॥স্টাফ রিপোর্টার॥ অবশেষে রাজবাড়ী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বহুল সমালোচিত সহকারী শিক্ষক(ইংরেজী) মোঃ শামসুল আলমকে শাস্তিমূলক বদলী করা হয়েছে।
গত ১৬ই জুলাই মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর মোঃ মাহবুবুর রহমানের স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে তাকে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামারখালী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে একই পদে বদলী করা হয়। গতকাল ১৭ই জুলাইয়ের মধ্যে তিনি রাজবাড়ী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিমুক্ত হবেন বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে গতকাল ১৭ই জুলাই পর্যন্ত তিনি স্কুল থেকে রিলিজ নেননি বলে জানাগেছে।
একটি সুত্র জানায়, সহকারী শিক্ষক মোঃ শামসুল আলম তার বদলীর আদেশ বাতিলের জন্য প্রভাবশালী মহলে জোড় তদবীর চালিয়ে যাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি সহকারী শিক্ষক মোঃ শামসুল আলমের অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক কর্তৃক প্রেরিত গোপনীয় প্রতিবেদন পাঠানো হয়।
একটি সুত্র জানায়, উক্ত প্রতিবেদনে গত ২৫/০৫/২০১৮ইং তারিখে রাজবাড়ী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষায় দায়িত্ব পালনকালে পরিবার কল্যাণ সহকারী পদের তানিয়া নামের একজন চাকুরী প্রার্থীকে নকল সরবরাহ করতে গিয়ে তিনি হাতেনাতে ধরা পড়েন। ফলশ্রুতিতে তার বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। উক্ত মোবাইল কোর্ট তাকে ২শত টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৭দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের আদেশ প্রদান করে।
এছাড়াও তিনি বিদ্যালয়ের নিয়ম-কানুনের প্রতি মোটেই শ্রদ্ধাশীল নন। প্রায়শই বিদ্যালয়ের প্রচলিত বিধি-বিধান ও নির্দেশনা অনুসরণ করেন না। দেরীতে স্কুলে আসেন এবং বিনা অনুমতিতে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। তার কাছে কোচিং করার জন্য ছাত্রীদের প্ররোচিত করেন এবং নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন। যে সমস্ত শিক্ষার্থী তার কাছে কোচিং করে না, তাদের প্রতি তিনি বিরূপ মনোভাব পোষণ করেন এবং পরীক্ষার উত্তরপত্রে কম নম্বর দেন। আর যারা তার কাছে কোচিং করে তাদেরকে অনৈতিকভাবে পরীক্ষার প্রশ্ন বলে দেয়াসহ বেশী বেশী নম্বর দেন। তার কাছে প্রাইভেট পড়া ছাত্রীদের বিদ্যালয় চলাকালীন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত বিদ্যালয়ের বাইরে যাওয়ার জন্য ছুটি প্রদান করেন। বিদ্যালয়ের পরীক্ষা ছাড়াও বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় তিনি নকল সরবরাহ করেন এবং পরীক্ষার হলে চাকুরীপ্রার্থীদের উত্তর বলে দেন বলে মাঝে মাঝেই অভিযোগ পাওয়া যায়।
তিনি বিদ্যালয়ের নিকটবর্তী নান্নু টাওয়ারে ‘এস এস হারবাল’ নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে সেখানে নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি করেন এবং ছাত্রীদের অভিভাবকদের সেখান থেকে ওষুধ কেনার ব্যাপারে প্ররোচিত করেন। তিনি মাঝে মাঝেই বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে ক্লাস বাদ দিয়ে সেখানে সময় দেন। গত এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালে তিনি সরকারের নির্দেশ অমান্য করে কোচিং চালিয়ে যান, যা প্রশাসনের গোচরীভূত হলে তাকে কোচিং করানো থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করা হয়। বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক নিয়োগ পরীক্ষায় তার অনৈতিক কর্মকান্ডসহ বিভিন্ন অপকর্মের বিষয়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয় এবং তার অশ্লীল ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। একটি সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তার সার্বিক কর্মকান্ড প্রশ্নবিদ্ধ এবং বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। তার কর্মকান্ড ও আচরণে ছাত্রীরাও ক্ষুদ্ধ। এ প্রেক্ষিতে তাকে অন্যত্র বদলীর জন্য সুপারিশ করা হয়।