Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

সংবিধান অনুযায়ী জননেত্রী শেখ হাসিনার অধিনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে —-রাজবাড়ীতে ডেপুটি স্পীকার এডঃ ফজলে রাব্বী মিয়া

॥শিহাবুর রহমান/আশিকুর রহমান॥ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার এডঃ ফজলে রাব্বী মিয়া বিএনপির উদ্দেশ্যে বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৯ সালের জানুয়ারী মাসের পূর্বেই অনুষ্ঠিত হবে। আমরা আপনাদেরকে আহবান জানাচ্ছি আপনারা সত্যি যদি দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল হন তাহলে গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখার স্বার্থে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন।
গতকাল ২৮শে নভেম্বর বিকেলে রাজবাড়ীতে জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে শহরের শহীদ স্মৃতি চত্ত্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ বিশ্ব প্রামান্য ঐহিত্য হিসেবে ইউনেস্কোর মেমোরি অবদ্যা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিষ্টারে যুক্ত হওয়ায় জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আপনাদেরকে যদি মানুষ ভোট দেয় তাহলে আমাদের কেনো বক্তব্য নেই। তবে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করবেন না। আমরা আপনাদের আর সেই সুযোগ দিবো না। আর যদি আপনারা নির্বাচনে অংশ না নেন তারপরেও দেশের সংবিধানের আইন অনুযায়ী জননেত্রী শেখ হাসিনার অধিনেই বাংলার মাটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আপনারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেন কি করলেন না তাতে আমাদের কিচ্ছু যায় আসে না।
ডেপুটি স্পীকার বলেন, পৃথিবীর ১৭৩টি দেশের সরকার প্রধানদের মধ্যে সবচেয়ে সৎ যে তিনজন সরকার নির্বাচিত করা হয়েছে তারমধ্যে তিন নম্বরে রয়েছেন জাতির জনকের কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালে ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন বন্ধ করতে বেগম খালেদা জিয়া পৃথিবীর বহু দেশে ধর্না দিয়েছেন, হাতে পায়ে ধরেছেন। নির্বাচন বন্ধ করতে খালেদা জিয়া দেশের মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছেন। কিন্তু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা মাথানত করেননি। তিনি দেশের গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠার স্বার্থে, সংবিধানকে সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে নিজের জীবনকে বাজী রেখে সেই নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ছিলো একটি রাজনৈতিক কাব্য। এই কাব্য পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি সৃষ্টি করতে পারেননি। কিন্তু আমাদের বাঙালী জাতির দূর্ভাগ্য এই ঐতিহাসিক ভাষণ আমরা দীর্ঘদিন শুনতে পাইনি। জিয়াউর রহমান এই ভাষণ বন্ধ করে দিয়েছিলো। ৭৫ এর কালোরাত্রির পরে যেমন তারা চিন্তা করেছিলো যে এই দেশে আর কোনোদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না, আওয়ামী লীগ কোনোদিন মাথাচারা দিয়ে উঠতে পারবে না। ঠিক তেমনি তারা ধরে নিয়েছিলো এই ভাষণ যদি বাজে তাহলে হয়তোবা এই বাঙালী জাতি আবার জাগ্রত হতে পারে। এই কারণেই বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বন্ধ রাখা হয়েছিলো।
তিনি আরো বলেন, পৃথিবীতে মহানবী(সাঃ) এর বিদায় হজ্বের ভাষণ সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ভাষণ। এছাড়া গত তিন হাজার বছরের মধ্যে আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ভাষণ বিশে^র শ্রেষ্ঠ হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে। এই ভাষণ শুধু বাঙালী জাতির অহংকারের বিষয়ই নয়। এই ভাষণ ছিলো বাঙালী জাতির অস্তিত্বের ভাষণ, এটি ছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভাষণ।
তিনি বলেন, বিএনপির মধ্যে এখনো কিছু বুদ্ধিজীবী রয়েছেন, ব্যারিস্টাররা রয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়াকে এখন এতিমদের টাকা চুরি করে খাওয়া মামলায় হাজিরা দিতে হয়। আপনাদের লজ্জা করে না একজন চুন্নির পক্ষ সমর্থন করে আপনারা কোন সাহসে রাত ১২টার পরে টেলিভিশনের টকশোতে অংশগ্রহণ করেন। এখনো সময় আছে এগুলো বাদ দিন। নাহলে মনে রাখবেন বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের মাধ্যমে নিরস্ত্র বাঙালী জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তরিত করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এ দেশকে স্বাধীন করতে পেরেছিলাম। আমরা অস্ত্র জমা দিয়েছি, কিন্তু ট্রেনিং জমা দেই নাই। প্রয়োজনে আবারও আমরা ওই চোর ও বাটপারদের বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করতে দ্বিধাবোধ করবো না।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামাত যেভাবে মা-বোনদের হত্যা করেছে, বোমা হামলা করে শিশু বাচ্চা হত্যা করেছে বাংলার মানুষ বিএনপির আর সেই সুযোগ দিবে না। আপনারা সাবধান হয়ে যান। নইতে আপনাদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বারের সভাপতিত্বে জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী, ব্রাক্ষ্মনবাড়ীয়ার সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি ও রাজবাড়ী পৌর মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।
এ সময় রাজবাড়ী-১আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলীর সহধর্মিনী রেবেকা সুলতানা সাজু, বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মোছাঃ নাজমা বেগম রতœা, কার্যনির্বাহী সদস্য শাহানা ইসলাম শান্তনা, বিলকিস পারভীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এডঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ রমজান আলী খান, রাজবাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এডঃ মোঃ উজির আলী শেখ, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি রকিবুল ইসলাম পিন্টু, জেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক আবুল শিকদার, সদর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শওকত হাসান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এডঃ গনেশ নারায়ণ চৌধুরী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোঃ আবুল হোসেন, জেলা যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী মীর মাহফুজা খাতুন মলি, জেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক মোঃ আবুল কালাম আজাদ, সদস্য-সচিব মোঃ আবু বক্কার খান, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম এরশাদসহ জেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীগণ জনসভায় উপস্থিত ছিলেন।
জনসভায় উপস্থাপনা করেন জেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক এডঃ সফিকুল হোসেন ও পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সফিকুল ইসলাম। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।