॥স্টাফ রিপোর্টার॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৬ই এপ্রিল সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা বিভাগের বিভাগের নয়টি জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সিভিল সার্জনসহ চিকিৎসক, সশস্ত্র বাহিনী এবং আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সর্বশেষ করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেন।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের ওই মতবিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জেলায় সরকারী ত্রাণ বিতরণের বিষয় তুলে ধরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার ও পৌর মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী।
জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম তার বক্তব্যে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যাপ্ত ত্রাণ রাজবাড়ীতে সরবরাহ করার জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এবং আপনি যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন করোনার কারণে বিভিন্ন পেশার যারা কর্মহীন হয়েছেন তাদেরকে আইডেন্টিফাই করে আমরা সেই ত্রাণ বিতরণ করছি।
পৌর মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমি আপনার নির্দেশনা অনুযায়ী রাজবাড়ীর বিভিন্ন শ্রেণীপেশার অসহায় মানুষের তালিকা তৈরি করেছি। আমাদের জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাকে ৩৫ টন ভিজিএফ চাল প্রদান করেছেন। আমি সেই চাল দুঃস্থদের মধ্যে এবং বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের মধ্যে বিতরণ করেছি এবং বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার তার বক্তব্যে বলেন, জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ২০ লক্ষ টাকার সরকার অনুমোদন দিয়েছেন। আপনার মুখ উজ্জল রাখার জন্য আমি যথাযথভাবে কাজ করে যাচ্ছি। জেলা প্রশাসকের সাথে সমন্বয় করে আমি তারাতারিই ২০ লক্ষ টাকার খাদ্য বিতরণ করবো।
এদিকে ওই ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরকারী ত্রাণ বিতরণের বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে তা মিথ্যা বলে দাবী করে ক্ষোভ প্রকাশ করে গত ১৭ই এপ্রিল নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক বিশ্বাস।
স্ট্যাটাসে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট ইমদাদুল হক বিশ্বাস লিখেছেন, রাজবাড়ী জেলার করোনা ভাইরাস ও ত্রাণ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভিডিও কনফারেন্সে সকলেই বললেন আমরা মিলে মিশে কাজ করছি, পর্যাপ্ত সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। আমার কথা পরিস্কার। আমরা জনপ্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলার সময় কোন পরিসংখ্যান আপনাদের কাছে ছিলো কিনা? কি করে বললেন সবার খাদ্য দেওয়া হচ্ছে। যেদিন কনফারেন্স ঐদিন পর্যন্ত সদর উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়নের মাধ্যমে ২৮০০ লোকের খাদ্য ১০ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি ডাল দেওয়া হয়েছে। মানুষ প্রায় ২লক্ষ। পৌরসভায় সেদিন পর্যন্ত তেমন কোন সাহায্য মাঠ পর্যায়ে পৌঁছায় নাই। তবে শুনেছি পৌরসভায় ৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ হবে। তাহলে ৩৫০০ লোকের ব্যবস্থা হবে, যা চাহিদার তুলনায় কম। আমিতো অন্ধকারে আছি। উপজেলায় কি বরাদ্দ ডিসি সাহেব দিচ্ছেন আমাকে কোন অনুলিপি দিচ্ছেন না। কনফারেন্সে ডাকলেন না। আমিতো নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান, আমি জেলা দুর্যোগ কমিটির সদস্য, উপজেলা দুর্যোগ কমিটির সভাপতি। নিঃসন্দেহে এই কনফারেন্সে আমার উপস্থিত থাকবার কথা। দেশের এই দুঃসময়ে আমি উপযাচক হয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নে জীবনের মায়া উপেক্ষা করে কাজ করে যাচ্ছি। সব এলাকার মানুষের খোঁজ খবর নিচ্ছি। উপজেলার তহবিল হতে পিপিই, মাক্স, সাবান ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি নিয়ে বড়বাজার বা হাটে ওয়াস প্রোগ্রাম করেছি। এ সকল কাজে আমি ও ইউএনও সাহেব একসাথে কাজ করেছি। তবে একথা ঠিক আমি এই কনফারেন্সে উপস্থিত থাকলে সঠিক তথ্যটা তুলে ধরতাম। মিথ্যচার করে জনগনকে ঠকাতামনা। আমাদের জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের গোছানো তথ্যবহুল বক্তব্য ভালো লেগেছে। তবে কাজী কেরামত আলি এমপি সাহেবের নামটা নিলে আরও ভালো হতো। আমার দাবী ডিসি সাহেব খোলসা করে রিলিফ সংক্রান্ত বিষয়টি রাজবাড়ীবাসীকে ব্রিফিং দিবেন। কিংবা তথ্যগুলো জনস্বার্থে প্রকাশ করবেন। আমি আমাদের নেত্রী গণতন্ত্রের মানসকন্যা আমাদের সরকার প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন করছি, রাজবাড়ীবাসীর দিকে তাকিয়ে আপনি আরও সাহায্য পাঠাবেন।
সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট ইমদাদুল হক বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, রাজবাড়ী সদর উপজেলায় করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে কর্মহীন ও হতদরিদ্রর সংখ্যা বেড়েছে। গড়ে প্রতিটি ইউনিয়নে কমপক্ষে ৪হাজার দরিদ্র মানুষ আছে। আমরা জরিপ করে পেয়েছি। দরিদ্রদের তালিকা করা হচ্ছে। আমার নির্বাচনী এলাকার ১৪টি ইউনিয়ন প্রায় ৬০হাজার অতিদরিদ্র মানুষ রয়েছে। অথচ গত ১৬ই এপ্রিল পর্যন্ত সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মোট ২হাজার ৮শত দরিদ্র মানুষকে সরকারী ত্রাণ দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, উপজেলার সর্বত্র দরিদ্র ও কর্মহীন মানুষের হাহাকার শুরু হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নের প্রয়োজন অনুযায়ী জরুরী ভিত্তিতে সরকারী ত্রাণ পৌছানোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে দাবী জানান।