॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ২০শে মে সকাল ১০টায় জেলা উন্নয়ন সন্বয় কমিটির সভা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাকিব খান, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্স, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেক, বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম নুরুল ইসলাম, কালুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) রেবেকা খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) মোঃ আব্দুর রহমান, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হাফিজুল ইসলাম, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খান এ শামীম, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কে.বি.এম সাদ্দাম হোসেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কৃষ্ণ সরকার, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাঈদুজ্জামান খান, গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবু নাসার উদ্দিন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রুবাইয়াত মোঃ ফেরদৌস, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোলাম মোঃ আজম, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে ইয়াসমিন করিমী, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নূরে সফুরা ফেরদৌস, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার কামরুল ইসলাম গোলদার, ওজপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আমিনুল ইসলাম, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ইব্রাহিম মোঃ তৈমুর ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মাজিনুর রহমান প্রমুখ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ স্বপন কুমার কুন্ডু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপারের বাসভবন নির্মাণের বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে প্রক্রিয়াধীন আছে। এ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের অনুমতি পাওয়া গেলে কাজ শুরু করা হবে। রাজবাড়ী শহরের গোদার বাজার পদ্মা নদীর ঘাটের বিনোদন কেন্দ্রটি বর্তমান অবস্থা থেকে আরো উন্নয়ন ও শহরের শহীদ খুশি রেলওয়ে ময়দানের পাশে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য স্থাপিত প্রত্যয় স্কুলের উন্নয়নের কাজে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য আমি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অনেক দিন অনুরোধ করেছিলাম। তিনিও আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন তিনি এই ২টি বিষয়সহ সার্কিট হাউজের সামনের শিশু পার্কের উন্নয়নের কাজ করবেন। কিন্তু অনেক দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কোন উন্নয়ন কজের জন্য বরাদ্দ প্রদান করা হয়নি। আমি আশা করব, জেলা পরিষদ এই তিনটি জায়গার উন্নয়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর ‘জমি আছে ঘর নাই’ প্রকল্প থেকে প্রায় ৫শত ঘরের জন্য জেলা প্রশাসকের কনসার্ন ছাড়াই সরাসরি প্রকল্প কর্মকর্তার বরাবর প্রকল্পের বরাদ্দের জন্য প্রজেক্ট প্রপোজাল সাবমিট করেছে। কিভাবে জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনা না করে এই ধরনের প্রকল্প সরাসরি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলো বিষয়টি আমার কছে বোধগম্য নয়। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পিডি কিভাবে আমার কনসার্ন ছাড়া প্রকল্পটি অনুমোদন করেন সেই বিষয়টি নিয়ে আমি অবশ্যই পিডির সাথে কথা বলব। কারণ যে কোন প্রকল্প পাঠানোর আগে সেই বিষয়ে অবশ্যই জেলার প্রধান সমন্বয়ক জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনা করতে হবে। আর যদি প্রকল্পটি অনুমোদনও হয় তবে এটি প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব তহবিলের টাকা, যাদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে তারাই যেন পায় সেই বিষয়টি দেখার জন্য তিনি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করেন।
তিনি আরো বলেন, কালুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বক্তব্য অনুযায়ী, কালুখালী উপজেলার যে জমি পাংশা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রি হয় সেখানে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী জমির মূল্যের শতকরা ৯শতাংশ ফি নেয়ার বিধান থাকলেও নেয়া হচ্ছে শতকর ১২ শতাংশ। কোন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পাংশা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এই অতিরিক্ত অর্থ নিচ্ছে তা খতিয়ে দেখার জন্য এবং ভবিষ্যতে যাতে এই অতিরিক্ত অর্থ আর নেয়া না হয় সে জন্য তিনি জেলা রেজিস্ট্রারকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধের কাজ শুরুর ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর তথ্য মতে এই কাজটি করবে ডিবিসিএল নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। আমার জানা মতে, ডিবিসিএল নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আছে যারা সরকারের অন্য অধিদপ্তরের ব্ল্যাক লিস্টেড ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। যারা ঠিকমত নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করে না। আমি আশা করব, পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধের জন্য যে ডিবিসিএল নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়েছে তাদের ব্যাপারে সঠিক তথ্য অনুসন্ধান করে তারা সরকারের অন্য বিভাগের ব্ল্যাক লিস্টেড কিনা সে বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে তারপর তাদেরকে কাজের অনুমতি দিবেন। এ ক্ষেত্রে কোন রকম গাফিলতি হলে ভবিষ্যতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে বলে তিনি জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সতর্ক করেন।
এছাড়াও সভায় এলজিইডির বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজের অগ্রগতি, দৌলতদিয়া ঘাট সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়, দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়কের রাজবাড়ী অংশের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ, জাটকা নিধনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঘর নির্মাণ, এই মওসুমের ধান ক্রয়, বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন বিষয়, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা, ছেলেদের জন্য একটি শিশু সদন নির্মাণ, সদর হাসপাতাল মর্গের(লাশ কাটা ঘর) রক্ষণাবেক্ষণ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, ডাক্তারের স্বল্পতা দূর করা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক বিশুদ্ধ পানির জন্য পুকুর খনন ও টিউবওয়েল স্থাপন, পাসপোর্ট অফিসের ভিতরে দালালদের কার্যক্রম বন্ধ করা, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতি বন্ধ করা, মসজিদে ইভটিজিং, বাল্য বিবাহ ও মাদক সম্পর্কে ইমামদের বক্তব্য প্রদান, একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্পে ঋণের আদায় অর্ধেক হওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে পত্র প্রেরণ, সরকারী যাকাত ফান্ডের অর্থ সংগ্রহ, জেলা পুলিশের ফায়ারিং স্পটের জায়গা নির্ধারণ, দৌলতদিয়া ঘাটে যানবাহন থেকে চাঁদা আদায় বন্ধ এবং পাংশার পাট্টা ও কসবামাজাইলে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়।