॥কাজী তানভীর মাহমুদ॥ ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাজবাড়ীর সাধারণ মানুষের জীবন। দিনের বেশীর ভাগ সময়েই বিদ্যুৎ না থাকায় জেলার বিসিক শিল্প নগরীতে তার পড়েছে ব্যাপক প্রভাব। কাঙ্খিত উৎপাদন করতে না পারায় অধিকাংশ উদ্যোক্তার মাঝেই দেখা দিয়েছে হতাশা। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে তাদের।
১৯৬৪ সালে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের রাজবাড়ী শিল্প নগরীর বিসিক কার্যালয়। প্রতিষ্ঠার ৫৩ বছর কেটে গেলেও দৃশ্যমান কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এই বিসিক শিল্প নগরীতে। সড়কের বেহাল দশা ও নিরাপত্তা লাইট না থাকাসহ ড্রেনেজ ব্যবস্থা একেবারেই নাজুক। এত সমস্যার উপরে আবার ঘন ঘন লোডশেডিং যেন মরার উপরে খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজবাড়ী বিসিকের ১৫.২৮ একর জমির উপরে ৭৭টি প্লটে ৫১টি শিল্প ইউনিট রয়েছে। যার প্রত্যেকটিই বিদ্যুতের উপরে নির্ভরশীল। কিন্তু বর্তমান সময়ে লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন কার্যক্রম। ফলে উদ্যোক্তারা চাহিদা মোতাবেক তাদের পণ্য উৎপাদন করতে পারছেন না। ফলে অনেক উদ্যোক্তাই ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন।
বিসিকের মধ্যে বর্তমানে ১৭টি রাইস ও চিড়া মিল, ২টি অয়েল মিল, ৩টি ফ্লাওয়ার মিল, ১টি ব্রেড এন্ড বিস্কুট, ৪টি সেমাই মিল, ৩টি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, ৩টি বস্ত্র মিল, ৪টি ডাল মিল, ১টি পোল্ট্রি মিল, ১টি পিভিসি পাইপ, ১টি মোমবাতি, ১টি হারবো কেমিক্যাল, ৭টি রুগ্ন ও ২টি নির্মানাধীন মিল রয়েছে।
মা মেটাল ওয়ার্কসের উদ্যোক্তা মোঃ জিয়া উদ্দিন পাপন বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আমরা ব্যবসা শুরু করেছি। ব্যাংক ঋণের সুদ অনেক বেশী। সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুসারে শিল্প খাতে যে ঋণ তার সুদ কম থাকার কথা। অথচ ব্যাংক আমাদের কাছ থেকে শতকরা ১৩শতাংশ সুদ নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে আমরা ব্যবসায়ীরা লোকসানে আছি। পাশাপাশি বিসিকে আমরা প্রোডাকশনের বিষয়ে আশা করেছিলাম গড়ে প্রতিদিন ৫শত কেজি প্রডাকশন করবো, সেখানে বিদ্যুতের সমস্যার কারণে প্রতিদিন প্রডাকশন হচ্ছে মাত্র ২শত কেজি। এত কম প্রডাকশন নিয়ে আমরা শ্রমিকদের নিয়ে চলতে পারছি না। যার কারণে আমরা ক্রমাগত লোকসানের দিকে যাচ্ছি। ব্যাংক ঋণের টাকাও আমরা সময় মত পরিশোধ করতে পারিনা।
সাগর অটো ফ্লাওয়ার মিলের ইনচার্জ মোঃ আমির হোসেন বলেন, উৎপাদনের জন্য আমাদের যে পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা তা আমরা পাচ্ছি না। বিদ্যুতের কারণে ৪ ভাগের ৩ ভাগ প্রডাকশন কম হচ্ছে। শ্রমিকরা বসে থাকে কিন্তু তাদের বেতন ঠিকই দিতে হচ্ছে। এতে করে লোকসান হচ্ছে।
মডার্ন ফুড প্রোডাক্টসের উদ্যোক্তা আনিসুর রহমান বলেন, বিসিকের মধ্যেকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। বর্তমানে ড্রেনগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। ড্রেনের উপর দিয়ে ময়লা ভেসে রয়েছে। বিসিক কর্তৃপক্ষ ড্রেনেজ ব্যবস্থা দেখ-ভাল করে না। ড্রেন ভরে থাকার কারণে অনেক সময় ধানের চাতালে পানি চলে আসে। ধান শুকাতে পারিনা, নষ্ট হয়ে যায়।
ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ নানা সমস্যার কথা স্বীকার করে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবী জানালেন রাজবাড়ী বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোঃ ফরহাদ হোসেন। তিনি জানান, বিসিকে ১৫.২৮ একর জমি আছে। এখানে ৭৭টি প্লটের মাধ্যমে ৫১টি ইউনিটকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিসিকের মধ্যকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা কিছুটা খারাপ। ড্রেনেজের আউটলেট নাই। পুরাতন ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংষ্কার করা দরকার। রাতে বিসিকের মধ্যে রোড লাইটের ব্যবস্থাও নাই। ফলে রাতে নিরাপত্তার অভাব দেখা দেয়। মাঝে-মধ্যে কিছু চুরিও হয়ে যায়। রোড লাইটের ব্যবস্থা হলে নিরাপত্তা বজায় থাকবে। এছাড়াও রাজবাড়ীতে লোডশেডিং বেশী। লোডশেডিংয়ের কারণে কলকারখানা বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকরা বসে থাকে। উৎপাদন ব্যাহত হয়। উদ্যোক্তারা লোকসানের মুখে পড়ে। বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যবস্থা ভালো হলে বিসিকের উদ্যোক্তারা লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে পারতো।
বিদ্যুতের ব্যাপারে রাজবাড়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ ওজোপাডিকো লিঃ-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুর রহমান বলেন, রাজবাড়ীতে পিক আওয়ারে ডিমান্ড হচ্ছে ২২ মেগাওয়াট। সেই তুলনায় বর্তমানে যা পাচ্ছি তাতে পিক আওয়ারে ১২ থেকে ১৪ মেগাওয়াট থাকছে। তবে আগের চেয়ে বরাদ্দ বাড়ছে। পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক বলা যায়। তারপরও কিছুটা লোডশেডিং আছে। বরাদ্দ যদি আরও পাওয়া যায়, পাশাপাশি সামনে শীত আসছে তখন বিদ্যুতের চাহিদা কমে আসবে। তাই আশা করি আগের চেয়ে বিসিক ফিডারে বিদ্যুৎ বেশী দিতে পারবো। আমরা চেষ্টাও করি যে, বিসিকে যেহেতু শিল্প-কারখানা আছে সেহেতু সেখানে বেশী করে বিদ্যুৎ দিতে-যাতে তারা তাদের মেশিন সচল রাখতে পারে।