Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ীতে ধান কাটার নামে কৃষক লীগ নেতাদের ফটোসেশনে কৃষকের ক্ষতি॥উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্ষোভ

ছবিতে বামে গত ২৪শে এপ্রিল সকালে জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবু বককার খানের নেতৃত্বে ১০/১২ জন রাজবাড়ী সদর উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের বিলনয়াবাদ গ্রামের কৃষক ইয়ার আলীর ক্ষেতে গিয়ে এবং ডানে গত ২৬শে এপ্রিল বালিয়াকান্দি উপজেলার আশ্রয়ন প্রকল্পের কৃষক আব্দুল মমিনের ক্ষেতের ধান কাটার নামে ফটোসেশন করে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী হকের নেতৃত্বে কৃষক লীগের নেতাকর্মীরা -মাতৃকণ্ঠ।

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ করোনা ভাইরাসের কারণে শ্রমিক সংকট থাকায় হতদরিদ্র কৃষকদের ক্ষেতের ধান কেটে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ কৃষক লীগ। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে রাজবাড়ী জেলাসহ প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগের দায়িত্ব পেয়েছেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী হক।

এরই মধ্যে গত ২৪শে এপ্রিল সকালে জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবু বককার খানের নেতৃত্বে ১০/১২ জন রাজবাড়ী সদর উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের বিলনয়াবাদ গ্রামের কৃষক ইয়ার আলীর ক্ষেতে গিয়ে এবং গত ২৬শে এপ্রিল বালিয়াকান্দি উপজেলার আশ্রয়ন প্রকল্পের কৃষক আব্দুল মমিনের ক্ষেতের ধান কাটার নামে ফটোসেশন করে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী হকের নেতৃত্বে কৃষক লীগের নেতাকর্মীরা।

এ ব্যাপারে কৃষক ইয়ার আলী ও আব্দুল মমিনের ছেলের রানা অভিযোগ করে বলেন, ধান কাটার নামে শুধুমাত্র ফটোসেশন করেছেন কৃষক লীগের নেতাকর্মীরা। এ ধান কাটায় তাদের কোন উপকার তো হয়ইনি। বরং ক্ষতি হয়েছে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের বিলনয়াবাদ গ্রামের কৃষক ইয়ার আলী বলেন, ‘গত ২৪শে এপ্রিল সকালে আমি ৮জন শ্রমিক নিয়ে ক্ষেতের ধান কাটছিলাম। এ সময় কৃষক লীগের ২০/৩০ জন নেতা এসে আমাদের সকলের হাত থেকে কাঁচি কেড়ে নিয়ে ধান কাটা শুরু কওে এবং ছবি তোলে। তাদের অভিজ্ঞতা না থাকায় তারা অনেক ধানগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নষ্ট করে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে সেই ধান কুঁড়িয়ে ঘরে উঠাতেই আমার ভাড়া করা শ্রমিকদের একদিন লেগে যায়। এতে আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।’

আশ্রয়ন প্রকল্পের কৃষক আব্দুল মমিনের ছেলে রানা বলেন, ‘লকডাউন থাকার কারণে ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছিলোনা। তারপরও অনেক কষ্টে ৮জন শ্রমিক জোগাড় করে গত ২৬শে এপ্রিল সকালে আমাদের বর্গা অংশের ৫৫শতাংশ জমিতে ধান কাটা শুরু করি। এমন সময় রাজবাড়ীসহ বালিয়াকান্দি উপজেলার কৃষকলীগের নেতারা আমাদের ৮জন শ্রমিককে বসিয়ে রেখে তারা ধান কাটা শুরু করে। তবে অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে আমারদের বেশ ক্ষতি হয়েছে। তাদের ধান কাটার সময় অনেক ধান মাটিতে পড়ে গিয়েছে। যেগুলো পরে আবার আমাদের শ্রমিক দিয়ে কুড়িয়ে ঘরে নিতে হয়েছে।’

ধান কাটার বিষয়ে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী হক বলেন, ‘রাজবাড়ী জেলার ৪২টি ইউনিয়নে আমাদের কৃষক লীগের নেত্রীবৃন্দকে অবহিত করা রয়েছে। যদি কোন কৃষক ধান কাটতে না পারে তবে আমাদের কৃষক লীগের নেত্রীবৃন্দকে অবহিত করা হলে ধান কেটে কৃষকের বাড়ীতে পৌঁছে দেওয়া হবে। ধান নষ্টের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন-আমাদের কর্মকান্ডে কৃষকরা সন্তুষ্ট হয়েছেন।’

এদিকে কৃষক লীগের নেতাদের ধান কাটার নামে ফটোসেশন করে কৃষকদের ক্ষতি করার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চলছে নানা ক্ষোভ ও সমালোচনা।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক বিশ্বাস আজ ২৮শে এপ্রিল সন্ধায় তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন- রাজবাড়ী সদর উপজেলায় কৃষক লীগের পক্ষ হতে মূলঘরে একজন কৃষকের অনুমতি ছাড়াই ক্ষেতে যেয়ে ধান কাটার ফটোসেশন করে তার ৮জন রাখালের হাত থেকে কাস্তে কেড়ে নিয়ে একটা মহড়া করে বেশ পরিমাণ ধান নষ্ট করেছেন। আপনারা কারো প্রয়োজন ছাড়া, অনুমতি ছাড়া এ ধরণের কাজ করতে পারেন না। এরপরে অবৈধভাবে কারো জমিতে এভাবে প্রবেশ করবেন না। ধান কাটার বিষয়ে কোন কৃষক যদি উপজেলা কৃষি অফিসারের নিকট লিখিত আবেদন করেন তাহলে আপনাদের জানান হবে। তখন এসে ধান কেটে দিয়ে যাবেন। আজ কৃষকের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা সমঝোতাপূর্বক মিমাংসা নেতৃবৃন্দ করবেন মর্মে আমি আপনাদের অনুরোধ করছি। আমি কৃষক ভাইয়ের আর্তনাদ শুনেছি। মানবিক দিকটা আপনারা বিবেচনা করবেন আশারাখি।