॥কাজী তানভীর মাহমুদ॥ পারিবারিকভাবেই এক মাস আগে(গত ৭ই জানুয়ারী) পাশের গ্রামের ব্যবসায়ী মোস্তাক ফকিরের সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিল ধার্মিক ও মেধাবী ছাত্রী মিতা খাতুন(২০)। বাবার বাড়ী ছেড়ে নতুন ঘর বাধার আশায় স্বামীর বাড়ীতে নববধু সেজে গিয়েছিল সে। কিন্তু যৌতুক লোভী ও বিকৃত মানসিকতার স্বামীর লালসা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে লাশ হয়ে আবার ফিরতে হলো বাবার বাড়ীতে।
এমনই হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে গত ৫ই ফেব্রুয়ারী রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার শালমারা গ্রামে নিহত মিতার স্বামীর বাড়ীতে। ঐদিন সকালে পুলিশ মিতার মরদেহ মোস্তাকের বসতবাড়ী থেকে উদ্ধার করে। পরে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে। ঘটনার পর মোস্তাককে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। এতে মিতার মৃত্যুর সঠিক তদন্ত নিয়ে শংকায় পড়েছে মিতার বাবা মোঃ সামসুল সেখ ও গ্রামবাসী। অনেকেই মনে করছে, মোস্তাক তার প্রবাসী ভাইয়ের অর্থের জোরে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
মিতার স্বামী মোস্তাক ও তার ভাবীর মধ্যে একটি অনৈতিক সম্পর্কের দিকে আঙ্গুল তুলছে মিতার পরিবার ও গ্রামবাসী। মিতার পরিবারের সদস্য ও গ্রামবাসীর অভিযোগ, স্বামীর পরকীয়ার বিষয়টি জেনে ফেলাই কাল হয়েছে মিতার জীবনে। অনৈতিক কোন কিছু দেখে ফেলাতেই মিতাকে হত্যা করেছে মোস্তাক ও তার ভাবী। মিতা বালিয়াকান্দি উপজেলার বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের পাইককান্দি গ্রামের ৫নং ওয়ার্ডের অসহায় দরিদ্র মোঃ সামসুল সেখের মেয়ে। আর মিতার স্বামী পাশের গ্রাম শালকি ২নং ওয়ার্ডের রাজ্জাক ফকিরের ছেলে মোস্তাক ফকির(৩৫)।
মিতার বাবা মোঃ সামসুল সেখ জানান, মাসখানেক আগে মোস্তাকের সাথে পারিবারিকভাবে মিতার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই মিতার উপরে অমানষিকভাবে নির্যাতন চালাতো মোস্তাক। গত ৫ই ফেব্রুয়ারী মিতাকে মোস্তাক ও তার ভাবী নির্যাতন করে হত্যা করেছে। মেয়ের মৃত্যুর সঠিক তদন্ত চাই। থানায় মামলা নেয়নি। পুলিশ বলেছে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এলেই মামলা হবে।
মিতার মা শাহিদা বেগম মোস্তাকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, মিতাকে একা পেয়ে মোস্তাক ও তার ভাবী মিতাকে হত্যা করেছে। আমরা মোস্তাক ও তার ভাবীর ফাঁসি চাই।
মিতার চাচা মোঃ বজলুর রহমান জানান, গত ৭ই জানুয়ারী মোস্তাকের সাথে মিতার বিয়ে হয়। বিয়েতে দুই পক্ষের লোকই উপস্থিত ছিলো। মোস্তাকের বড় ভাই প্রায় ২০ বছরের বেশী সময় বিদেশে থাকে। বিয়ের পরে সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও গত ৫/৬দিন আগে জানতে পারি মিতার স্বামী মোস্তাকের সাথে তার ভাবীর সম্পর্ক রয়েছে। ঘটনার দিন আমাদের কাছে মিতার মৃত্যুর খবর আসে। মিতার শ্বশুর বাড়ীতে যাওয়ার পথেই লোকজন বলছিল মিতার উপরে কয়েকদিন ধরেই নির্যাতন চলছে। মিতাকে হত্যা করা হয়েছে। গিয়ে দেখি মিতার শরীর ঘরের আড়ার সাথে ওড়না দিয়ে ঝুলছে। তবে মৃতদেহ দেখে বোঝা যায় যে মিতাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা দোষীদের ফাঁসির দাবী জানাই।
পাইককান্দি গ্রামের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ আকরাম হোসেন খান জানান, আমরা বালিয়াকান্দি থানায় গিয়ে অভিযোগ করি। কিন্তু ওসি জানান অপমৃত্যু মামলার পর ময়না তদন্তের রিপোর্ট এলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে আমাদের ধারণা মিতার স্বামী ও তার ভাবী মিলেই মিতাকে হত্যা করেছে। আর এই ঘটনার প্রধান দোষী মোস্তাকের ভাবী। লাশের অবস্থা দেখে আমাদের কাছে মনে হয়নি আত্মহত্যা। আমরা মোস্তাক ও তার ভাবীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
স্থানীয় ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য সাহিদা বেগম জানান, ঘটনার দিন সকালে মিতা কোরআন শরীফ পড়েছে। গরু-ছাগল পালন করেছে। মোস্তাকের ভাইয়ের মেয়ে মক্তবে পড়ে, তাকে সেখানে এগিয়ে দিয়ে এসেছে। তার পরেই মৃত্যুর ঘটনা। ধারণা হয় যে, মিতাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা চাই সুষ্ঠু বিচার হোক।
বালিয়াকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নায়েব আলী জানান, মিতার স্বামীর বাড়ীর এলাকার অধিকাংশ মানুষই বলছে যে মিতাকে হত্যা করা হয়েছে। এখন ময়না তদন্তের রিপোর্ট এলেই বিষয়টি বোঝা যাবে যে এটি হত্যা না কি আত্মহত্যা।
বালিয়াকান্দি থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জাহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, গত ৫ই ফেব্রুয়ারী ঘটনার দিনে মিতার মৃতদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে ময়না তদন্তের রিপোর্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অভিযুক্ত মিতার স্বামী মোস্তাককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মোস্তাক পুলিশের নজরদারীতে আছে। এ ব্যাপারে পুলিশের তদন্ত চলছে।