॥গোয়ালন্দ প্রতিনিধি॥ সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি এন্ড অ্যাকসেস এনহান্সমেন্ট প্রজেক্ট(সেকায়েপ) থেকে নিয়োগকৃত রাজবাড়ী জেলার ৩৫শিক্ষক পরিবার ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত। চাকুরী আছে নাকি নেই এমন অনিশ্চতায় দিন পার করছেন তারা।
পিছিয়ে পড়া মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের লক্ষে ২০১৫ সালে ১লা জানুয়ারী থেকে পর্যাক্রমে এ সকল শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৭ সালের ৩১শে ডিসেম্বর শেষ হওয়ার পর এখন পর্যন্ত চালু না হওয়ায় চরম অনিশ্চয়তায় দিন পার করছেন তারা।
সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি সেকায়েপভূক্ত শিক্ষকদের চাকুরী স্থায়ীকরণের দাবীতে গত ১০ই জুন প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছে। রাজবাড়ী জেলা এসিটি এসোসিয়েশণ এর পক্ষ থেকে স্মারকলিপিটি শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী (মাদরাসা ও কারিগরি) ও রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীর হাতে তুলে দেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রী তাদেরকে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ^াস প্রদান করেন।
জানাযায়, সারাদেশে ঝড়ে পড়া দারিদ্র শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে এবং শিক্ষার গুনগতমান রক্ষায় সেকায়েপ এর মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে প্রায় ছয় হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। এরমধ্যে রাজবাড়ী জেলার শুধুমাত্র গোয়ালন্দ উপজেলায় প্রকল্পটি চালু করা হয়। এ সময় গোয়ালন্দ উপজেলায় মোট ৩৫জন শিক্ষক সম্মানজনক বেতনে নিয়োগ পান। সেকায়েপ থেকে নিয়োগের কারণে উপজেলার বিদ্যালয়গুলো থেকে শিক্ষার্থীরা ইংরেজী, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে ভাল করতে শুরু করে।
সেকায়েপভুক্ত শিক্ষকদের সংগঠন এসিটি এসোসিয়েশন রাজবাড়ী জেলার সভাপতি ও দৌলতদিয়া মডেল হাই স্কুলের প্রকল্পভুক্ত শিক্ষক আব্দুল কাদের জানান, ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এরপরও তারা নিয়মিত শ্রেণীপাঠদান অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু চাকুরী আছে, নাকি নেই তাও জানেন না তারা। অতিরিক্ত শ্রেণীশিক্ষক কর্মসূচী (এসিটি) অপারেশন ম্যানুয়াল বইয়ের ৩৬(ক) উল্লেখ আছে জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী এসিটিদের মূল বেতন ও অন্যান্য ভাতা প্রদান করা হবে। অথচ সেকায়েপ এর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস পরও নিশ্চিত হতে পারছিনা। আদৌ এই প্রকল্পে নিয়োগ থাকবে কি, থাকবে না। যে কারণে শিক্ষকবৃন্দ মন দিয়ে পাঠদান করতে পারছেননা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাঠদান কর্মসূচি, বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
মোঃ মফিজুর রহমান, মোঃ রেজাউল করিমসহ কয়েকজন সেকায়েপভুক্ত শিক্ষক অনেকটা আবেগ জড়িত কন্ঠে বলেন, আর কয়েকদিন পরই পবিত্র ঈদুল ফিতর। অথচ ঈদের আনন্দ থেকে আমাদের সবার পরিবার বঞ্চিত হচ্ছে। আমাদের নেই কোন বেতনাদি, উৎসব ভাতা। কি করে আমাদের পরিবারের মুখে হাসি ফুটাবো? প্রধানমন্ত্রী কি বিষয়টি দেখবেন না?
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, বিভিন্ন কারণে বছরের অনেকটা সময় ক্লাস বন্ধ থাকে। সেকায়েপ শিক্ষকদের কারনে অতিরিক্ত ক্লাসের মাধ্যমে পুষিয়ে নিতে পারছি। তারা যদি এখন আমাদের বিদ্যালয়ে নিয়মিত হলে যে শিক্ষক সংকট আছে তা কিছুটা পূরন করা সম্ভব। তারা বিদ্যালয় থেকে চলে গেলে শিক্ষক সংকট আরো তীব্র হবে।
শহীদ স্মৃতি সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রঞ্জন বিশ^াস বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে নিয়মিত ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয়না। এমন অবস্থায় যদি সেকায়েপভুক্ত শিক্ষকদের চাকুরী স্থায়ী বা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো না হয় তাহলে প্রতিদিনের সব শ্রেণী পাঠদান কোনমতেই নেওয়া সম্ভব হবে না।
দৌলতদিয়া মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ সহিদুল ইসলাম জানান, শিক্ষার মানন্নোয়নে দারিদ্র এলাকার বিদ্যালয়ে সেকায়েপ থেকে শিক্ষক দেওয়া হয়েছে। এই বিদ্যালয়ে যে পরিমান ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে একজন শিক্ষক দিয়ে তা পড়ানো সম্ভবনা। সেকায়েপভুক্ত শিক্ষক পেয়ে আমরা খুবই উপকৃত হয়েছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মাসুদুর রহমান বলেন, সেকায়েপের শিক্ষকরা বিজ্ঞান, ইংরেজী ও অংক বিষয়ে পাঠদান নিয়ে থাকে। এছাড়া গোয়ালন্দের দুটি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে এরকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষক নেই বললে চলে। এদের দ্বারা সেটা পূরন সম্ভব হচ্ছে। এরা বাদ পড়লে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি তারাও অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।
স্মারকলিপি প্রদান শেষে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, বিষয়টি নিয়ে সরকারও ভাবছে। এ সময় তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের সাথে মুঠোফোনে কথা বলে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে শিক্ষকদের আশ^স্ত করেন।