॥স্টাফ রিপোর্টার॥ বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র এবং সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের মরদেহ আগামীকাল ১৪ই সকাল সাড়ে ১০টায় বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
মোহাম্মদ নাসিম আজ ১৩ই জুন শনিবার বেলা ১১টা ১০মিনিটে রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক সাংবাদিকদের জনান, আগামীকাল ১৪ই জুন সকাল সাড়ে ১০টায় বনানী কবরস্থান মসজিদে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয় আগামীকাল রবিবার জানাযায় দলীয়-নেতাকর্মীদের ব্যাপকভাবে উপস্থিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আপনারা সবাই যে যার অবস্থান থেকে তার জন্য দোয়া করবেন। তিনি যেহেতু দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করেছে, তাই দেশের এই পরিস্থিতিতে তার মরদেহ কোথাও নেয়া হবে না। রবিবার সাড়ে ১০ টায় জানাযা শেষে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডা. এস.এ মালেক ও আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিম ও রজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলীসহ মন্ত্রী সভার সদস্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
গত ১লা জুন রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হন মোহাম্মদ নাসিম। পরে রাতে তার করোনা ভাইরাস পজেটিভ আসে। করোনাভাইরাস আক্রান্ত অবস্থায় মোহাম্মদ নাসিম গত ৫ই জুন ভোরে স্ট্রোক করেন। পরে জরুরীভাবে তার অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পর চিকিৎসকরা তাকে প্রথমে ৭২ ঘণ্টার নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখেন। পরে পর্যবেক্ষণের সময় আরও ৭২ ঘন্টা বৃদ্ধি করা হয়। এরপরে অবশ্য তার করোনা টেস্ট দুইবারই নেগেটিভ আসে। গত ৬ই জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তার চিকিৎসায় একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। অবশেষে আজ ১৩ই জুন শনিবার বেলা ১১টা ১০মিনিটে তিনি মারা যান।
১৯৪৮ সালের ২রা এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলায় এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মোহাম্মদ নাসিম। তার পিতা পিতা শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। যিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে গঠিত বাংলাদেশ সরকারে অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এবং স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রীসভায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। জাতীয় চার নেতার অন্যতম এম মনসুর আলী ৩রা নভেম্বর জেলখানায়য় ঘাতকদের হাতে নিহত হন।
মোহাম্মদ নাসিমের মায়ের নাম মোসাম্মৎ আমিনা খাতুন, যিনি আমেনা মনসুর হিসেবেই পরিচিত। তিনি একজন গৃহিনী ছিলেন।
পারিবারিক জীবনে মোহাম্মদ নাসিম বিবাহিত এবং তিন সন্তানের জনক। তার স্ত্রীর নাম লায়লা আরজুমান্দ।
মোহাম্মদ নাসিম জগন্নাথ কলেজ(বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি ১৯৮৬, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালেও সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে তিনি সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ২০১৪ সালের ১২ই জানুয়ারী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এছাড়াও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
এর আগে ১৯৯৬ সালের সরকারে তিনি স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি ১৪ দলীয় মহাজোটের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য। তিনি রাজনীতির পাশাপাশি সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ঢাকাসহ নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন।