॥রফিকুল ইসলাম॥ রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে গতকাল ৩রা নভেম্বর যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে শোকাবহ ‘জেল হত্যা দিবস’ পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে সকাল ৮টায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় প্রাঙ্গনে জাতীয়, দলীয় ও কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ, বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় ৪ নেতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, বেলা ৩টায় একই স্থানে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডাঃ শেখ আব্দুস সোবহানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, সহ-সভাপতি ও রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এডঃ শফিকুল আজম মামুন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এডঃ রফিকুল ইসলাম, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এস.এম নওয়াব আলী, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর সহধর্মিনী ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রেবেকা সুলতানা সাজু, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান, রাজবাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এডঃ উজির আলী শেখ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এডঃ আশরাফুল হাসান আশা, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, জেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক আবুল হোসেন শিকদার, জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার সাইফুদ্দিন হাবিব, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান আনিস, জাতীয় মহিলা সংস্থার জেলা শাখার চেয়ারম্যান তানিয়া সুলতানা কংকন ও চন্দনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আঃ রব প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সভা সঞ্চলনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এডঃ সফিকুল হোসেন সফিক।
আলোচনা সভায় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বরের জেল হত্যার মতো এত বড় জঘন্যতম ঘটনা পৃথিবীতে আর কখনোই ঘটেনি। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে যারা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সেই জাতীয় ৪ নেতাকে খুনী মোশতাকের সরকারের মদদে জেলখানার মতো সুরক্ষিত স্থানে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। খুনীরা মনে করেছিল তাদেরকে হত্যা করলে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বশূন্য হয়ে যাবে। তাদের ক্ষমতায় থাকা নিষ্কন্টক হবে। বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় ৪ নেতার খুনীদের বিচার করা দূরে থাক, তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। এমনকি বিচার করা যাবে না-মর্মে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারীর মাধ্যমে জাতীয় সংসদ ও সংবিধানকেও কলংকিত করা হয়। কিন্তু খুনী চক্রের দুরাশা পূরণ হয়নি। আমরা ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় ৪ নেতার খুনীদের বিচার করেছি।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে দেশটাকে লুটপাটের রাজত্ব বানিয়েছিল। সকল অপকর্মের গোড়ায় ছিল হাওয়া ভবন। ঘুষ-দুর্নীতি, লুটপাটসহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ওই সময় আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। কিন্তু আমাদের সরকার তাদের মতো ধ্বংসাত্মক রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করি। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। দেশের সর্বত্র ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের রাস্তাঘাটও পাকা হয়েছে। প্রায় শতভাগ এলাকায় বিদ্যুতায়ন হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর মাধ্যমে অসহায়-দুঃস্থ মানুষকে বিভিন্ন ধরনের ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। শিক্ষা খাতের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে। আমরা সমুদ্র জয় করেছি। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট প্রেরণের মাধ্যমে মহাকাশও জয় করেছি। দেশের অধিকাংশ এলাকায় ফোর-জি ও উচ্চ গতির ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। মানুষের হাতে হাতে স্মার্টফোন শোভা পাচ্ছে। সত্যিকার অর্থেই দেশ আজ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে।
বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, তারা বলে আমরা নাকি খালেদা জিয়াকে জেলে দিয়েছি। কিন্তু তা মোটেই সত্য নয়। যে মামলাগুলোতে তার সাজা হয়েছে সেই মামলাগুলো দায়ের করেছিল বিগত তত্ত্বাবধায় সরকার। এতিমদের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় বিজ্ঞ আদালত তাকে সাজা দিয়েছে। এতে সরকারের কোন হাত নেই। একইভাবে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তারেক রহমান দন্ডিত হয়েছে। সাজা খাটার ভয়ে সে বিদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক বলেই তাদের সাথে সংলাপে বসেছে। আশা করি বিএনপি এবার আর ভুল করবে না। তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। অন্যথায় তারা অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।
তিনি নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। এ ছাড়াও তিনি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি অব্যাহত রাখার জন্য আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে পুনরায় সরকার গঠনের সুযোগ দেয়ার জন্য জেলাবাসীর প্রতি অনুরোধ জানান।
আলোচনা সভার শেষে জাতীয় ৪ নেতার রূহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন আটাশ কলোনী জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মোঃ সেলিম দেওয়ান। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।