॥চঞ্চল সরদার॥ রাজবাড়ীতে আমন ধানের দাম কমায় কৃষকরা হতাশায় ভুগছেন। জেলায় এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। দাম কম হওয়ায় কৃষকরা বলছেন, এই দামে ধান বিক্রি করলে জমিতে যে টাকা খরচ হয়ছে সেটা উঠবে না।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুয়ারী সদর উপজেলায় চলতি মৌসুমে আমন ধান চাষে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১০ হাজার ৭৪৬ হেষ্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১৩ হাজার ৪৪৫ হেষ্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। আমন ধান উৎপাদন হয়েছে ৪০ হাজার ৭৭৪ মেট্রিক টন।
রাজবাড়ী বাজারের ধান হাটের ইজারাদার চঞ্চল হোসেন জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর ধানের দাম অনেক কম। এবার ধানের প্রচুর আমদানি আছে। হাটে বিনা সেভেন ধান প্রতি মণ ৬৪০, স্বর্ণা ধান প্রতি মণ ৬৬০, ৪৯ ধান প্রতি মণ ৬৮০, শিলকোমর ধান প্রতি মণ ৬৬০ টাকা, গুটিস্বর্ণা ধান প্রতি মণ ৬৪০ টাকা ও ৩৩ ধান প্রতি মণ ৬২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এই ধানের দাম ছিল বিনা সেভেন প্রতি মণ ১ হাজার, স্বর্ণা ১ হাজার ৪০ টাকা, ৪৯ ধান ১১শত, শিলকোমর ৯৬০ থেকে ১ হাজার, গুটিস্বর্ণা ৯২০ টাকা ৯৪০ টাকা ও ৩৩ ধান ৯৬০ টাকা থেকে ৯৮০ টাকা করে।
রাজবাড়ী চাল বাজারের চাল বিক্রেতা আব্দুর রহমান মোল্লা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর চালের দাম কম আছে। বাজারে বিনা সেভেন চাল ২৮ থেকে ৩০, স্বর্ণা ২৭ থেকে ২৮, ৪৯ চাল ৩০ থেকে ৩২ টাকা, গুটিস্বর্ণা ২৬ থেকে ২৭ টাকা ও ৩৩ ধানের চাল ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইঊনিয়নের নয়নদিয়া গ্রামের কৃষক আক্কাছ শেখ জানান, এবার ৮ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে ধান রোপন থেকে কাটা পর্যন্ত ৬ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। ধান পেয়েছি ৯ থেকে ১০ মণ করে। এখন ধানের মণ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করে। এই দামে যদি ধান বিক্রি করি তাহলে অনেক লোকসান হবে।
সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের ডাওকি গ্রামের কৃষক সিরাজ খাঁ বলেন, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু ধানের দাম কম থাকায় উৎপাদনে যে টাকা খরচ হয়েছে সেটা উঠবে না। এখন ১০ কেজি ধানের দাম ১৫০ টাকারও কম। যদি এই ধানের দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা করে হতো তাহলে কৃষকরা লাভবান হতো। যদি ধানের দাম এইভাবে থাকে তাহলে কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহ হারাবে। অন্য ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ হবে।
সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ বাহাউদ্দিন সেখ জানান, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর আমন ধানের চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে এবং ফলনও বেশী হয়েছে। আগের চেয়ে এখনকার কৃষকরা অনেক সচেতন। ধান উৎপাদনে নতুন নতুন জাত ও হাইব্রিড ধান, সঠিক পরিমাণে সার প্রয়োগ, সঠিকভাবে চারা রোপন, সমতমত সেচ দেয়া ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে আমন ধানের ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেও কৃষকদের মধ্যে সার ও বীজসহ অন্যান্য উপকরণ বিতরণ ও নানাভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। এতে কৃষকরা উপকৃত হচ্ছে এবং ফলন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। তবে হঠাৎ করেই ধানের দাম কমে গেছে। সরকারীভাবে খাদ্য অধিদপ্তর চাল ক্রয় করা শুরু করলে দাম বাড়তে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে।