॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন কর্তৃক বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশি রেলওয়ে ময়দানে আয়োজিত ৩দিনব্যাপী ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা গতকাল ৩রা মার্চ বিকালে আলোচনা সভা, সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী(কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ) আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী,এমপি।
সম্মানিত বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার এম বজলুল করিম চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্স, রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এডঃ এম.এ খালেক ও রাজবাড়ী সরকারী কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক অদ্বৈত কুমার দাস। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ও অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ ছাদেকুর রহমান।
এ সময় বিভাগীয় কমিশনারের সহধর্মিনী মিসেস নাজমুন নাহার লিপি, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের সহধর্মিনী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) মোঃ আব্দুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশসাক(সার্বিক) রেবেকা খান, গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই’র উপ-পরিচালক মোঃ জিল্লুর রহমান, জেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাধারণ দর্শকগণ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী এমপি তার বক্তব্যে বলেন, মার্চ মাস আমাদের স্বাধীনতার মাস। এই মাসেই বঙ্গবন্ধু জন্মগ্রহণ করেছিলেন ও আমাদের মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আমরা স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে। তার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে দেশের প্রতিটি সেক্টরকে ডিজিটাল করার কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজকে রাজবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশি রেলওয়ে ময়দানে ডিজিটাল মেলা হচ্ছে। বর্তমান সরকার ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দিচ্ছে। শুধু সেটাই নয়, বর্তমানে সকল সরকারী অফিসসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শেখ রাসেল ডিজিটাল স্থাপনের মাধ্যমে এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থার সরঞ্জাম সরবরাহের মাধ্যমে দেশকে ডিজিটাল দেশে রূপান্তর করতে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বর্তমানে সরকার দেশের ৪৬হাজার মাদ্রাসায় ডিজিটাল প্রযুক্তি সরবরাহের মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষাকে ডিজিটাল করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আবার দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে টেকনিক্যাল শিক্ষায় শিক্ষিত করতেও বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যার ফলে টেকনিক্যাল শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে দেশ থেকে বেকার সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে রাজবাড়ী জেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাব ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা থাকলেও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই কম্পিউটার ল্যাব ব্যবহার বা ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা প্রদান করা হয় না। জেলা প্রশাসকসহ জেলা শিক্ষা বিভাগকে বিষয়টি মনিটরিং করার জন্য আহ্বান জানান।
ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার এম বজলুল করিম চৌধুরী তার বক্তব্যের শুরুতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ই আগস্টে নিহত তার পরিবারের সদস্যগণ, জাতীয় চার নেতা, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ সকল মুক্তিযোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, বর্তমান সরকারের ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইস্তেহারে ঘোষণা ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন করা। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশকে ডিজিটাল করার কার্যক্রম গ্রহণ করে। প্রথম দিকে এই উদ্যোগটি অনেকের কাছে অবাস্তব মনে হলেও বর্তমানে দেশের সকল সেক্টরে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার দৃশ্যমান হয়েছে। ২০২১ সালের ভিশন অনুযায়ী বাংলাদেশকে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন করা সরকারের উদ্দেশ্য ছিল যা বর্তমানে অনেকটাই সফল হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল দেশকে একটি শোষণমুক্ত উন্নত সোনার বাংলা গড়ে তোলার। তার সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী কাজ করে যাচ্ছেন। আজ প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের কারণে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে সকল সরকারী বিভাগে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার করে সকলকে সহজ, স্বচ্ছ ও দ্রুততার সাথে সকল সেবা প্রদান করা হচ্ছে। আমরা আজ তথ্য প্রযুক্তির গ্লোবাল যুগে বাস করছি। আমাদেরকে এসডিজি বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার পরও থেমে থাকলে চলবে না। এ ক্ষেত্রে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদেরকে আরও উন্নত থেকে উন্নততর করে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি জেলার সকল সরকারী বিভাগ, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সকল অফিসে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এ ছাড়াও রাজবাড়ী জেলার সন্তান হিসেবে তিনি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ খুশির স্মৃতিচারণ করেন।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, আজকে থেকে ৯বছর আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনী ইস্তেহারের মাধ্যমে দেশকে ডিজিটাল করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। যার কারণে দেশ আজ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডিজিটাল দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। আজকে রাজবাড়ীর ডিজিটাল মেলায় ৫০টিরও বেশী প্রতিষ্ঠান তাদের বিভিন্ন ডিজিটাল কার্যক্রম মেলায় তুলে ধরেছে, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বর্তমানে তৃণমূল পর্যায়ে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও সরকারী অফিসগুলোতে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার করে পেপারলেস অফিস করার বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা ভূমি অফিসসহ বিভিন্ন সরকারী অফিস বর্তমানে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার করে সহজে স্বল্প সময়ে বিভিন্ন সেবা প্রদান করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ ছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে রাজবাড়ীর বিভিন্ন সরকারী অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেন।
বক্তব্যের পর্বের শেষে ডিজিটাল মেলা উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতার বিজয়ীসহ অংশগ্রহণকারী স্টলগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। সবশেষে বর্নিল আতশবাজীর মাধ্যমে মেলা সমাপ্ত হয়।