॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবস উপলক্ষে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ১৮ই ডিসেম্বর সকালে ‘অভিবাসীর অধিকার-মর্যাদা ও ন্যায় বিচার’-প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বর্ণাঢ্য র্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আম্রকানন চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য র্যালীটি বের হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। এরপর কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোহাম্মদ আশেক হাসানের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে রাজবাড়ী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)’র অধ্যক্ষ কাজী বরকত উল্লাহ, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গৌতম চন্দ্র দে, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নূরে সফুরা ফেরদৌস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার মোঃ মহিউদ্দিন।
এ সময় বিভিন্ন সরকারী দপ্তর ও ব্যাংকের কর্মকর্তাগণ, এনজিও প্রতিনিধি, বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী অভিবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্য, কারিগরি ও যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষণার্থীগণ এবং দিবসটি উপলক্ষে রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, আমাদের প্রবাসীগণ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তাদের শ্রমের মাধ্যমে কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম একটি জনবহুল দেশ। বর্তমানে আমাদের জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটিরও বেশী। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান শুধু দেশের মধ্যে করা সরকারের জন্য বড় ধরণের একটি চ্যালেঞ্জ। যার কারণে অনেক আগে থেকেই আমাদের দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গিয়ে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। যাদের অধিকাংশই কারিগরি দক্ষতা না থাকার কারণে অনেক কম বেতনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। অন্যান্য দেশ তাদের জনশক্তিকে দক্ষ করে বিদেশে প্রেরণ করে আমাদের জনশক্তিকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। সেই কারণে বর্তমান সরকার দেশের প্রতিটি জেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ অন্যান্য বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনশক্তিকে দক্ষ করে বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দক্ষ জনশক্তির চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে অভিবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স আজকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের খাতে পরিণত হয়েছে। গার্মেন্টস শিল্প দেশের প্রথম সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের খাত হলেও এই খাতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে আনুষঙ্গিক অনেক জিনিসের জন্য আমাদের বিদেশীদের উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু অভিবাসীদের ক্ষেত্রে এসব কোন কিছুর দরকার হয় না। তাদেরকে দক্ষ কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান করে বিদেশে পাঠলে কোন নির্ভরতা ছাড়াই বৈদেশিক রেমিটেন্স অর্জন করতে পারি।
তিনি আরো বলেন, আমরা আরো বেশী করে দক্ষ জনবল বিদেশে পাঠাতে পারলে সেদিন আর বেশী দূরে নয় যেদিন এই খাতই হবে দেশের সবচেয়ে বেশী বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের খাত। আমাদের প্রবাসীরা যে যেই দেশে যে পেশায়ই কাজ করুন না কেন তাদেরকে দেশাত্মবোধ বুকে ধারণ করে কাজ করতে হবে। যাতে তাদের কোন কাজের দ্বারা বিদেশে আমাদের দেশের দুর্নাম না হয়। এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে প্রতারিত হওয়া এড়াতে বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা নিয়ে সকল বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে-বুঝে বিদেশে যাওয়ার এবং দেশের উন্নয়নের স্বার্থে নারী-পুরুষ সকলকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান।
আলোচনা সভার শেষে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী রাজবাড়ী জেলার সর্বোচ্চ রেমিটেন্স প্রদানকারী হিসেবে ১ম স্থান অর্র্জনকারী সদর উপজেলার কালিচরণপুর গ্রামের কুয়েত প্রবাসী আমিনুর রহমানকে, ২য় স্থান অর্জনকারী রাজবাড়ী শহরের সজ্জনকান্দার লন্ডন প্রবাসী ডাঃ আবুল হোসেনকে এবং ৩য় স্থান অর্জনকারী সদর উপজেলার পাঁচুরিয়ার কুয়েত প্রবাসী রেদোয়ান সামিনকে ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করেন। তাদের মধ্যে আমিনুর রহমান ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ১ কোটি ২০ লক্ষ, ডাঃ আবুল হোসেন সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ৫৪ লক্ষ ৫৮ হাজার ৭৮৫ এবং রেদোয়ান সামিন কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ৪৭ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা(রেমিটেন্স) দেশে প্রেরণ করেন।
এছাড়াও প্রধান অতিথি দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার (বই) ও সনদপত্র বিতরণ করেন।
উল্লেখ্য, ২০০০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৮ই ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরপর থেকে প্রতি বছর বাংলাদেশসহ জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত সব দেশে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।