শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১৬ অপরাহ্ন
Logo
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধিতে আইসোলেশন মেয়াদ অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশী পুনঃ সংক্রমন ঘটাতে পারে : গবেষণা প্রতিবেদন জাতিসংঘ ভবনের বাইরে এক বন্দুকধারী গ্রেফতার শান্তি চুক্তির পঞ্চম বার্ষিকী উপলক্ষে কলম্বিয়া সফর জাতিসংঘ মহাসচিব সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণের সাক্ষাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় অস্ট্রিয়ায় লকডাউন করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ভারতে নতুন করে ১০ হাজার ৩০২ জন করোনায় আক্রান্ত নভেম্বর মাসজুড়ে করাঞ্চলে কর মেলার সেবা পাবেন করদাতারা ঔপনিবেশিক আমলের ফৌজদারী কার্যবিধি যুগোপযোগী হচ্ছে

রাজবাড়ীতে রাস্তায় ৫স্তরের ব্যারিকেড দিয়ে ৩শ বাসিন্দাকে অবরুদ্ধ করলো রেলওয়ের এ.ই.এন !

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১০ জুলাই, ২০২০

॥সুশীল দাস॥ রাজবাড়ী রেল স্টেশন সংলগ্ন কুলিপট্টি এলাকায় জনগণের চলাচলের দীর্ঘদিনের ১শ ফুটের একটি সংযোগ রাস্তার পৌরসভা কর্তৃক উন্নয়ন কাজ একগুঁয়েমি করে ৫স্তরের ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী(এ.ই.এন) গোপাল চন্দ্র চক্রবর্তী।

রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী ও পৌরসভা মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী জনস্বার্থে ব্যবহৃত রাস্তাটি বন্ধ না করার জন্য রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলীকে অনুরোধ করলেও তিনি তা উপেক্ষা করে ৫স্তরের ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয় এ রাস্তার উন্নয়নে যারা জেলা প্রশাসক ও পৌরসভার মেয়রের কাছে দরখাস্ত দিয়েছেন তাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে রেলওয়ের উপ-সহকারী(কার্য/আইসি) মোঃ প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামকে বাদী বানিয়ে ‘সরকারী কাজে বাঁধা দেয়ার অভিযোগ’ করে থানায় একটি হয়রানীমূলক মামলা দায়ের করিয়েছেন।

মামলায় ওই এলাকার বাসিন্দা সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেক, রাজবাড়ী পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহ্ মোঃ জাহাঙ্গীর জলিল ও এডঃ খালেকের পুত্র এম.এ খালেদ পাভেলসহ অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জনকে আসামী করা হয়েছে।

জানা গেছে, রাজবাড়ী রেল স্টেশন সংলগ্ন কুলিপট্টি এলাকায় বসবাসকারীদের যাতায়াতের জন্য কোন রাস্তা না থাকায় মুমূর্ষ রোগীদের জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালে নিতে অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করানো, কেউ মারা গেলে তার লাশ বের করা, আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী ঢোকা, এমনকি রিক্সা-ভ্যানও আসা-যাওয়া করতে পারে না। এ অবস্থায় ওই এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে রেল স্টেশনের সামনের মিলন বোর্ডিং -পাশ দিয়ে মোঃ মকবুল হোসেন খানের বাড়ীর সামনে পর্যন্ত পায়ে চলার রাস্তা যাতাযাত করতো। উক্ত রাস্তায় মাটি-বালু ফেলে আনুমানিক ১০৫ ফুট দৈর্ঘ্যরে ও ১০ ফুটের মতো প্রস্থের একটি সংযোগ রাস্তা তৈরী করা হয়।

