॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ ঝড়, অতিবৃষ্টি ও বজ্রপাতের সময় রাজবাড়ী জেলাবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিরাজমান দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ৩রা মে বেলা ১১টায় কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী সভায় এ আহ্বান জানানো হয়।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে সভায় সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্স, রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেক, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খান এ শামীম, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কে.বি.এম সাদ্দাম হোসেন, ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আমিনুর রহমান ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার কামরুল ইসলাম গোলদার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম আজাদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রেবেকা খান, জেলার সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নূরে সফুরা ফেরদৌস ও বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী সপ্তাহসহ মাস জুড়ে কালবৈশাখী ঝড়, অতিবৃষ্টি ও বজ্রপাতের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক জেলা উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করে জনসচেতনা বৃদ্ধি, আশ্রয় কেন্দ্রগুলো ব্যবহারের উপযোগী রাখা এবং জনগণের জানমালের ক্ষতি কমিয়ে আনাসহ দুর্যোগ লাঘবে পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ, সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয় ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। যার ধারাবাহিকতায় আজকের এই বিশেষ প্রস্তুতি সভার মাধ্যমে জেলার উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটিগুলোকে বিশেষ সভা করে ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করতে বলা হচ্ছে।
তিনি বলেন, জেলার সকল উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে সচেতন করতে করতে হবে। বর্তমানে রাজবাড়ী জেলাসহ সারা দেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে বজ্রপাত। কালবৈশাখীর সময় শুরুর পর থেকে অল্প কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন স্থানসহ রাজবাড়ী জেলায় বেশ কিছু মানুষ বজ্রপাতে মারা গেছেন। যার বেশীরভাগই ঘটেছে বজ্রপাতের সময় মাঠে বা ফাঁকা স্থানে কাজ করা এবং অসচেতনভাবে ফাঁকা জায়গায় থাকার কারণে। আবার ফাঁকা মাঠে মধ্যে টিনের ঘর নির্মাণের কারণে বজ্রপাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলায় এই ঘটনা বেশী ঘটছে। সেই লক্ষ্যে জেলার সকল উপজেলায় ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করতে হবে। যাতে আকাশে কালো মেঘ দেখলে কেউ ঘর থেকে বের না হয়। যদি কেউ পথের মধ্যে বা মাঠে কাজ করার সময় হঠাৎ বজ্রপাতের আলামত পায় এবং কাছে যদি কোন আশ্রয় না থাকে তবে তার উচিত হামগুড়ি দিয়ে পা মাটির সাথে স্পর্শ না করে জড়সড় হয়ে শুয়ে পড়া। এছাড়াও বজ্রপাতের সময় বড় গাছের নীচে কিংবা ইলেকট্রিক তার বা খুঁটির নীচে আশ্রয় না নেয়া, গাড়ীর ভিতরে থাকলে গাড়ীকে নিরাপদ জায়গায় দাঁড় করিয়ে গাড়ীর মধ্যে বসে থাকা, মোবাইল টাওয়ারের কাছে না থাকা, বাড়ীতে জানালা বন্ধ করে রাখা ও জানালার কাছে না যাওয়া, মাঠের মধ্যে ফাঁকা জায়গায় বা ঘরের মধ্যে থাকলে মাটির স্পর্শে না থেকে কাঠের উপরে থাকা, যদি সম্ভব হয় তবে ঘরের থেকে বেশী লম্বা একটি রড ঘর থেকে একটু দূরে মাটিতে পুঁতে রাখা, দালান বাড়ীর ছাদের উপরে একটি রড মাটির নীচ পর্যন্ত গেঁথে দেয়াসহ বজ্রপাতের সময় সকল ধরনের সাবধান অবলম্বন করার জন্য জেলাবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছি।
যেহেতু বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ তাই যিনি অবগত তিনি অবশ্যই তার আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সর্বোপরি পরিচিত সকলের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই দুর্যোগ মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে সকলের প্রতি আহবান জানানো হয়।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী, বজ্রপাতের সময় সকল ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী বিশেষ করে টেলিভিশন, ফ্রিজসহ ইত্যাদির বৈদ্যুতিক কানেকশন খুলে রাখার আহ্বান জানান।
এছাড়াও তিনি দৌলতদিয়া ঘাট সংক্রান্ত বিষয়, ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাতে না যায় সে বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা ও বিদ্যুতের গ্রীড স্টেশনসহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন এবং জেলার সকল উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ঝড়, অতিবৃষ্টি ও বজ্রপাত সম্পর্কিত দুর্যোগ মোকাবেলায় জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচারণার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করেন।