॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ আগামী ১৪ই জুলাই অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন(১ম রাউন্ড) উপলক্ষে রাজবাড়ী সিভিল সার্জন অফিসের আয়োজনে গতকাল ৪ঠা জুলাই বেলা ১১টায় জেলা পর্যায়ের অবহিতকরণ ও পরিকল্পনা সভা সিভিল সার্জন অফিসের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্সের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সিদ্দিকা মিলি বিপিএম-সেবা এবং জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক গোলাম মোঃ আজম, সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ স্বপন কুমার গুহ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ ফজলুর রহমান। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সভাপতি খান মোঃ জহুরুল হক প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শেখ মোঃ আব্দুল হান্নান এবং ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন সিভিল সার্জন অফিসের মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ কাজী শফিউল আজম শুভ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিভিল সার্জন অফিসের জুনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মোকরেমা মাঞ্জুরা।
এ সময় সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডাঃ একেএম গোলাম ফারুক, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক গৌতম চন্দ্র দে, রাজবাড়ী সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী নূর উদ্দিন আহম্মেদ, জেলা তথ্য অফিসার মোঃ মোক্তার আলী মল্লিক, জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আমিরুল ইসলাম, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ আলীমুর রেজা, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, সারা দেশের ন্যায় রাজবাড়ী জেলায় এবার ১ লাখ ২৪ হাজার ১২৮ জন শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে খুঁজে বের করে এই অধিক সংখ্যক শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো স্বাস্থ্য বিভাগের একার পক্ষে সম্ভব না। সকল সরকারী বিভাগের কর্মকর্তাসহ জেলাবাসী যারা এই ভিটামিন এ প্লাস খাওয়ানো সম্পর্কে অবহিত আছেন তাদেরকে যার যার অবস্থান থেকে পরিবার,আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, সহকর্মী সকলকে এ বিষয়ে অবহিত করতে হবে। তবেই সরকারের এই ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর উদ্যোগ সফল করা সম্ভব হবে। আমি আশা করবো আজকের এই অবহিতকরণ সভায় যারা উপস্থিত রয়েছেন তারাসহ সকল সরকারী কর্মকর্তাগণ ১৪ই জুলাই অনুষ্ঠিতব্য ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইনের বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন। আর আমি জেলার সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এই ক্যাম্পেইনের বিষয়টি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দেয়ার জন্য বলবো। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে রাতকানাসহ বিভিন্ন রোগ থেকে শিশুদের রক্ষায় সরকারের এই মহতী উদ্যোগ সফল করে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে আধুনিক বিশ্বের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। তবেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০৪১ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সভায় জানানো হয়, ভিটামিন এ ক্যাপসুল শিশুর জন্য নিরাপদ। জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইনে প্রদানকৃত ভিটামিন এ ক্যাপসুল কোন প্রকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। কিছু কিছু লক্ষণ যেমন ঃ বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, মাথা ব্যাথা ইত্যাদি প্রকাশ পেতে পারে যা ১২-১৪ ঘন্টার মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। এসব লক্ষণ প্রকাশ পেলে অভিভাবককে আশ্বস্ত করতে হবে যে, এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। প্রয়োজনে স্বাস্থ্যকর্মী বা নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করতে হবে।
উল্লেখ্য, আগামী ১৪ই জুলাই অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনে(১ম রাউন্ড) রাজবাড়ী জেলার ৫টি উপজেলা, ৩টি পৌরসভা ও ৪২টি ইউনিয়নের স্থায়ী, অতিরিক্ত ও ভ্রাম্যমানসহ মোট ১হাজার ১৩৬টি কেন্দ্রের মাধ্যমে ৬-১১ মাস বয়সী ১৪ হাজার ৩৭৫ জন শিশুকে ১টি করে নীল রঙের এবং ১২-৫৯ মাস বয়সী ১ লক্ষ ৯ হাজার ৮০৯ জন শিশুকে ১টি করে লাল রঙের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। কেন্দ্রগুলো সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
ক্যাম্পেইন দিবসে জন্মের পরপরই নবজাতককে শালদুধসহ মায়ের দুধ খাওয়ানো শুরু করে ৬ মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানো, পানি, মধু, চিনি বা মিসরির পানি ইত্যাদি না খাওয়ানো, ৬ মাস পূর্ণ হলে মায়ের দুধের পাশাপাশি পরিমাণমত ঘরে তৈরী সুষম খাবার খাওয়ানো, মা ও শিশুর পুষ্টির জন্য গর্ভবর্তী ও প্রসূতি মায়েদের স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী পরিমাণে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ প্রাণিজ খাবার(মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, কলিজা ইত্যাদি) খেতে দেয়া, পরিবারের রান্নায় ভিটামিন এ সমৃদ্ধ ভোজ্য তেল ব্যবহার করা প্রভৃতি পুষ্টি বার্তাসমূহ প্রচার করা হবে।