॥রফিকুল ইসলাম॥ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ উৎসবের মধ্যদিয়ে রাজবাড়ীতে শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি জন্মাষ্টমী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন ও জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের যৌথ আয়োজনে গতকাল ২রা সেপ্টেম্বর বিকালে শহরের হরিতলা মন্দির প্রাঙ্গনে আলোচনা সভা ও বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী এবং রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী এবং পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম-সেবা।
জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অশোক কুমার বাগচীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি এডঃ গণেশ নারায়ণ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক জয়দেব কর্মকার, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব গণেশ মিত্র, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ্ত চক্রবর্তী শান্ত ও হরিতলা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক ধুর্জুটি চক্রবর্তী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সভা সঞ্চালনা করেন জেলা জাসদের(আম্বিয়া) আহ্বায়ক স্বপন কুমার দাস।
এ সময় সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) সানজিদা শাহনাজ এবং মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের সহকারী পরিচালক ফারজানা তানিয়াসহ আমন্ত্রিত অতিথিগণ এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, আমাদের সরকার ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে। জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের সকল ধর্মাবলম্বীদের স্ব-স্ব ধর্ম পালনে সুযোগ করে দিয়েছেন, যা বিগত সরকারের আমলে ছিল না। আমরা চাই দেশের সকল মানুষ সুখে থাকুক। কে কোন ধর্মের সেটা বড় করা নয়, সবচেয়ে বড় কথা হলো আমরা কে কি করছি বা মানুষের জন্য কি করতে পারলাম।
তিনি আরো বলেন, ধর্মকে ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি বা গ্রুপ যাতে সামাজিক শৃঙ্খলায় বিঘœ ঘটাতে না পারে সে জন্য সকল ধর্মের লোকদের আরো সতর্ক থাকতে হবে। ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ নীতিতে আমাদের ধর্মীয় সম্প্রীতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণে সমাজে বিদ্যমান সম্প্রীতি ও বন্ধুত্ব আরো জোরদারে সকল ধর্ম বিশ্বাসের লোকদের প্রতি আহবান জানান। বক্তব্যের শেষে তিনি ভুপেন হাজারিকার বিখ্যাত গান ‘মানুষ মানুষের জন্য’ গেয়ে শোনান।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী শ্রীকৃষ্ণের জন্মকাহিনী বর্ণনা করে বলেন, অন্ধকারাচ্ছন্ন একটা সময়ে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল। তিনি দুষ্টের দমন করেছিলেন। তিনি সনাতন ধর্মের একজন প্রাণপুরুষ ছিলেন। শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই নয়, সকল ধর্মের মানুষের কাছেই তিনি সম্মানীত।
পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বলেন, ছোটবেলা থেকেই হিন্দুদের সাথে মিলেমিশে বড় হয়েছি। কখনও তাদেরকে আলাদা চোখে দেখি নাই। শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ চিরকাল মানুষকে অনুপ্রেরণা যোগাবে। তিনি জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে শুভেচ্ছা জানান।
আলোচনা সভার শেষে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিগণসহ উপস্থিত সকলের অংশগ্রহণে হরিতলা মন্দির প্রাঙ্গন থেকে একটি বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়ে প্রধান সড়ক ও বাজার প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে সমাপ্ত হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বী বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ ও শিশু উৎসবমুখর পরিবেশে সুসজ্জিতভাবে ঢাক-ঢোলসহ আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে।