॥স্টাফ রিপোর্টার॥ রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে বিপণী বিতান রাপা প্লাজায় রাজলক্ষ্মী জুয়েলার্স নামক একটি স্বর্ণালঙ্কারের দোকানে কমপক্ষে ৪০০ শত ভরি স্বর্ণ চুরির অভিযোগ উঠেছে।
জানা যাচ্ছে, সুরক্ষিত এই শপিং মলের রাজলক্ষ্মী জুয়েলার্স নামে একটি দোকানে ঘটে এই চুরির ঘটনা। দোকানে কমপক্ষে ২০টি তালা লাগানো থাকলেও এর একটিও ভাঙ্গেনি চোরের দল। দেখে মনে হচ্ছে, সবগুলো তালা চাবি দিয়েই খোলা হয়েছে।
চুরি করার আগে শপিং মলের সিসি ক্যামেরাগুলোর লেন্স কালো টেপ দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে, যাতে ফলে সিসি ক্যামেরায় চুরির কোনো দৃশ্য ধরা পড়েনি। শপিং মলটির দোতালায় অবস্থিত রাজলক্ষ্মী জুয়েলার্স।
জুয়েলার্সের সত্বাধিকারী মহাদেব কর্মকার বলছেন, গত শনিবার রাত পৌনে ৯টার দিকে দোকান বন্ধ করে তালা দিয়ে কর্মচারীরা বাড়ি ফিরে যান। গতকাল ৭ই ফেব্রুয়ারী সকালে শপিং মলের লোকজন আবিষ্কার করে দোকানের সবগুলো তালা খোলা। পরে দোকান মালিকদের তাকে ফোন করেন। তিনি এসে দেখেন, ভেতরের ডিসপ্লে বা প্রদর্শনীর তাকগুলো ফাঁকা।
‘আমার দোকানে ২০ থেকে ২৫টা তালা দেয়া হয়। সকালে এসে দেখি সব খোলা। একটাও তালা ভাঙ্গা নেই। চোর চাবি দিয়ে তালা খুলেছে। তার মানে তারা জানতো এই দোকানে কী ধরণের তালা লাগানো হয়। সেই চাবি তারা বানিয়ে এনেছে’, বলেছিলেন মহাদেব কর্মকার।
পুলিশ জানিয়েছে, তারা শপিং মলের কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ খুঁজে দেখছে কাউকে শনাক্ত করা যায় কী না।
এরমধ্যে থেকে যে কয়টি সিসিটিভি ফুটেজে উদ্ধার করা গেছে, সেগুলো দেখে ধারণা করা হচ্ছে যে কমপক্ষে ৫ থেকে ৭জন চোর শপিং মলে প্রবেশ করে এবং এদের মধ্যে ২ থেকে ৩জন দোকানের ভেতরে প্রবেশ করে লুটপাট চালায়।
মহাদেব সাহার দাবি তার দোকান থেকে গলার হার, চুড়ি, কানের দুল, নাকফুলসহ ৩৫০ থেকে ৪০০ ভরির স্বর্ণালঙ্কার চুরি গেছে।
তবে চোরদের কেউ স্বর্ণের ভোল্ট বা লকার ভাঙ্গতে পারেনি, তাই সেখানকার স্বর্ণ অক্ষত আছে। ক্রেতাদের জরুরী ডেলিভারির জন্য শোকেসে যতো অলঙ্কার সাজানো ছিল, তার একটিও নেই।
তবে বিপণী বিতানের ভেতরে ও বাইরে যেখানে দুই স্তরের ২৪ ঘন্টার নিরাপত্তা থাকে সেখানে এমন চুরির ঘটনায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
রমনা ডিভিশনের উপ-পুলিশ কমিশনার আজিমুল হক বলছেন, মূল ফটকের সামনের ১জন প্রহরী ছাড়া মলটির ভেতরে বা বাইরে আর কোনো নিরাপত্তা প্রহরী ছিল না।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে, শপিংমলে টয়লেটের জানালা কেটে চোর ঢুকতে পারে।
কিন্তু নিয়মানুযায়ী মার্কেট বন্ধ হওয়ার পর টয়লেটও তালাবদ্ধ থাকার কথা জানান মহাদেব কর্মকার।
এ ঘটনার পেছনে মার্কেট কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা ব্যবস্থার অবহেলাকে দায়ী করেন তিনি।
‘একটা শপিং মলের ভেতরে কয়েক ধাপের নিরাপত্তা থাকে। কর্মচারীরা দোকানে তালা দেয়ার পর, মার্কেটের সিকিউরিটি এসে আরেকবার চেক করে যে ঠিকমতো লক হয়েছে কী না। এরপরে বাইরে সিকিউরিটি থাকে। তারপরও কিভাবে চুরি হয়?’ অভিযোগ করেন মহাদেব কর্মকার।
রাজলক্ষ্মী জুয়েলার্সের মালিকের ছোট ভাই অমিত সাহা দাবি করেন, তাদের দোকান থেকে প্রায় ৫০০ ভরি স্বর্ণ চুরি হয়েছে।
মার্কেটের নিরাপত্তারক্ষী ও সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশ ছাড়া ঠান্ডা মাথায় এভাবে চুরি সম্ভব না বলে মনে করেন তিনি। চুরির ঘটনায় একটা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এছাড়াও একই রাতে ওই রাপা প্লাজার তিনটি কাপড়ের দোকান জেন্টাল পার্ক, মনসুন রেইন ও ভোগ সুলতানের শোরুমে চুরি হয়েছে।
জেন্টাল পার্কের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার আহমেদ বলেন, তাদের এক লাখ ৫৬ হাজার টাকা ক্যাশ মিসিং রয়েছে। কাপড় ও অন্যান্য জিনিস কিছু মিসিং রয়েছে কি না তা মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।
মনসুন রেনের ম্যানেজার শাকিল আহমেদ বলেন, ‘আমরা সকালে দোকান খুলতে এসে দেখি বাইরের শাটার কিছুটা উঠানো; তালা ভাঙা। ভেতরে ক্যাশের তালাও ভাঙা ছিল।’
তাদের দোকান থেকে ২৫ হাজার টাকা ও কিছু মালপত্র চুরি হয়েছে বলে জানান তিনি।
ভোগ সুলতানের ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, ক্যাশের তালা ভেঙে এক লাখ ২২ হাজার টাকা চুরি হয়েছে। দোকানের মালপত্র মিসিং রয়েছে কি না তা মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ(সিআইডি)। আর ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন(পিবিআই) ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখা(ডিবি)।
উল্লেখ্য, রাপা প্লাজায় চুরি হওয়া রাজলক্ষ্মী জুয়েলার্সের মালিক মহাদেব কর্মকার রাজবাড়ী শহরের বাসিন্দা। তার বড় ভাই জয়দেব কর্মকার রাজবাড়ী বাজারে অবস্থিত রাজলক্ষ্মী জুয়েলার্সের মালিক।