॥শিহাবুর রহমান॥ রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের বারবাকপুরে শ^াশুড়ী হাজেরা বেগম (৪৮)কে গলাকেটে হত্যার ঘটনায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে পুত্রবধু স্বপ্না বেগম(২৫)।
স্বীকারোক্তিতে স্বপ্না বেগম জানায়, ঘটনার ৬মাস আগে ছেলের জন্ম নিবন্ধন করার জন্য তিনি আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদে আসেন। এ সময় আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান না থাকায় তিনি ফিরে যান। পথিমধ্যে সোহেল নামে এক যুবক তাকে ডাক দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। এ সময় তিনি বিস্তারিত বললে সোহেল জানায় আপনার স্বামী বিদেশ যাওয়ার সময় আমি তাকে পাসপোর্ট করে দিয়ে ছিলাম। আজকের মধ্যেই আপনার ছেলের জন্ম নিবন্ধন করে আপনার বাড়ীতে নিয়ে আসবো। আপনার মোবাইল নম্বর দিয়ে যান। তার কথা মতো ওই দিন রাতেই সোহেল ছেলের জন্ম নিবন্ধনের কাগজ নিয়ে স্বপ্না বেগমের বাড়ীতে যায়। এরপর থেকেই সোহেল স্বপ্না বেগমের মোবাইলে ইমুতে ভিডিও এবং অডিও কলে কথা বলতো। এছাড়াও সোহেল ইমুতে তার ছবি তাকে পাঠাতো এবং স্বপ্নার ছবি চাইতো। ঘটনার আগের দিন রাতে সোহেল স্বপ্না বেগমের বাড়ীতে গিয়ে ঘরে ঢুকতে যায়। এ সময় তার শ^াশুড়ী টের পেলে সে ফিরে যায়। পরদিন গত ১৬ই আগস্ট রাতে স্বপ্না বেগম চেয়ার দিয়ে দরজা চেপে রেখে শিশু সন্তান ও শ^াশুড়ীসহ ঘরে শুয়ে পড়ে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সোহেল দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলে ঘরে প্রবেশ করে তাকে জাপটে ধরে ঘরের বিদ্যুতের আলো নিভিয়ে দেয়। এরপর সে তার সাথে দৈহিক সম্পর্ক করতে চায়। এ সময় তাদের শব্দে তার শ^াশুড়ী হাজেরা বেগমের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম ভেঙ্গে সে সোহেলকে দেখতে পেয়ে বলে কি রে সোহেল তুই এতো রাতে ঘরের মধ্যে কি করিস। এরপর সোহেল বাইরে থাকা কবিরকে ডাক দিয়ে বলে উনি দেখে ফেলেছে সকালে কি না জানি ঘটনা ঘটায়। আয় তাই তাকে শেষ করি দেয়। এই বলে সোহেল কবিরের কাছ থেকে ছুরি নিয়ে মশারীসহ তাকে কোপ মারে। কোপটি হাজেরা বেগমের হাতে গিয়ে লাগে। এরপর সোহেল স্বপ্নাকে তার শ^াশুরী হাজেরা বেগমের হাত ধরলে বলে। প্রথমে না ধরতে চাইলেও ভয়ে সে তার হাত ধরে এবং কবির পা ধরে। এরপর মুখ চেপে ধরে সোহেল হাজেরা বেগমকে গলা কেটে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত করার পর সোহেল স্বপ্না বেগমকে বলে কেউ যাতে তোমার ওপর সন্দেহ করতে না পারে সে ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। এই বলে সোহেল তার হাতে ছুরি দিয়ে জখম করে চলে যায়।
এ হত্যা মামলায় গত ৭ই সেপ্টেম্বর দুপুরে ডিবি’র সদস্যরা সোহেলকে গ্রেফতার করে। সে আলীপুর ইউনিয়নের কোমরপাড়া গ্রামের হোসেন মিয়ার ছেলে। এরআগে ইকরাম ওরফে একেন(৩২) নামে আরো একজন গ্রেফতার করা হয়। তবে কবির নামে ওই ব্যক্তি অন্য একটি মামলায় গ্রেফতার রয়েছে। তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে বলে জানা যায়। সর্বশেষ গত ১৫ই সেপ্টেম্বর নিহতের পুত্রবধু স্বপ্না বেগমকে ডিবি’র একটি দল তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ই আগস্ট দিনগত রাত ১২টার দিকে হাজেরা বেগম (৫০)কে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পরদিন গত ১৭ই আগস্ট নিহতের স্বামী তমিজ উদ্দিন শেখ বাদী হয়ে রাজবাড়ী থানায় অজ্ঞাত আসামী করে রাজবাড়ী থানার মামলা নং-২৩, ধারাঃ ৩২৪/৩০২/৩৪ পেনাল কোড মামলাটি দায়ের করেন।
(রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের বারবাকপুরে ছবিতে বাম থেকে নিহত শ^াশুড়ী হাজেরা বেগম, গ্রেফতারকৃত পুত্রবধু স্বপ্না বেগম, তার পরকীয়া প্রেমিক সোহেল ও কবির -মাতৃকণ্ঠ)।