পরবর্তীতে জনস্বার্থে রাস্তাটি পাকা করে দেয়ার জন্য গত ২৭/০৬/২০২০ইং তারিখে পৌর মেয়র বরাবর এবং ২৭/০৬/২০২০ ইং তারিখে জেলা প্রশাসক বরাবর স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর শাহ্ মোঃ জাহাঙ্গীর জলিলের সুপারিশ সম্বলিত ২টি লিখিত আবেদন করা হয়।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখা থেকে ২৮/০৬/২০২০ ইং তারিখে পৌর মেয়র বরাবর একটি পত্র দিয়ে (স্মারক নং-৪৬.০০.৮২০০.০১৮.০০৯.০৫.১৭-২০৮) আবেদনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। এর প্রেক্ষিতে পৌর কর্তৃপক্ষ রাস্তাটি পাকাকরণের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে থাকে। এমনকি পৌর মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী নিজে এ.ই.এন’কে ফোন করে দেয়ার পর এডঃ এম.এ খালেকের নেতৃত্বে স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি প্রতিনিধি দল এ.ই.এনের সাথে সাক্ষাৎ করে অনুমতি দেয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কথা বলে বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখেন। সর্বশেষ গত ০৫/০৭/২০২০ইং তারিখে এ.ই.এন গোপাল চন্দ্র চক্রবর্তী কর্মচারী ও শ্রমিক নিয়ে রাস্তাটির এক পাশ রেলফেন্সিং(আস্ত রেললাইন দিয়ে) করে ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তাটির একপাশ বন্ধ করে দেন। ওই দিনই স্থানীয় বাসিন্দারা রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলীকে জানানোর পর তিনি নিজে এ.ই.এন’কে ফোন করে ব্যারিকেড দেয়া স্থগিত রাখার অনুরোধ জানান এবং আগামী সপ্তাহে রাজবাড়ী আসার পর পৌর মেয়রসহ সব পক্ষের সাথে বসে মিমাংসা করার কথা বলেন। কিন্তু একগুঁয়ে এ.ই.এন তার অনুরোধে কোন সাড়া দিয়ে নিজের ইচ্ছায় অনঢ় থাকেন। গত ০৭/০৭/২০২০ইং তারিখে তার অধীনস্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য/আইসি) সাইফুল ইসলামকে বাদী করে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেক, রাজবাড়ী পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহ্ মোঃ জাহাঙ্গীর জলিল ও এড খালেকের পুত্র এম.এ খালেদ পাভেলসহ অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জনকে আসামী করে সরকারী কাজে বাঁধা দেয়ার দাবী করে দন্ড বিধির ১৪৩/৪৪৭/১৮৬/৩৫৩/৪২৭/৫০৬ ধারায় রাজবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

গতকাল ৯ই জুলাই মামলার ৩জন আসামী রাজবাড়ীর ১নং আমলী আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন গ্রহণ করেন। রাজবাড়ী জেলা বার এসোসিয়েশনের সভাপতি এডঃ মোঃ শফিকুল আজম মামুন, সাধারণ সম্পাদক এডঃ মোঃ আনিসুর রহমান, এডঃ গণেশ নারায়ণ চৌধুরীসহ উল্লেখযোগ্য বেশকিছু সংখ্যক আইনজীবী তাদের পক্ষে জামিন শুনানীতে অংশগ্রহণ করেন।

এদিকে যখন তারা আদালত থেকে জামিন নেয়ার কাজে ব্যস্ত সেই সময়েই এ.ই.এন তার লোকজন নিয়ে ৫স্তরের রেলফেন্সিংয়ের ব্যারিকেড দিয়ে কঠোরভাবে রাস্তাটি বন্ধ করে দেন। এতে ওই এলাকার বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

গতকাল ৯ই জুলাই বিকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নজির বিহীনভাবে ৫স্তরের রেলফেন্সিংয়ের ব্যারিকেড দিয়ে সংযোগ রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে সেখানকার ৩শতাধিক বাসিন্দা পুরোপুরি অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তাদের বের হওয়ার মতো কোন পথই নেই। রাস্তাটির মাঝামাঝি একপাশে একটি টিউবওয়েল বসানো রয়েছে, যেখান থেকে রেল স্টেশন কেন্দ্রীক বিপুল সংখ্যক দুস্থ-অসহায় মানুষ পানি পান করতো। সেই পানি পানের ব্যবস্থাও বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা সকলেই একবাক্যে এ জন্য রাজবাড়ী রেলওয়ের বিতর্কিত এ.ই.এন গোপাল কৃষ্ণ চক্রবর্তীকে দোষারোপ করলেন।

এ ব্যাপারে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেক বলেন, রাজবাড়ী রেলের শহর। এই শহরের অধিকাংশ সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসহ অধিকাংশ স্থাপনাই রেলওয়ের জায়গায় করা। এমনকি এ.ই.এনসহ রাজবাড়ী রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের সরকারী বাসভবন থেকে বের হয়েই পৌরসভার নির্মিত রাস্তা ব্যবহার করেন। আমাদের এলাকার বাসিন্দা দীর্ঘদিন ধরে একটি রাস্তার অভাবে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এ অবস্থায় আমরা সেখানে একটি সংযোগ রাস্তা নির্মাণের অনুরোধ জানিয়ে পৌর মেয়র ও জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করি। কিন্তুএ.ই.এন রহস্যজনক কারণে জনস্বার্থের বিষয়টি উপেক্ষা করে রাস্তা করতে না দেয়ার ব্যাপারে অনঢ় রয়েছেন। এর ধারাবাহিকতায় তিনি রাস্তাটি বন্ধ তো করেছেনই, আমার আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলাও করিয়েছেন। আমরা অনতিবিলম্বে এ.ই.এনের রাজবাড়ী থেকে অপসারণসহ দ্রুত রাস্তাটি নির্মাণের দাবী জানাচ্ছি।

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
error: আপনি নিউজ চুরি করছেন, চুরি করতে পারবেন না !!!!!!