॥শিহাবুর রহমান॥ অসুস্থ শ্বাশুড়ী নুরজাহান বেগমকে নক কাটার ব্লেট দিয়ে জবাই করে হত্যা করেছেন পুত্রবধূ রোজিনা বেগম(৪০)। প্রায় দেড় বছর ধরে নুরজাহান বেগম অসুস্থ ছিলেন। প্রায়ই বিছানাতেই প্রসাব পায়খানা করতেন। কারণে অকারণে তিনি পুত্রবধূ রোজিনাকে ডাকাডাকি করতেন। কখনো আবার ঠিকমত দেখা শোনা না করলে ছেলের কাছে অভিযোগ করতেন নুরজাহান বেগম। ফলে রোজিনার স্বামীও মাঝে মধ্যে তাকে গালাগালি করাসহ মারপিট করতেন। এসব কারনে শ^াশুড়ী নুরজাহান বেগমের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন রোজিনা। গত ২৪শে নভেম্বর গভীর রাতে নুরজাহান বেগম কয়েকবার তাকে ডাকাডাকি করে। এতে রোজিনা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ভোর সাড়ে ৩টার দিকে রোজিনার স্বামী বারেক শেখ ও দুই ছেলে তৌহিদুর রহমান এবং তাহের শেখ বাড়ী থেকে আধা কিলোমিটার দূরে ক্ষেতে ফুলকপি তুলতে যায়। এ সুযোগে রোজিনা ঘরে থাকা নক কাটা ব্লেট দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় শ^াশুড়ী নুরজাহানকে কয়েক দফায় পোজ মেরে জবাই করে হত্যা করে। গতকাল ২৫নভেম্বর বিকেলে আদালতে ১৬৪ধারায় জবানবন্দীতে এমন করেই নিজের দোষ স্বীকার করেন রোজিনা বেগম(৪০)। জবানবন্দী শেষে আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের ছেলে বারেক শেখ (রোজিনার স্বামী) অজ্ঞাত আসামী করে বালিয়াকান্দি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বালিয়াকান্দি থানার মামলা নং-২৭, তাং-২৪/১১/২০১৮। ধারাঃ ৩০২/৩৪ পেনাল কোর্ড।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ২৩ নভেম্বর রাত ১০টার দিকে খাবার খেয়ে বারেক শেখ ঘুমিয়ে পড়েন। মা নুরজাহান বেগম ও তার মেয়ে পরশিয়া(৯) বাড়ীর উত্তর পোতার চৌচালা টিনের ঘরে ঘুমিয়ে পড়ে। ভোর সাড়ে ৩টার দিকে বারেক শেখ তার দুই ছেলেকে নিয়ে বাড়ী থেকে আধা কিলোমিটার দূরে একটি ক্ষেতে ফুলকপি তুলতে যান। কিছুক্ষণ পর তাদের সাথে থাকা নছিমন চালক মেনন শেখের মোবাইলে তার স্ত্রী রোজিনা ফোন করে তাকে জানায় তার মায়ের ঘরে (নুরজাহান বেগম) বিদ্যুৎ বন্ধ এবং ঘরে কারা যেন লাঠি দিয়ে আঘাত করছে। এ খবর পেয়ে বারেক শেখ দ্রুত ২ ছেলেকে নিয়ে বাড়ী এসে দেখেন বিছানার উপর তার মায়ের রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। এছাড়াও ঘরের মধ্যে রক্ত ছড়িয়ে আছে। এসময় তিনি তার মায়ের কাছে গিয়ে দেখের তার গলার বাম পাশে কাটা রয়েছে।
এদিকে, এ হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে ওই দিন সকালে(২৪ নভেম্বর) বালিয়াকান্দি থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) একেএম আজমল হুদার নেতৃত্বে থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহত নূরজাহান বেগমের রক্তমাখা ব্লাউজ ও কম্বল জব্দ করে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পাংশা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল করিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এরপর রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম-(সেবা) ডিবি’র কর্মকর্তাদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যান এবং নিহতের ছেলে বারেক শেখসহ পরিবারেরর অন্যান্য সদস্য ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলেন।
এ সময় পুলিশ সুপারের নির্দেশনা মোতাবেক নিহতের ছেলে বারেক শেখ, তার স্ত্রী রোজিনা বেগম ও বড় ছেলে তৌহিদুরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে বালিয়াকান্দি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বারেক শেখ ও তার ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদের পর থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এরপর (২৪শে নভেম্বর) সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পূর্বে বালিয়াকান্দির ওসি একেএম আজমল হুদা, ডিবির ইন্সপেক্টর জিয়ারুল ইসলাম এবং বালিয়াকান্দি থানার এসআই নূর মোহাম্মদসহ পুলিশের একটি দল ফের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা একটি ব্লেট উদ্ধার করেন।
গতকাল ২৫ নভেম্বর নিহতের পুত্রবধূ রোজিনা বেগম ও তার শিশু কন্যা পরশিয়াকে আদালতে হাজির করা হলে সে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দী প্রদান করে। জবানবন্দী শেষে আদালত রোজিনা বেগমকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন এবং শিশু কন্যা পরশিয়াকে তার বাবা বারেক শেখের জিম্মায় ছেড়ে দেন।