Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

প্রখ্যাত সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ আর নেই

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ প্রখ্যাত সাংবাদিক, গবেষক ও কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ আর নেই। তিনি গতকাল ২৩শে ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে স্কয়ার হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
সৈয়দ আবুল মকসুদের পুত্রবধু মুনমুন ফারজানা জানান, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে তার শ্বশুর বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়ার পর দ্রুত তাকে স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সৈয়দ আবুল মকসুদ প্রথম জীবনে সরকারের তথ্য কর্মকর্তা ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নেন। তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায়(বাসস) বার্তা বিভাগে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন।
বামপন্থী আবুল মকসুদ ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের প্রতিবাদে সন্যাসীর মতো সাদা পোষাক পড়তে শুরু করেন। ২০০৪ সালে বাসসের চাকুরী ছেড়ে দিয়ে ফ্রিল্যান্সার সাংবাদিকতা শুরু করেন। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশ এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে একাধিক গবেষণা কাজ করেছেন এবং মহাত্মা গান্ধী এবং মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সম্পর্কে তার বিস্তৃত গবেষণার জন্য খ্যাতিমান ছিলেন।
চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন তিনি। সৈয়দ আবুল মকসুদ বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ঋষিজ পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
সৈয়দ আবুল মকসুদ ১৯৪৬ সালের ২৩শে অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার এলাচিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সৈয়দ আবুল মাহমুদ ও মা সালেহা বেগম। তার জন্মের দুই বছর পর ১৯৪৮ সালের ২০শে নভেম্বর তার মা সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে ধনুষ্টঙ্কারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার মায়ের মৃত্যুর পর তার বিমাতা বেগম রোকেয়া আখতার তাকে সন্তান স্নেহে লালনপালন করেন। তিনিও ১৯৮০ সালে মারা যান। তার বাবা কাব্যচর্চা করতেন। তাই শৈশব থেকে তিনি দেশি বিদেশি বিভিন্ন পত্রিকা পড়ার সুযোগ পান। তার বাবা বাড়িতে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা, দ্য স্টেটসম্যান ও ইত্তেহাদ এবং পরে ঢাকার দৈনিক আজাদ, দৈনিক ইত্তেফাক ও মর্নিং নিউজ পত্রিকা রাখতেন।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে নানা বই ও প্রবন্ধ লিখেছেন। বিখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদদের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখেছেন। পাশাপাশি কাব্যচর্চাও করেছেন। তার রচিত বইয়ের সংখ্যা চল্লিশের ওপর। বাংলা সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।
আবুল মকসুদের স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। কিছুদিন শিক্ষকতা করেছেন অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজে। তাদের দুই সন্তান। মেয়ে জিহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স এবং মাস্টার্স করে ব্যাংকে চাকুরী করছেন। ছেলে সৈয়দ নাসিফ মাকসুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স এবং মাস্টার্স করে দুই বছর ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি এবং স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়িয়েছেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ করে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডে সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে চাকুরী করছেন।
তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- কবিতা : বিকেল বেলা, দারা শিকোহ ও অন্যান্য কবিতা; প্রবন্ধ : যুদ্ধ ও মানুষের মূর্খতা, বাঙালির সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার, পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথের ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন, ঢাকায় বুদ্ধদেব বসু প্রভৃতি; জীবনী : সৈয়দ ওয়ালীউল্যাহর জীবন ও সাহিত্য, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, গোবিন্দচন্দ্র দাসের ঘর-গেরস্থালি; ভ্রমণকাহিনি : জার্মানির জার্নাল, পারস্যের পত্রাবলি।
রাষ্ট্রপতির শোক প্রকাশ : বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ।
গতকাল মঙ্গলবার এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, সৈয়দ আবুল মকসুদের মৃত্য আমাদের সাহিত্য অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। দেশের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার অবদান মানুষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
রাষ্ট্রপতি মরহুম সৈয়দ আবুল মকসুদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রীর শোক প্রকাশ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রখ্যাত সাংবাদিক, কলামিস্ট ও লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার এক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এছাড়াও বরেণ্য সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদের মৃত্যুতে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ও বাসসের পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, দৈনিক মাতৃকণ্ঠের সম্পাদক ও রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার আব্দুল মতিন গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। পৃথক বিবৃতিতে তারা শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।