॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ২০শে আগস্ট সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে সভায় পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(ক্রাইম) মোঃ আছাদুজ্জামান, সিভিল সার্জন ডাঃ রহিম বক্স, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেক, পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরিদ হাসান ওদুদ, গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম নুরুল ইসলাম, বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) রেবেকা খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) মোঃ আব্দুর রহমান, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাইম-আস-সাকিব, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জহিরুল ইসলাম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কৃষ্ণ সরকার, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ তৌহিদুল ইসলাম, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মাজিনুর রহমান, জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিকি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাকির হোসেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ আব্দুল হামিদ খান, জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক কাজী ফারুক আহম্মেদ, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রুবাইয়াত মোঃ ফেরদৌস, জেলা আনসার অ্যাডজুটেন্ট সদন চাকমাসহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, এনজিও প্রতিনিধিগণ এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী তার বক্তব্যে বলেন, দেশের অনেক জেলার মত আজ রাজবাড়ী জেলাও বন্যার সম্মুখীন। একমাত্র বালিয়াকান্দি ছাড়া রাজবাড়ী জেলার অন্য ৪টি উপজেলার মধ্যে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়ন সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন। রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহর রক্ষা বাঁধের ভিতরের অংশ ছাড়া বাইরের সকল অংশ, কালুখালী ও পাংশা উপজেলার কিছু এলাকা বন্যা কবলিত হয়েছে। বর্তমানে এসব বন্যা কবলিত অধিকাংশ এলাকার মানুষ ও গবাদিপশু আশ্রয় কেন্দ্র, বাঁধের উপরের রাস্তা ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। এসব বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের জন্য জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে। ইতিমধ্যে বন্যা কবলিত মানুষের মধ্যে রাজবাড়ী-১ ও ২ আসনের সংসদ সদস্যদ্বয়সহ আমি নিজে উপস্থিত থেকে শতভাগ স্বচ্ছতার সাথে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছি। ত্রাণ বিতরণকালীন সময়ে ও বিভিন্ন সুত্র থেকে আমি জানতে পেরেছি বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোর অনেক কর্মকর্তাই তাদের কর্মস্থলে উপস্থিত নাই। যেহেতু বন্যার সংশ্লি¬ষ্ট সকল বিষয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে সেহেতু বন্যা কবলিত জেলা ও উপজেলার সকল কর্মকর্তা বন্যা না যাওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মস্থলে উপস্থিত থাকবেন। জেলার যে ৮টি মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসা এবং ৩৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যা কবলিতদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যাতে পড়াশোনার কোন ক্ষতি না হয় সেজন্য বন্যার পর তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধের যে সকল জায়গায় ভাঙ্গনের সম্ভাবনা রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড সে সকল জায়গায় ভাঙ্গন প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বন্যা কবলিতদের জন্য স্বাস্থ্য সেবা ও বাঁধের উঁচু স্থানে আশ্রয় নেওয়া মানুষের জন্য ল্যাট্রিন তৈরী ও বিশুদ্ধ সরবরাহে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে সাপে কাটা রোগীদের জন্য সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লে¬ক্সগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভ্যাকসিন মজুদ আছে। কাউকে সাপে কাটলে তাকে জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। জেলায় যে সমস্ত পরিবারের গবাদিপশু বন্যার কারণে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে তাদের খাদ্যের জন্য সরকারী ত্রাণ তহবিল থেকে ৫শত টাকা করে দেওয়া হয়েছে। যাতে তারা গবাদিপশুর জন্য খাদ্য কিনতে পারে। গবাদিপশুর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বন্যায় জেলার ৭৬৩ হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগকে বন্যা পরবর্তী সময়ে কৃষকদের জন্য বীজ, সারসহ যা প্রয়োজন তা প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। যাতে বন্যার পরপরই এগুলো কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ করা যায়। বন্যার সময় যারা উঁচু স্থানে, বাঁধে, রাস্তায় ও আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছে তাদের বাড়ী-ঘর, আশ্রয়স্থল ও গবাদিপশু নৌ-ডাকাত, সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষার জন্য নৌ-টহল ও আশ্রয় কেন্দ্রে বিশেষ টহলের মাধ্যমে নিরাপত্তা বিধানের জন্য এই সভা থেকে পুলিশ সুপারকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। জেলার সকল সরকারী-বেসরকারী বিভাগ, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ সকলে যদি নিজের পরিবারকে রক্ষার মত উদ্দেশ্য নিয়ে এসব বন্যা কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায় তবে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগকে আমরা সহজেই মোকাবেলা করতে পারব বলে আমি বিশ্বাস করি। শিশুদের প্রতি বাবা-মাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে তারা পানিতে পড়ে দুর্ঘটনায় পতিত না হয়।
এছাড়াও জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় সৌদি সরকারের বিশেষ অনুদানে জেলায় ১টি ও প্রত্যেক উপজেলায় ১টি করে মডেল মসজিদ নির্মাণের বিষয়ে আলোচনাসহ জেলার সার্বিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সভায় উপস্থিত সকলকে তাদের অধীনস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সচেতন করার জন্য বন্যা ও জলাবদ্ধতায় করণীয়, সাপে কাটলে করণীয়, বন্যার সময় সাপের উপদ্রব থেকে রক্ষার জন্য কার্বলিক এসিডের ব্যবহার এবং বন্যার সময় পানি ও খাদ্য বাহিত রোগ প্রতিরোধে করণীয় সংক্রান্তে লিফলেট বিতরণ করা হয়।