়ে দিয়েছেন। গত দুই বছর ধরে আমরা ওই মঞ্চে অনুষ্ঠান করে আসছি। আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা হিন্দি, বাংলা গান ও নাচসহ বিভিন্ন পরিবেশনা করে থাকে। এটি কোন ভুল নয়।
বহরপুর ইউনয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ রেজাউল করিম বলেন, আমি যখন ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলাম তখন ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বড় করে শহীদ মিনারটি নির্মাণ করে দিই। সেখানে নাচ-গান হবে তা আমি আশা করিনি এবং এটি জাতির জন্যও দুর্ভাগ্যজনক। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক যেটাকে মঞ্চ বলছেন সেটি মূলত শহীদ মিনারের বেদী। উনি যদি শহীদ মিনারের বেদী আর মঞ্চের পার্থক্য না বোঝেন তাহলে সে দায়ভার উনারই।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বালিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামছুল আলম সূফী বলেন, শরীর খারাপ থাকার কারণে আমি ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারিনি। শহীদ মিনারের বেদীতে মঞ্চ বানিয়ে নাচ-গান করার বিষয়টি স্থানীয় এক সাংবাদিকের মাধ্যমে শুনেছি। এরকম ঘটে থাকলে তা একটি ন্যাক্কারজনক কাজ।
এ ব্যাপারে বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাসুম রেজা বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। শহীদ মিনার মূলত ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নির্মিত। যে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসর সাথে শহীদ মিনারের বেদী নির্মিত হয়ে থাকে সেখানে মঞ্চ তৈরি করে কোন ধরণের অনুষ্ঠান করা একেবারেই কাম্য নয়। এটি আমাদের বিধি ও মূল্যবোধের পরিপন্থী। বিষয়টি তদন্ত করা হবে এবং যারা শহীদ মিনারকে অপব্যবহার করে অপসংস্কৃতির চর্চা করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।