॥গোয়ালন্দ প্রতিনিধি॥ গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে ড্রেজিংয়ের কারণে একের পর এক ফসলী জমি বিলীন হচ্ছে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে মানুষ ঘরে থাকলেও থেমে নেই বালু-মাটি খেকোদের দৌরাত্ম্য। এতে সাধারণ মানুষ অসহায় পড়েছে।
সরেজমিনে দৌলতদিয়া ইউনিয়নের রবিউল্লাহ বেপারীর পাড়ায় গেলে দুই বাকপ্রতিবন্ধী নুরুল ইসলাম ও আব্দুল মজিদের পরিবারসহ স্থানীয় আরো কয়েকজন কৃষক অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ীদের কারণে তাদের ফসলী জমি হারানোর করুণ কাহিনী তুলে ধরেন।
বাকপ্রতিবন্ধী দুই ভাইয়ের আহাজারীর অঙ্গভঙ্গি দেখে কিছু বোঝা না গেলেও তাদের একজনের স্ত্রী রোকেয়া বেগম বলেন, এখানকার ৫ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করে আমাদের ২টি পরিবার সারা বছর কোন রকমে চলতো। কিন্তু অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ীদের কারণে সেই জমি এখন ভেঙ্গে খালে চলে গেছে। আমরা দুর্বল বলে তাদেরকে বাধা দিয়ে ঠেকাতে পারিনি। এখন কীভাবে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে চলবো তা ভেবে পাই না।
স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব শেখ ও কুদ্দুস মাঝি নামে আরেকজন ড্রেজার ব্যবসায়ীদের মাটির ব্যবসায় সহায়তা করছে বলে অভিযোগ করে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা বলেন, গোয়ালন্দের ড্রেজার মালিক আব্দুস সালাম, সুমন, গিয়াস উদ্দিন মোল্লাসহ কয়েকজন গত ৩বছর ধরে এই এলাকায় ২টি ড্রেজার দিয়ে বালু তুলে বিক্রি করে আসছে। জমির ২/১ জন মালিককে তারা চুক্তি মোতাবেক টাকা দিলেও আশপাশের ক্ষতিগ্রস্তরা কোন টাকা পায়নি।
স্থানীয় আঃ রহিম মোল্লা, সুলতান উদ্দিন, মাছেম শেখ, আওয়াল, কাদের মোল্লা, আজাদ শেখসহ কয়েকজন বলেন, এখানকার ড্রেজিংয়ের কারণে আমাদের প্রত্যেকেরই কম-বেশী ফসলী জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। ড্রেজার মালিকদের কিছু বলতে গেলে তারা নানা ধরণের হুমকি দেয় এবং প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মাটি কাটছে বলে প্রকাশ করে। এভাবে মাটি কাটতে থাকলে আমাদের আরো অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে একাধিকবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে ড্রেজার মালিক আঃ সালাম বলেন, আমরা ওখানকার জমির মালিকদের কাছ থেকে কিনে মাটি কেটেছি। কারো জমি ধসে গেছে বলে আমার জানা নেই। কাউকে কখনো হুমকীও দেইনি। মাটি কাটার বিষয়ে প্রশাসনের কোন অনুমতি নেননি বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, ড্রেজার মেশিনটি ৩ মাস আগে সুমন নামের আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। বর্তমান বিষয়ে সে বলতে পারবে। সুমন বলেন, আমি ড্রেজার মেশিনটি কেনার পর লকডাউনের কারণে কোন মাটি কাটতে পারিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু দৌলতদিয়ার মরা পদ্মাই নয়-উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নে মিনু মেম্বারের ২টি (আতর চেয়ারম্যান বাজারের পূর্বে ব্রিজ সংলগ্ন একটি ও আরেকটি বাঁধের উত্তরে নুরাল মেম্বারের জমিতে), কাদের ফকিরের ২টি (দৌলতদিয়া ক্যানাল ঘাটের পান্নু মোল্লার বাঁশের সাঁকোর পশ্চিমে), উজানচরের এলাহীর ২টি, জিন্দার, মফি, হিরা, ইসমাইল, শহীদ, দৌলতদিয়া মরা পদ্মায় হাবিব, মজিবর, লোকমান, সালাম, মনির, লোকমান (দৌলতদিয়া ৭নং ওয়ার্ডের ওয়াহেদ ফকীরের বাড়ীর এলাকায়), আফজালের ড্রেজার দৌলতদিয়া ক্যানাল ঘাট প্রামানিক পাড়া এলাকায় অবৈধভাবে মরা পদ্মা ও এর আশপাশের এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ড্রেজিং কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল বলেন, অবৈধ ড্রেজিংয়ের কারণে ফসলী জমি হারানো মানুষের কান্না আর সহ্য করতে পারছি না। কিন্তু আমাদের কিছুই করার নেই। প্রশাসন থেকে অবৈধ ড্রেজিং বন্ধের আশ্বাস দিয়েছে। এখন সেই অপেক্ষায় আছি।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবায়েত হায়াত শিপলু বলেন, এ বিষয়ে উপজেলার সকল চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, কোথাও ড্রেজিং মেশিন চললে প্রশাসনকে জানানোর জন্য। তিনি আরো বলেন, এ পরিস্থিতিতে যদি কোন অবৈধ ড্রেজিং মেশিন চলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে নির্দেশ দিয়েছি।
এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার(ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মাটি ও বালু খেকো চক্রের বিরুদ্ধে প্রশাসন অভিযান শুরু করেছে। গতকাল সোমবার কয়েকটি স্পটে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ড্রেজার মেশিন ধ্বংস করা হয়েছে।