Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ী জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় চোরাচালান বিরোধী টাস্কফোর্সের অভিযান জোরদারে গুরুত্বারোপ

॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ১০ই সেপ্টেম্বর সকালে কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভাসহ ৮টি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে সভায় আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্স, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(ক্রাইম) মোঃ আছাদুজ্জামান, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেক, বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম আজাদ, গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম নুরুল ইসলাম, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এনএসআই’র উপ-পরিচালক মোঃ জিল্লুর রহমান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জহিরুল ইসলাম, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রাজবাড়ী সার্কেলের সহকারী পরিচালক রাজিব মিনা, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এডঃ খোন্দকার হাবিবুর রহমান বাচ্চু, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেদায়েত আলী সোহরাব, জেলা জাসদের(আম্বিয়া) আহবায়ক স্বপন কুমার দাস ও রাজবাড়ী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছমির উদ্দিন প্রমুখ।
এ সময় কালুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খান এ শামীম, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রুবাইয়াত মোঃ ফেরদৌস, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ আব্দুল হামিদ খান, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ তৌহিদুল ইসলাম ও জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নূরে ফেরদৌসী সফুরাসহ জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ ও বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। সভায় পূর্বের সভার কার্যবিবরণী উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আব্দুর রহমান।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত দৌলতদিয়া ঘাটে গত কয়েকদিন ঈদ পরবর্তী কর্মস্থলে ফেরা মানুষসহ যানবাহনের ব্যাপক চাপ ছিল। যার কারণে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছিল। বর্তমানে সেই যানজট ২১টি ফেরীর মাধ্যমে নিরসন করা সম্ভব হয়েছে। মূলত নাব্যতা সংকটের কারণে মাওয়া ঘাট সাময়িকভাবে বন্ধ থাকার কারণে এই যানজট সৃষ্টি হয়েছিল।
জেলায় সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে নারী নির্যাতন ও মাদক নিয়ন্ত্রণে জেলা পুলিশ ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ভাল কাজ করছে। আগামীতে সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করে মাদক নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করবেন। জেলা পুলিশ, জিআরপি পুলিশ ও কাস্টমস বিভাগ চোরাচালান বিরোধী অভিযান পরিচালনা করলেও কোন চোরাচালানী ধরা পড়ে না বা চোরাচালানী পণ্য উদ্ধার হয় না। আমি আশা করব, চোরাচালান বিরোধী অভিযানে সংশ্লিষ্ট বিভাগ আরো তৎপর হয়ে তাদের অভিযান পরিচালনা করবেন।
তিনি বলেন, শহরের মুরগীর ফার্ম ও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সামনে বিভিন্ন আন্তঃ জেলা ট্রাক থেকে অবৈধভাবে টাকা উত্তোলন করা হয়, যা বন্ধে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বালিয়াকান্দি ও ধাওয়াপাড়া ঘাটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করাসহ পাহাড়ের মত বালুর স্তুপ করে রাখা হয়েছে। যার কারণে নদীর পানি কমার সাথে সাথে নদীর পাড় ও শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি এসব বালু উত্তোলন বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ বালুর স্তপ অপসারণের জন্য সদর ও বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ প্রদান করেন।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সুত্রে মাধ্যমে জানাযায়, বাজারে চাল দাম আগের তুলনায় কেজিপ্রতি ৪ থেকে ৬ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু বাজার মনিটরিং কর্মকর্তার প্রদত্ত তথ্যে কোন চালের দাম বৃদ্ধি পায়নি মর্মে জেলা প্রশাসকের কাছে রিপোর্ট প্রদান করা হয়েছে, যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। ঠিকমতো বাজার মনিটরিং না করে তথ্য প্রদান করায় বাজার অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাকে ভুল তথ্য প্রদান থেকে বিরত থাকার জন্য মৌখিকভাবে সতর্ক করেন।
এছাড়াও সভায় বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, ধাওয়াপাড়া ঘাটে যাত্রী পারাপারে সঠিক ভাড়া ও নিয়মতান্ত্রিক পারাপার নিশ্চিত করা, গোয়ালন্দ বাজারে মসজিদের পাশ থেকে লাইসেন্সকৃত মদের দোকান স্থানান্তর, বড়পুল মোড়ে সার্বক্ষণিকভাবে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন, কালুখালী উপজেলার মদাপুরে অসুস্থ্য গরুর মাংস খেয়ে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক মেরামত ও মহাসড়ক চারলেন করা, বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান, গোদার বাজার পদ্মা নদীর পাড়সহ সকল বিনোদন কেন্দ্র ও শিশু পার্ক মেরামত ও আকর্ষণীয় করা, পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন, বরাট ও পাঁচুরিয়া এলাকায় পুলিশী টহল বাড়ানোসহ জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সভায় রাজবাড়ীতে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ সম্পর্কে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা সমস্যা শুধু বাংলাদেশেরই নয়, এটা এখন একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। এদের বিষয়ে জেলা প্রশাসন সতর্ক রয়েছে।
এছাড়াও সভায় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই’র উপ-পরিচালক মোঃ জিল্লুর রহমান দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীতে রোহিঙ্গা নারীদের প্রবেশ ঠেকাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহবান জানান।
তিনি জানান, দেশের বৃহত্তম এই পতিতাপল্লীতে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থী নারীদের আনার জন্য একটি দালাল চক্র ইতিমধ্যে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এছাড়াও আত্মীয়তার সুবাদে রাজবাড়ী জেলাসহ অন্যান্য জেলায় রোহিঙ্গা প্রবেশের এমন তথ্য কারো কাছে আসে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করার জন্য তিনি সকলের প্রতি অনুবোধ জানান।
জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে একই স্থানে আরো ৭টি সভা অনুষ্ঠিত হয়।