॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ ৪৭তম জাতীয় সমবায় দিবস উপলক্ষে “সমবায় ভিত্তিক সমাজ গড়ি, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করি” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন, সমবায় বিভাগ ও সমবায়ীদের আয়োজনে গতকাল ২৫শে মার্চ সকালে বর্ণাঢ্য র্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
দিবসটি উপলক্ষে সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় ও সমবায় পতাকা উত্তোলনের পর একটি বর্ণাঢ্য র্যালী জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সামনে থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। র্যালীতে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেক, জেলা সমবায় কর্মকর্তা আভা রানী সাহা, সদর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা সেলিনা পারভীন, সমবায় বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ, কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের কর্মকর্তাগণ ও সমবায়ীগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
র্যালী শেষে সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে দিবসটির আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী। জেলা সবায় কর্মকর্তা আভা রানী সাহার সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক লিঃ এর সভাপতি এডঃ এম.এ খালেক, সহ-সভাপতি আব্দুল ওহাব, সেবা বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি নব কুমার দত্ত প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা সমবায় কার্যালয়ের ডিএফটি কর্মকর্তা মোঃ আবু জাফর মিয়া এবং সভা সঞ্চালনা করেন সদর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা সেলিনা পারভীন। এ সময় জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার পাল, কালচারাল অফিসার পার্থ প্রতিম দাস, সমবায় ব্যাংকের সাবেক সভাপতি আবু জাফর মিয়া, জেলা ও উপজেলা সমবায় অফিস, কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তগণ ও সমবায়ীগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
আনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী তার বক্তব্যে বলেন, বাংলদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু দেশ পুনর্গঠনসহ কৃষিপ্রধান দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে দেশের যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে জাতীয় সমবায় দিবস পালনের মাধ্যমে দেশে সমবায় কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেশের শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন ও একজন সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে বঙ্গবন্ধুর সেই সমবায় কার্যক্রমকে নিরুৎসাহিত করে দেশে যুবকদের বিভিন্ন হাট-বাজার ইজারা প্রদানের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের প্রথা চালু করা হয়। যার ফলে দেশে সমবায় কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ে দেশ অনেক পিছিয়ে যায়। অথচ আজকে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো বিভিন্ন সেক্টরে সমবায় মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে উন্নতির শিখরে আহরণ করেছে। আমাদের এশিয়া মহাদেশের থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের উন্নতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা সেটাই দেখতে পাই। ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড তাদের স্বাধীনতার পর কৃষিভিত্তিক সমবায় কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আমাদের থেকে অনেক বেশী উন্নয়ন সাধন করেছে। অথচ আমাদের দেশ কৃষি ক্ষেত্রে অনেক বেশী সম্ভাবনাময় হওয়া সত্ত্বেও মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের কারণে অনেক পিছিয়ে আছে। আমাদের দেশে একজন কৃষক উৎপাদিত পণ্যের শতকরা ২৫ ভাগ দাম পায় আর বাকী ৭৫ ভাগ মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা ভোগ করে। যার কারণে আজকে আমাদের কৃষকরা কৃষি পণ্য উৎপাদন করেও তাদের লাভতো দূরে থাক উল্টো ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। অথচ সমবায়ের মাধ্যেমে কৃষক তার পণ্য বাজারজাত করতে পারলে তাদের অবস্থা আজ এ রকম হতো না। সেই বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর সমবায়ের মাধ্যমে দেশের যুবকদের সমবায়ের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যুবকদের প্রশিক্ষণ প্রদানসহ ঋণ প্রদানের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে এবং সমবায়ের মাধ্যমে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করেছে।
তিনি তার বক্তব্যে আরো বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সেক্টর হচ্ছে গার্মেন্টস ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স। সে বিষয়টিকে চিন্তা করে বর্তমান সরকার দেশের গার্মেন্টস ও প্রবাসে কর্মরত শ্রমিকদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। যার ফলে আজ দেশে-বিদেশে বাংলাদেশীদের দক্ষ শ্রমবাজার সৃষ্টি হয়েছে। আবার সকল কাজে নারী-পুরুষদের সমঅধিকার সৃষ্টির মাধ্যমে সকল কাজে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ফলে দেশের অর্থনীতিতে নারীরা আজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ ছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।