Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

গোয়ালন্দের নদী ভাঙ্গনের শিকার হওয়া কৃষকরা এখন দৌলতদিয়া ঘাটের হকার

॥এম.এইচ আক্কাছ॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার হাজার হাজার কৃষক পরিবার নদী ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারিয়েছে। তাদের সন্তানরা এখন দৌলতদিয়া ঘাটে হকারী করে।
এক সময় মাঠ ভরা ফসলী জমি, মাছে ভরা পুকুর, গোলা ভরা ধান-সবই ছিল ওদের। সর্বনাশা পদ্মার ভাঙ্গনে সব হারিয়ে এখন দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরীতে, লঞ্চে, বাস টার্মিনালে হকারী করে কোনমতে চলে তাদের জীবন। নদী ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারানো অন্তত ৫শ মানুষ বর্তমানে দৌলতদিয়া ঘাট ও ফেরী-লঞ্চে বিভিন্ন পন্যের হকারী করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে।
এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের কুশাহাটা বাজার এলাকার আব্দুল জলিল মন্ডলের ছেলে মোঃ বক্কার মন্ডলের সাথে কথা হয়।
তিনি বলেন, তার বাবার দেড়শত বিঘা জমি ছিল। ছিল চার জোড়া হালের গরু। দু’টি করে দুধালো গাভী থাকত। বাড়ীতে সবসময় ৭/৮জন রাখাল কাজ করতো। ৫ভাই ও বাবা-মা নিয়ে সুখেই কাটছিল তাদের দিন। ৯বছর আগে হঠাৎ পদ্মার ভাঙ্গন শুরু হলে আস্তে আস্তে পদ্মার পেটে চলে যায় জমি, বসত বাড়ীসহ সব কিছু। কিছু দিন বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়ে দৌলতদিয়া ফেরী ঘাটে হকারীর কাজ শুরু করেন তিনি। এরপর উত্তর দৌলতদিয়ায় অন্যের ১০ শতাংশ জমি বছরে ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে নিয়ে ঘর তুলে কোন রকমে জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। তার ৩টি কন্যা সন্তান লেখা-পড়া করছে। ফেরীতে পাপড় বিক্রি করে তার কোন দিন ৪শত টাকা, আবার কোন দিন ৩ শত টাকা আয় হয়।
কুশাহাটা এলাকার আজগর আলীর ছেলে আয়ুব আলী। তার ১১ বিঘা জমি পদ্মার গর্ভে হারিয়ে এখন তিনি নিঃস্ব। তিনিও দৌলতদিয়া ছাত্তার মেম্বার পাড়া এলাকায় অন্যের ৫শতাংশ জমিতে বাড়ী তৈরী করেছেন। তিনি জানান, যে জমির মালিক ছিলেন সেই জমির ফসল দিয়ে তার সংসার ভালভাবেই চলছিল। বর্তমানে ফেরী ঘাট এলাকায় সিদ্ধ ডিম বিক্রি করে যে টাকা আয় হয় তাই দিয়েই কোনমতো সংসার চলে তার।
একইভাবে দৌলতদিয়া ঘাটের হকার মামুন মোল্লা, কাইয়ুম মোল্লা, ফরহাদ, হালিম ব্যাপারী, বক্কার মন্ডল, আয়ুব আলী ও রাশেদ মোল্লা প্রমুখ জানান, একসময় তাদের সবই ছিল। ভাগ্যের চক্রে আজ তারা নিঃস্ব। কেউ ঝালমুড়ি, কেউ ডিম, কেউ শুকনো খাবার বিক্রি করে চলে তাদের জীবন।
দৌলতদিয়া হকার্স বহুমুখী সমবায় সমিতির সহ-সভাপতি মোঃ সাইদুর রহমান সাইদ জানান, বর্তমানে তাদের সমিতির সদস্য সংখ্যা ৫শতাধিক। এদের বেশীর ভাগই পদ্মায় সব হারিয়েছে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ-রুটে হকারদের ২টি সংগঠন থাকায় পর্যায়ক্রমে একটি সংগঠনের সদস্যরা তিন দিন, এরপর অপর সংগঠনের সদস্যরা তিন দিন এভাবে হকারী করে। অবশিষ্ট ৩দিন কেউ রিক্সা চালায়, কেউ অন্যের জমিতে কাজ করে।