Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

দৌলতদিয়া ঘাটে নেতাকর্মিদের উপর লাঠিচার্জ-গাড়ী ভাংচুর॥রাজবাড়ী ফেরার পথে ৮টি স্থানে পুলিশের বাঁধা ঃ সাবেক এমপি খৈয়মের অভিযোগ

॥শিহাবুর রহমান॥ লন্ডনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাত শেষে ঢাকা থেকে রাজবাড়ী ফেরার পথে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মের গাড়ী বহরে পুলিশের বাধা ও নেতাকর্মীদের ওপর লাঠি চার্জ ও গাড়ী ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল ৬ই নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় নিজ বাসভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে এ অভিযোগ করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম। সাংবাদিক সম্মেলন চলাকালেও তার বাসার সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়ন থাকতে দেখা গেছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম অভিযোগ করে বলেন, সরকার দীর্ঘদিন যাবত স্বৈরশাসনের যাতাকলে আমাদের মৌলিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকারসহ সকল প্রকার অধিকার পদতলিত করে চলেছে। হত্যা, গুম, মিথ্যা মামলায় সারা বাংলাদেশ আজ কারাগারে পরিনত হয়েছে। আমাদের দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এক ঝাঁক মিথ্যা মামলা দিয়ে আদালতে হেয় করা হচ্ছে। তারেক রহমান মিথ্যা মামলায় ব্রিটেনে নির্বাসনে জীবন যাপন করছেন। আমাদের দলের মহাসচিব থেকে শুরু করে ইউনিয়নের নেতাকর্মীরাও আজ মামলায় জর্জরিত।
আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম বলেন, আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ্যতার কারণে ৩মাস আগে লন্ডনে চিকিৎসার জন্য যান। তার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসার কারণে আমি তাকে দেখার জন্য গত ১০ই অক্টোবর লন্ডনে গিয়েছিলাম। বেগম জিয়ার সাথে দেখা করে তার স্বাস্থ্যের খোজ খবর নেয়াসহ কুশল বিনিময় করেছি। তারেক রহমানের সাথে দেখা করেছি। কুশল বিনিময় করেছি। দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে দীর্ঘ আলাপ আলোচনা করেছি। এছাড়াও বিভিন্ন টক শোতে অংশ নিয়েছি। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথেও বৈঠক করেছি। এসব কর্মকান্ড শেষে ২০দিন পর গত ৩১শে অক্টোবর দেশে ফিরেছি। ঢাকায় ফেরার পর অসুস্থ্যতার কারণে রাজবাড়ীতে আসতে পারিনি।
তিনি বলেন, গতকাল ৬ই নভেম্বর দুপুরে আমি রাজবাড়ীতে আসার জন্য ঢাকা থেকে রওনা হই। এতে আমার নির্বাচনী এলাকার নেতা কর্মীদের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবে ব্যাপক উৎসাহের সৃষ্টি হয়। দৌলতদিয়া ফেরী ঘাটে আমাকে স্বাগত জানাতে প্রায় ৪/৫’শ মোটর সাইকেলের বহর ও কমপক্ষে তিন হাজার কর্মী সমর্থক সমবেত হয়। বিকেলে আমি যখন ফেরীতে মাঝ নদীতে তখন খবর পেলাম আমার নেতাকর্মীর ওপর বেপরোয়াভাবে লাঠিচার্জ ও গাড়ী ভাংচুর করেছে পুলিশ। গোয়ালন্দ থানার ওসির উপস্থিতিতেই পুলিশ এ ঘটনা ঘটায়। আমার প্রতি সাধারণ মানুষের ভালবাসা দেখে ঈশ^ানিত হয়ে দমন মনসতান্ত্রিক হয়ে নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে।
তিনি বলেন, আমি দৌলতদিয়া ঘাটে এসে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেছি। পুলিশকে বেপরোয়া ও মারমুখি আচরণ না করার জন্য আহবান জানাই। এরপর দৌলতদিয়া থেকে রাজবাড়ী আসার পথে পুলিশ আমার গাড়ীকে ৮স্থানে গতিরোধ করেছে। আমাকে দেখার জন্য রাস্তার পাশে লোকজন কয়েক হাজার মানুষ সমবেত হয়েছে এই অপরাধে তাদেরকেও লাঠিচার্জ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গোয়ালন্দ মোড়ে জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দর সাথেও পুলিশ সুব্যবহার করেনি। তাদের গাড়ী আটকে রাখা হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে আপনি চলে যান। এরা পরে যাবে। আমি বাসায় এসেও দেখলাম একঝাঁক পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে।
আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম বলেন, আমি ৫বছর এমপি ছিলাম। ১৫বছর পৌরসভার মেয়র ছিলাম। কখনই আমরা আমাদের বিরোধী দল আওয়ামী লীগের নেতার বাসার সামনে পুলিশ মোতায়ন করতে দেই নাই। কাজী কেরামত আলীর পথ রোধ করি নাই।
তিনি আরো বলেন, যখন বেগম খালেদা জিয়া রোহিঙ্গাদের পাশে যেতে চায় তখন তার ওপর হামলা করা হয়েছে। সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়েছে।
আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম বলেন, গণতন্ত্রের জন্য আমরা রক্ত দিয়েছে। সেই গণতন্ত্রের এখন কি অবস্থা। বর্তমান সরকার গণতন্ত্রকে ছিন্নভিন্ন করে ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছে। লন্ডনে টটশোতে আমি ফেয়ার নির্বাচনের কথা বলেছি। এটাই আমার অপরাধ। এটা বলাতে আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ যে স্বৈরাচার সরকার এটাই তার প্রমাণ। তিনি এ ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবী জানান। সেই সাথে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে এই সরকারকে উৎখাত করার আহবান জানান।
সাংবাদিক সম্মেলনে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এডঃ আসাদুজ্জামান লাল, সদস্য এডঃ আঃ রাজ্জাক, এডঃ এমএন শাহিদুল ইসলাম, পৌর বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ মুঞ্জরুল আলম দুলাল, সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আহসানুল করিম হিটু, জেলা জাসাদের সভাপতি আব্দুর রউফ হিটু, যুব নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন সম্রাট ও অর্নব নেওয়াজ হৃষিতসহ জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মির্জা আবুল কালাম আজাদ জানান, দৌলতদিয়া ফেরী ঘাটে বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মি জড়ো হওয়ায় ফেরীতে গাড়ী ওঠা নামার পথ বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় ফেরী ঘাটকে যানজটমুক্ত রাখতে তিনি নেতাকর্মিদের সরে যাওয়ার আহবান জানালে তারা সরে যায়। লাঠিচার্জ ও গাড়ি ভাংচুরের কোন ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি দাবী করেন।