॥শিহাবুর রহমান॥ দাফনের ৪৫দিন পর আদালতের নির্দেশে কবর থেকে রাজবাড়ী শহরের চরলক্ষীপুর এলাকার বাসের হেলপার শিপন শেখ(১৭) লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। গতকাল ১৮ই অক্টোবর সকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মহিউদ্দিনের উপস্থিতিতে মুরগীর ফার্ম সংলগ্ন পৌরসভার ১নং কবরস্থান থেকে পুলিশ লাশটি উত্তোলন করে।
গত ৫ই সেপ্টেম্বর সকালে বাড়ীর পাশে একটি কড়ই গাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থায় শিপনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে শিপনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হলেও ওই সময় রাজবাড়ী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে গত ১৮ই সেপ্টেম্বর শিপনের মা সাবিয়া বেগম বাদী হয়ে রাজবাড়ীর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১নং আমলী আদালতে ৫জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মিসপিটিশন নম্বর-২৪৫/১৮। ধারাঃ ৩০২/৩৪ দঃ বিঃ।
মামলার আসামীরা হলো ঃ বাগমারা ঢাকালেপাড়ার কারির ছেলে রাকিব(২০), চরনায়নপুর গ্রামের আজাদের ছেলে আদর(১৯), চরলক্ষীপুর গ্রামর আক্তারের ছেলে সোহেল ওরফে সোহান, ছুরাফ শেখের ছেলে শান্ত শেখ ও ছুবান শেখের ছেলে সোহান শেখ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বাবা সামাদ শেখ ও বড় ভাই মিজান শেখ অসুস্থ্য থাকায় শিপন অল্প বয়সেই বাস শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতো। সে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে কাজে যেতো এবং রাতে বাড়ী ফিরত। ঘটনার কয়েক দিন আগে একই এলাকার এক পুলিশ অফিসারের বাড়ীর পানি উত্তোলনের মোটর চুরি হয়। অধিক রাতে বাড়ী ফেরায় উল্লেখিত আসামীরাসহ তাদের কিছু সহযোগি শিপনকে চুরির সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে ওই পুলিশ অফিসারের বাড়ীতে ধরে নিয়ে যায়। ওই পুলিশ অফিসার মোটর উদ্ধারের দায়িত্ব উল্লেখিতদের ওপর দিয়ে কর্মস্থলে চলে যায়। এরপর উল্লেখিতরা শিপনের কাছে ১০ হাজার টাকা দাবী করে এবং ৩দিনের মধ্যে টাকা না দিলে তারা তাকে লাশ বানিয়ে ঝুলিয়ে রাখবে বলে হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেয়।
গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে কাজ শেষ করে বাড়ীতে এসে খাওয়া দাওয়ার প্রস্তুতি নিলে উল্লেখিতরা এসে শিপনকে ডেকে নিয়ে যায়। এ সময় তার মা সাবিয়া বেগম বাঁধা দিলে তারা জানায় শিপনকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অভিযোগ প্রমাণ না হলে ছেড়ে দেয়া হবে। তবে তারা সাবিয়া বেগমকে বলে যায় শিপনকে সহজে ছেড়ে নিতে হলে ১০ হাজার টাকা লাগবে। এই বলে তারা শিপনকে জোর পূর্বক ধরে নিয়ে যায়। এরপর ওই রাতে সাবিয়া বেগম এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের স্মরণাপন্ন হলে স্থানীয়ভাবে তারা সকালে বসবে বলে ওই সময় পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতে বলে। এরপরেও সাবিয়া বেগম উল্লেখিত প্রত্যেকের বাড়ীতে যায়। তবে তাদেরকে না পেয়ে তিনি বাড়ীতে ফিরে আসেন। পরদিন সকালে বাড়ীর পাশে একটি কড়ই গাছের সাথে শিপনের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়।
এরপর স্থানীয় মাতুব্বরদের খবরে পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে। এ সময় আসামী পক্ষের লোকজন পোষ্ট মর্টেম ছাড়াই লাশ দাফন করতে পারবে বলে মৃতদেহ কাটা ছেড়া না করার জন্য সাবিয়া বেগমকে পরামর্শ দিতে থাকে। তখন এলাকার কিছু লোকজনের চাপে শিপনের পোষ্ট মর্টেম করানো হয়। এ ঘটনার পর সাবিয়া বেগম ও তার পরিবারের লোকজন থানায় মামলা করতে গেলে কর্তৃপক্ষ ময়না তদন্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত মামলা করা যাবে না বলে জানায়।
মামলার এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, শিপনের পরিবারের লোকজন গোপনে খবর পান আসামী পক্ষের লোকজন পোষ্ট মর্টেম রিপোর্ট ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। গত ১৩ই সেপ্টেম্বর তারা রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে গিয়ে খবর নেন পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট করা হয়েছে। তবে অজ্ঞাত কারণে সেটি আটকে আছে।
সাবিয়া বেগমের ধারণা তার ছেলে শিপনকে উল্লেখিতরা পূর্ব পরিকল্পনা করে হত্যা করে এবং আত্মহত্যা দেখানোর জন্য শিপনের লাশ গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখে।
রাজবাড়ী থানার এস.আই বদিয়ার রহমান জানান, শিপনের পরিবার আদালতে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করলে আদালত লাশটি উত্তোলন করে মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য পুনরায় ময়না তদন্তের নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে গতকাল ১৮ই অক্টোবর সকালে লাশটি কবর থেকে উত্তোলন করে পুনরায় ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়।