॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে ‘আইন মেনে চলবো, নিরাপদ সড়ক গড়বো’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন ও বিআরটিএ’র আয়োজনে গতকাল ২২শে অক্টোবর সকালে বর্ণাঢ্য র্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
দিবসটি উপলক্ষে সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আম্রকানন চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালী বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। এরপর কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আলমগীর হুছাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন ও অপরাধ) মোহাম্মদ রাকিব খান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কে.বি.এম সাদ্দাম হোসেন, বিআরটিএ’র কর্মকর্তা মোঃ আবুল কালাম আজাদ, জেলা বাস মালিক গ্রুপের মোঃ মুরাদ হাসান, জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ রকিবুল ইসলাম পিন্টু ও সাংবাদিক রবিউল খন্দকার মজনু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, জেলা সড়ক বিভাগ ও বিআরটিএ’র বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ, জেলা বাস মালিক গ্রুপ ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ, রোভার স্কাউট ও গার্লস গাইডের সদস্যগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, শহর ও গ্রামাঞ্চলে সড়ক বিভাগ মহাসড়ক উন্œয়নে ও এলজিইডি মহাসড়ক বাদে বিভিন্ন ছোট ছোট রাস্তা তৈরী ও সংস্কারের কাজ করে থাকে। রাস্তা তৈরীর সময় প্রত্যেকটি বিভাগকে দুর্ঘটনা কমার জন্য পরিকল্পনা মাফিক তৈরী করতে হবে। দুর্ঘটনাপ্রবণ রাস্তার প্রতিটি মোড় ও বাঁকে পর্যাপ্ত জায়গা রেখে রাস্তা তৈরী করতে হবে। একসময় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ছিল সবচেয়ে দুর্ঘটনাপ্রবণ। কিন্তু বর্তমানে যেসব জায়গায় দুর্ঘটনা বেশী ঘটতো সেখানে ডিভাইডার তৈরীসহ মোড়গুলোতে পর্যাপ্ত জায়গা রাখার কারণে দুর্ঘটনা অনেক কমে এসেছে। দৌলতদিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কের মকবুলের দোকানের মোড়ে মহাসড়কের পাশে জঙ্গল থাকায় বিপরীত দিকের গাড়ী দেখতে না পাওয়ায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটতো। পরবর্তীতে জঙ্গল পরিষ্কার ও গাছ কেটে ফেলার কারণে দুর্ঘটনার পরিমাণ অনেক কমে এসেছে।
তিনি বলেন, আমি সড়ক বিভাগকে অনুরোধ করবো যেসব মোড়ে গাছ ও জঙ্গলের কারণে গাড়ী দেখতে অসুবিধা হয় সেগুলো কেটে ফেলতে। বর্তমানে পরিবহন সংশ্লিষ্ট বাস মালিকরা অনেক নতুন নতুন ভালো বাস কেনেন। কিন্তু সেই বাস চালানোর জন্য অনেক সময়ই অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ চালক নিয়োগ দেন। আবার বেশী লাভের আশায় চালকদের ৮ঘন্টার বেশী মাত্রাতিরিক্ত গাড়ী চালাতে বাধ্য করেন ও কারণে-অকারণে চালকদের বরখাস্ত করেন। সেই কারণে চালকরা বাধ্য হয়ে বিনা বিশ্রামে তার ক্ষমতার অতিরিক্ত গাড়ী চালান। যার ফলে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটে চালকসহ অনেক যাত্রী মারা যান। চালকদের গাড়ী চালানোর সময় তার পরিবার ও ছেলেমেয়েদের কথা চিন্তা করে সাবধানে সচেতনতার সাথে গাড়ী চালাতে হবে। বিশ্বের অনেক দেশেই সড়ক দুর্ঘটনা হয় কিন্তু বাংলাদেশের মতো তারা সড়ক দুর্ঘটনা ঘটানোর পর পালিয়ে যায় না। তারা দুর্ঘটনা ঘটানোর পর নিজেরাই পুলিশ ও উদ্ধারকারী সংস্থাকে ফোন করে দুর্ঘটনা কবলিতদের রক্ষার জন্য। কিন্তু আমরা কোন দুর্ঘটনা ঘটলে আর তাতে কেউ মারা গেলে তার খবর নেয়া তো দূরে থাক পালিয়ে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করি। আবার সাধারণ মানুষও আইন হাতে তুলে নিয়ে চালকদের মারপিট ও গাড়ী পুড়িয়ে দেয়। আমাদেরকে অবশ্যই এই সংস্কৃতি ও মানসিকতা থেকে বের হয়ে এসে দুর্ঘটনা ঘটলে অন্যান্য দেশের মতো সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ও উদ্ধারকারী সংস্থাকে ফোন দিয়ে জানানোসহ নিজেদের দোষ স্বীকার করে নিতে হবে।
এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে বাংলাদেশের সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকারে করণীয়, মহাসড়কে অনুমোদনবিহীন যানবাহন চলতে না দেয়া, চালকদের সতর্কতার সাথে গাড়ী চালানো, সড়ক সংশ্লিষ্টদের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় ট্রাফিক সাইন ব্যবহার, সাম্প্রতিক সময়ে জেলার দৌলতদিয়ায় ২স্কুল ছাত্রী ও জামালপুর রেলক্রসিং-এ অবৈধ পটাং গাড়ীর দুর্ঘটনায় ৪জন শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনা, গোয়ালন্দ মোড়ের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে যাওয়া, মোটর সাইকেল চালকদের লাইসেন্স, হেলমেট ও গাড়ীর কাগজপত্র না থাকা, বিআরটিএ’র সড়ক ও মহাসড়কে ফিটনেস পরীক্ষার জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং লাইসেন্স ও ফিটনেস প্রদানের ক্ষেত্রে কাগজপত্র ঠিক আছে কি না তা দেখা, চালকদের লাইসেন্স প্রদানে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা নেয়াসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করেন।