Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

দিশেহারা হয়ে আওয়ামী লীগ রাজবাড়ীতে এখন প্রতিহিংসামূলক আচরণ শুরু করেছে –জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি খৈয়ম

॥সুশীল দাস/রফিকুল ইসলাম॥ রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম বলেছেন, আমি ৫বছর এমপি থাকার সময় আওয়ামী লীগ ১৫৩ দিন হরতাল পালন করেছে। অবরোধ-পিকেটিং করেছে। আমরা কোন বাঁধা দেই নাই। ওই সময় পুলিশ ব্যবস্থা নিতে চাইলেও আমি নিষেধ করেছি। কাজী কেরামত আলীর সম্মান নষ্ট হতে দেইনি। অথচ এখন তারা আমাদের মান-ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করছে। সভা-সমাবেশ করতে বাঁধা দিচ্ছে। পুলিশ দিয়ে হয়রানী করছে। বেগম খালেদা জিয়া যেমনি শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, তেমনি আমিও কাজী কেরামত আলীকে ক্ষমা করে দিলাম।
গতকাল ১১ই নভেম্বর বিকেলে রাজবাড়ী জেলা বিএনপি কর্তৃক দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গনে ৭ই নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এ সকল কথা বলেন।
সাবেক এমপি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম বলেন, রাজবাড়ীতে লুটপাটের একটা রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। টাকা ছাড়া কাউকে চাকুরী দেয় না। যে কোন উন্নয়ন কাজের ক্ষেত্রে প্রতি লাখে ৭হাজার টাকা করে আগে তাকে দিয়ে নিতে হয়। রাস্তা-ঘাটগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদের উপর হামলা-নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। সবকিছু কুক্ষিগত রাখার জন্য রাজবাড়ী বাজার ব্যবসায়ী সমিতি, বাস মালিক সমিতি, শ্রমিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংগঠনের নির্বাচন হতে দেওয়া হচ্ছে না। মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তারা এর থেকে পরিত্রাণ চায়।
তিনি আরো বলেন, আমি একা নই। আমার পিছনে জনগণ আছে। ৫বছর এমপি ছিলাম, ১৫বছর রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র ছিলাম। সব সময় গণমানুষের জন্য কাজ করেছি। রাস্তায় বের হলেই দেখবেন আমার পিছনে কত জন মানুষ থাকে, আর কাজী কেরামত আলীর পিছনে কত জন মানুষ থাকে। দিশেহারা হয়ে এখন তারা প্রতিহিংসামূলক আচরণ শুরু করেছে। সেদিন বাড়ী ফেরার পথে স্বতস্ফূর্তভাবে দলীয় নেতাকর্মীরা আমাকে রিসিপশন করতে গেলে দৌলতদিয়া ঘাটে তাদের উপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে। পথে পথে জমায়েত হওয়া নেতাকর্মীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়। এমনকি দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সাথেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়। অন্তত ৮টি স্থানে আমাকে বাঁধা দেওয়া হয়। বাড়ীর সামনেও পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আজকেও আমাদের নেতাকর্মীদের এই সভায় আসতে বাঁধা দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে বহনকারী যানবাহন ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি স্থানে লাঠিচার্জও করা হয়েছে। দলীয় কার্যালয়ের সামনে এই সভা আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হলেও আমাদেরকে কষ্ট দেওয়ার জন্য চেয়ার ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাদের মধ্যে কোন রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার নাই। তারা আমাদের নেত্রীর নাম ধরে কুৎসিত সমালোচনা করে।
আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম বলেন, বিগত পৌরসভা নির্বাচনে রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়রের সিটটি তারা শুধু চুরি করে নয়, রীতিমত ডাকাতি করে ভোট কেটে মহম্মদ আলীকে মেয়র বানিয়েছে। বিগত সংসদ নির্বাচনেও রাজবাড়ীর কোন মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়নি। বিনা ভোটে কাজী কেরামত আলী এমপি হয়েছে। মহিলা এমপি লাভলী চৌধুরীরও কোন ভোট লাগেনি। ক্ষমতাসীনরাই সব কিছু লুটেপুটে খাচ্ছে। কিন্তু তারা অতীত থেকে শিক্ষা নেয়নি। একসময় যেমন রাজবাড়ীতে আওয়ামী লীগের কোন নাম-নিশানা খুঁজে পাওয়া যেত না, তেমন দিন আবার আসছে। আমরা রাজবাড়ীতে শান্তি চাই। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন চাই। পুলিশকে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, পুলিশের মধ্যেও অনেক ভালো মানুষ আছে। আপনারা নিরপেক্ষ ভাবে দায়িত্ব পালন করুন। মনে রাখবেন এক মাঘে শীত যায় না।
