॥শিহাবুর রহমান॥ মোবাইলে জ্বীন পরিচয় দিয়ে নানা রকমের কথাবার্তা বলে এক প্রবাসীর স্ত্রীর কাছ থেকে ২০লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। ঘটনাটি ঘটেছে রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার কসবামাজাইল ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামে।
এ ঘটনায় ৫টি বিকাশ নম্বর দিয়ে থানায় জিডি করলেও প্রায় ৪মাসেও প্রতারক চক্রের সন্ধান করেত পারেনি পুলিশ।
অবশেষে গত ৭ই ফেব্রুয়ারী প্রতারক চক্রের একজনের নাম উল্লেখ করাসহ অজ্ঞাত ৩/৪জনকে আসামী করে রাজবাড়ীর ২নং আমলী আদালতে মামলা করেছেন ওই প্রবাসীর স্ত্রী। আদালত মামলাটি থানায় রেকর্ড করার জন্য পাংশা থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রতারণার শিকার লক্ষীপুর গ্রামের আমেনা খাতুন জানান, ১৩বছর ধরে তার স্বামী খলিল বিশ^াস কুয়েতে থাকেন। তার নাতনী রাহাত আহম্মেদ অসুস্থ হলে তিনি তাকে নিয়ে বিগত ২০১৮ সালের ২৭শে মে পাশ^বর্তী কলিমহর গ্রামের জাহাঙ্গীর মন্ডল(৩৫) এর ভ্যানে খোকসা বাজারে ডাক্তারের কাছে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে ভ্যান চালক জাহাঙ্গীর তাকে একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে(০১৭৭০-০৮১২৪৬) দিয়ে বলেন এটি আমার পীর বাবার। তিনি জ্বীনের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ সারাইতে পারেন। তার কাছে মোবাইল করলে ও হাদিয়া দিলে রোগমুক্তিসহ সংসারের সকল সমস্যা হতে আপনি মুক্তি পাবেন। তার কথায় বিশ^াস করে ওই দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি ওই মোবাইল নম্বরে কল করেন। অপরপ্রান্ত থেকে পুরুষকণ্ঠে একজন কলটি রিসিভ করে তার সংসারের সকল সমস্যার কথা শুনে ২১শত টাকা বিকাশে পাঠাতে বলেন। তিনি সরল বিশ^াসে ২১শ টাকা পাঠিয়ে দেন। এ ঘটনার পর ৩০শে মে রাত দেড়টার দিকে তার মোবাইলে একটি কল আসে। তিনি কলটি রিসিভ করলে মহিলা কন্ঠে একজন কথা বলেন। তিনি তার পরিচয় জানতে চাইলে ওই মহিলা নিজেকে জ্বীন বলে পরিচয় দেন। এরপর ওই মহিলা তাকে বলেন আমার কথা বিশ^াস করে মন দিয়ে আমি যা বলি শোন এবং তা কর। এরপর ওই মহিলা তাকে বলেন তোর পরিবারের সবাই মারা যাবে। এরপর সে তাকে ৫টি বিকাশ নম্বর দিয়ে বলে এই সমস্ত বিকাশ নম্বরে দেড় লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দিবি তাহলে তোর পরিবারের সবাইকে আমি বাচিয়ে দিবো। কিন্তু এসব কথা কাউকে বলা যাবে না। বললে তোর সমস্যা আরো বেশি হবে। তিনি ভয়ে ওই সমস্ত বিকাশ নম্বরে দেড় লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দেন। এরপর থেকে ওই জ্বীন পরিচয়দানকারী মহিলা বিভিন্ন সময়ে নানান কথাবার্তা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছ থেকে সর্ব মোট ২০লক্ষ ৫০হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।
আমেনা খাতুন জানান, ঘটনা চলাকালে বিষয়টি তিনি কাউকে বলতে পারেননি। শুধু একা একা কেঁদেছেন। স্বামীর পাঠানো সব টাকা ও ধার দেনা এবং বাড়ীর গরু বিক্রি করে তিনি টাকাগুলো ওই মহিলাকে দেন। কিন্তু তখন তিনি প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেননি। সব কিছু হারিয়ে যখন তার ভুল ভাঙে ততক্ষণে তার সব শেষ যায়। এক পর্যায়ে খবর পেয়ে তার স্বামী খলিল বিশ^াস বাড়ীতে আসেন এবং ঘটনা শুনে তাকে পর্যন্ত মারপিট করেন। পরে তার স্বামী ওই ৫টি বিকাশ নম্বর উল্লেখ করে গত ১৪ই অক্টোবর পাংশা থানায় ৫২১ নম্বর জিডি করেন। কিন্তু পুলিশ প্রতারক চক্রের কাউকে সনাক্ত বা গ্রেফতার করতে পারেনি।
এ ঘটনায় অবশেষে তিনি কলিমহর গ্রামের সামছুদ্দিন মন্ডলের ছেলে ভ্যান চালক জাহাঙ্গীর মন্ডলসহ অজ্ঞাত ৩/৪জনকে আসামী করে ৪০৬/৪১৯ পেনাল কোড ধারায় মামলা করেন।