বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ০২:১৩ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

কালুখালীর রতনদিয়ায় সাঁকো ভেঙ্গে যাওয়ায় ২৫টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ

  • আপডেট সময় সোমবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৮

॥কাজী তানভীর মাহমুদ॥ কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের পদ্মার চরাঞ্চল থেকে নদীপথ পাড়ি দিয়ে উপজেলার হাট-বাজারে আসার জন্য তৈরী করা হয়েছিলো বাঁশের সাঁকো। এ বছরের বর্ষার প্লাবিত স্রোতে সাঁকোটি ভেঙ্গে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে ২৫টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ।
রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নে পদ্মা নদীর শাখা কোল বলে পরিচিত হিরু মোল্লার ঘাট। উপজেলা শহর রক্ষা বাঁধের ওপারে প্রায় ২৫টি গ্রামের মানুষ কালুখালী উপজেলা ও জেলা শহরে আসার জন্য ২০১৩ সালে প্রায় ১শ ফুট দৈর্ঘ্যরে বাঁশের সাঁকোটি তৈরী করেছিল কালুখালী উপজেলা পরিষদ। চলতি বছরের বর্ষার প্লাবিত ¯্রােতে তা ভেঙ্গে গেছে। বাধ্য হয়ে তাই খেয়া নৌকায় হতে হচ্ছে পারাপার। সময়মত নৌকা না মেলায় পোহাতে হচ্ছে নানা ভোগান্তি। ব্যাহত হচ্ছে এসব এলাকার শিক্ষাথীদের লেখাপড়া ও কৃষি পণ্যের বাজারজাতকরণ।
হিরু মোল্লার এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ যাতায়াত করে। শুষ্ক মৌসুমে বালুর চরের উপর দিয়ে পায়ে হেঁটে পারাপার হওয়া গেলেও বর্ষা মৌসুম এলেই বেড়ে যায় দুর্ভোগ। ভুক্তভোগীদের দাবী, দ্রুত সাঁকোটি মেরামতের পাশাপাশি একটি ব্রীজ নির্মাণের।
রতনদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য মাসুদ সেখ বলেন, হিরু মোল্লার ঘাটে নদী পারাপারের জন্য বাঁশের যে সাঁকোটি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে করে দেয়া হয়েছিল তা এবারের বর্ষায় স্র্রোতে ভেঙ্গে গেছে। চরাঞ্চলের মানুষের যাতায়াত খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছে। একটি মাত্র খেয়া নৌকা দিয়ে মানুষকে পারাপার হতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তির শেষ নাই। রতনদিয়া ইউনিয়নের হরিণবাড়ীয়া, মাধবপুর, চাঁদপুর বাজার থেকে কালুখালী উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হাট-বাজারসহ নানা প্রয়োজনে মানুষ আসে। শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে যাতায়াত করে। সবাইকেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
চরাঞ্চলে অবস্থিত হরিণবাড়ীয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, সাঁকোটি ভেঙ্গে গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের সমস্যা হচ্ছে। অনেক শিক্ষককে নদী পার হয়ে ওপারে যেতে হয়। সময়মত নৌকা না পেলে সঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। লেখাপড়ার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ জন্য অত্র অঞ্চলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে অতি দ্রুত একটি ব্রিজ নির্মাণ করা প্রয়োজন।
কালুখালী বালিকা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী চায়না খাতুন বলেন, আমাদের বাড়ী পদ্মার চরে। চর থেকে প্রতিদিন নদী পাড়ি দিয়ে কালুখালী উপজেলায় আসতে হয়। বাঁশের সাঁকোটি ভেঙ্গে গেছে। খেয়া নৌকা সময়মত মেলে না। এ জন্য বিদ্যালয়ে সময়মত পৌঁছাতে পারি না।একটি ব্রীজ হলে ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ায় অনেক সুবিধা হতো।
মুদী দোকানী করিম মোল্লা বলেন, আমরা যারা নদীর ওপারে ছোট দোকান করি তাদেরকে কালুখালী শহরে গিয়ে কেনাকাটা করে আনতে হয়। নৌকায় পারাপার হওয়ার জন্য অনেক সময় ব্যয় হয়। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যর অবস্থাও খারাপ হয়ে গেছে। ব্রিজটি হলে সবার কষ্ট লাঘব হবে।
রতনদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসিনা পারভীন নিলুফা বলেন, কয়েক বছর আগে উপজেলা পরিষদ এই সাঁকোটি নির্মাণ করে দেয়। পরবর্তীতে আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর ২লক্ষ টাকা ব্যয়ে সাঁকোটি সংস্কার করে দিয়েছি। শুকনো মৌসুমে এই সাঁকোর উপর দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পারলেও এখন পানি উঠে ভেঙ্গে যাওয়ায় তারা আর চলাচল করতে পারছে না। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ওই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। শিক্ষার্থীরা সময়মত স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিতে সমস্যা হচ্ছে। প্রসূতি মায়েরাও সেবা নিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছে। এখানে একটি ব্রীজ নির্মাণ করা হলে হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
কালুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম বলেন, কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের ১০টি মৌজার হাজার হাজার মানুষ বেড়ীবাঁধের ওপারের চরাঞ্চলে বসবাস করে। তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা অতান্ত অনুন্নত। বিশেষ করে বর্ষাকালে তাদেরকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। মাত্র ৭কিলোমিটার দূরত্বের উপজেলা সদরে আসতে তাদের কয়েক ঘন্টাও লেগে যায়। এই দুর্ভোগ লাঘবে ২টি ব্রিজের প্রয়োজন। প্রথমটি হিরু মোল্লার ঘাটে, যা ১শ মিটারের বেশী এবং অপরটি হলো মাধবপুর বাজার হয়ে একটি গ্যাপ আছে সেটা ৫০ মিটারের একটু বেশী। সেটার টেন্ডার ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। কিছুদিনের মধ্যেই কাজ শুরু হবে। হিরু মোল্লার ঘাটে ১৩০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ব্রিজের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সয়েল টেস্ট ও ডিজাইন করা হয়েছে। এখন এটা অনুমোদন হলেই কাজ শুরু হবে। ব্রীজটা হলে চরাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
কালুখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ তোফায়েল আহমেদ বলেন, হিরু মোল্লার ঘাটটি চরাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছর টিআরের মাধ্যমে সাঁকোটি সংস্কার করা হয়। এবারের বর্ষায় সাঁকোটি ভেঙ্গে গেছে। এটা সংস্কারের জন্য অতি দ্রুত ব্যবস্থা নিবো। চরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষের যোগাযোগ, আইন-শৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক সুবিধার জন্য সেখানে একটি ব্রীজ হওয়া খুবই জরুরী। এই ব্রিজ নির্মাণের জন্য প্রয়াজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!