তিনি আরো বলেন, ২০০৮ সালে সামরিক বাহিনীর সাথে আঁতাতের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই দেশটাকে লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে। লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা তারা আত্মসাত করেছে। ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করে ফেলা হয়েছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকে নির্বিচারে খুন-গুম করা হচ্ছে। ইলিয়াছ আলী, চৌধুরী আলমদের মত অসংখ্য নেতাকর্মীর কোন হদিস নেই। সামান্য বৃষ্টি হলেই এখন ঢাকা শহরের নৌকা চলে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে। বিএনপির চেয়ারপারসন ও ৩বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। তারেক রহমানের নামে মিথ্যা মামলাগুলো দেওয়া হয়েছে, তার একটিও তারা প্রমাণ করতে পারবে না। তারেক রহমান দেশে ফিরলেই দেশের লক্ষ লক্ষ তরুণ রাস্তায় নেমে আসবে। সরকারের দুঃশাসনের পতন ঘটবে। এ জন্যই তারা তারেক রহমানকে দেশে ফিরতে দিচ্ছে না। ফ্যাসিস্ট সরকার স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ চালাচ্ছে। কিন্তু এভাবে তাদের শেষ রক্ষা হবে না। জনগণ স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটাবেই। দেশের আপামর মানুষের ম্যান্ডেট নিয়ে বিএনপিই আবার ক্ষমতায় আসবে।
আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম বলেন, আমরা একসময় লৌহমানব আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে তার পতন ঘটিয়েছি, ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত আর লাখ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে দেশের স্বাধীনতা এনেছি। কাজেই এই সরকারের পতনও আমরাই ঘটাবো ইনশাল্লাহ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারী কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনারা বেশী বাড়াবাড়ি করবেন না। তাহলে একসময় আপনাদের নিকট থেকে কড়ায়-গন্ডায় হিসাব নেওয়া হবে। কেউ পার পাবেন না। ছাত্রলীগ-যুবলীগের দৌরাত্ম্য ভয়ঙ্করভাবে বেড়ে গেছে। প্রতিনিয়ত তাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ নির্যাতিত হচ্ছে। তাদের হাতে কেউ নিরাপদ নয়।
তিনি আরো বলেন, সত্য কথা বলায় এবং সঠিক রায় দেওয়ার কারণে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে অন্যায়ভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। হয়রানী করার জন্য এখন তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হচ্ছে। শুধু বিচার বিভাগই নয়, দেশের প্রতিটি সেক্টরকেই এভাবে ধ্বংস ও অকার্যকর করে ফেলা হচ্ছে।
আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম বলেন, এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সকলকে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দুর্বার গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটাতে হবে। এছাড়াও তিনি ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরেন।
আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাবেক এমপি নাসিরুল হক সাবু, কালুখালী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এডঃ আব্দুর রাজ্জাক খান, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নঈম আনছারী, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আফছার আলী সরদার, রাজবাড়ী পৌর বিএনপির সভাপতি এবিএম মঞ্জুরুল আলম দুলাল, সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আহসানুল করিম হিটু ও গোয়ালন্দ পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডঃ আব্দুস ছাত্তার, জেলা বিএনপির সদস্য অর্ণব নেওয়াজ মাহমুদ হৃষিত, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কে.এ সবুর শাহীনসহ বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সভা উপস্থাপনা করেন জেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এ মজিদ বিশ্বাস।