Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

বাংলাদেশে করোনার বিস্তার রোধে সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ

॥বাসস, ঢাকা॥ করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকার সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয়সহ সকল প্রকার জনসমাগম সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
মসজিদ, ধর্মীয় বিভিন্ন স্থাপনা যেমন- মন্দির এবং প্যাগোডা এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। তবে, জ্বর, সর্দি এবং ফ্লুতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশনা অনুসরণ করে ঘরে বসে নামাজ পড়তে বলা হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসনকেও গত ১মাস বা ১৫দিনের মধ্যে বিদেশ থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে এবং তাদের বাড়িতে এবং অন্যকোন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১৪দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন(পৃথকীকরণ) নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে গত ৩মাসে বিদেশ থেকে দেশে ফেরত আসা ব্যক্তিদের একটি তালিকা সরকার বিভিন্ন জেলাগুলোতে পাঠিয়েছে।
প্রয়োজনে তিন মাস আগে বিদেশ থেকে দেশে ফেরত আসাদের চলাফেরা পর্যবেক্ষণ করার জন্যও স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরকারের এই নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিচারের সম্মুখীন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিদেশ থেকে আগতদের প্রাথমিকভাবে যোগাযোগকারীদেরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে এবং করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম যেন না বাড়ে সেজন্য নজরদারি করতে বলা হয়েছে। কেননা দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
বৈঠকে ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটি, মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি এবং শিক্ষকদের সম্পৃক্ত করে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে নিজেদের রক্ষায় আরো কি ব্যবস্থা নেয়া যায় সে সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার প্রচারণাও জোরদারের নির্দেশ প্রদান করা হয়।
গতকাল ১৯শে মার্চ বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এ সংক্রান্ত ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন এবং সরকারের নির্দেশনাবলী তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে করোনা ভাইরাস নিয়ে করণীয় বিষয়ে এই ভিডিও কনফারেন্সটি অনুষ্ঠিত হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং সচিববৃন্দ সচিবালয় থেকে এই ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন।
বিভাগীয় কমিশনারগণ, জেলা প্রশাসকবৃন্দ, বিভিন্ন রেঞ্জের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক(ডিআইজি), পুলিশ সুপারবৃন্দও সরকারী কর্মকর্তারা নিজ নিজ কার্যালয় থেকে এই ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন।

মন্ত্রী পরিষদ সচিব স্থানীয় প্রশাসনকে দন্ড বিধির ২৬৯ ধারা অনুযায়ী হোম কোয়ারেন্টাইন বিধি ভঙ্গ কারীদের শাস্তি দেয়ার নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, দন্ড বিধির ২৬৯ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ বেআইনিভাবে বা অবহেলা করে এমন কোন কাজ করে যা সে জানে কিংবা বিশ্বাস করে যে, এরফলে কোন রোগের সংক্রমণ জীবনের জন্য বিপজ্জনকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে তাকে কারাদন্ডে দন্ডিত করা হবে। এ দন্ডের মেয়াদ ছয়মাস হাজতবাস বা জরিমানা কিংবা উভয়ই হতে পারে।
মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশসহ সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষকে প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল মাদারীপুর, শরিয়তপুর, ঝিনাদহ, সিলেট ও মাগুরা অঞ্চলে পর্যবেক্ষণ জোরদার করতে নির্দেশ দেন।
তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের নাম ও ঠিকানা সংগ্রহের পাশাপাশি পুলিশকে সন্দেহজনক করোনাভাইরাসে আক্রান্তকারী ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিকভাবে আলাদা করারও নির্দেশ দেন।
গণপরিবহনে চলাচল সম্পর্কে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারের সিদ্ধান্ত হচ্ছে গণপরিবহন বন্ধ হবেনা। যে সকল ব্যক্তির জ্বর, কাশি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা আছে তারদের গণপরিবহন ব্যবহার না করা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
এমনকি পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে যাদের এ ধরনের লক্ষন দেখা দেবে তাদের পরিবহনের কাজ থেকে বিরত থাকারও পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি অন্যান্য যে নির্দেশনাগুলো দেন তার মধ্যে রয়েছে- বিমানবন্দরগুলোর পাশাপাশি স্থল বন্দরের উপড় নজরদারী করা, করোনাভাইরাস রোগীদের নাম প্রকাশ না করার নীতি অনুসরণ করতে, যাতে তারা সামাজিক নিগ্রহের শিকার না হয়।
মুখ্য সচিব বলেন, জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের (এনইসি) বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী পৃথক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান।
প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি জাতির সঙ্গে আছি। আমার জন্য আলাদা কোন কিছু করার প্রয়োজন নেই। আমি সবার সাথে আছি।’
দেশে কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ার পর তার সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ উত্থাপিত হলে তিনি বলেন, ‘আমাকে আলাদাভাবে বিচার করার সুযোগ নেই।’
কায়কাউস বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে স্থায়ী নির্দেশনা ও স্থায়ী নির্দেশিকা জারী করা হয়েছে।

তিনি একইসাথে করোনাভাইরাস সম্পর্কে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা’র (ডব্লিওএইচও) স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নির্দেশিকা বিতরণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সচিব বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি জাতীয় কমিটি ইতোমধ্যে এ লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে। কমিটি সারা দেশে উপজেলা পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে।
কায়কাউস স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে করোনাভাইরাস টেস্টের জন্য কিট এবং মাস্ক, হেড কভার এবং গ্লাভসসহ কর্মীদের সুরক্ষা সরঞ্জামগুলো সারা দেশের হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে প্রেরণ করতে নির্দেশ দেন।
তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে কোনও প্রয়োজনে পিএমওতে বিগ্রেডিয়ার জেনারেলের তদারকিতে পরিচালিত সার্বক্ষণিক মনিটরিং সেলটির সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
স্থানীয় প্রশাসনকে যে মোবাইল ও ফোন নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে, তা হচ্ছে-০১৭৬৯০১০৯৮৬, টেলিফোন নং ০২-৫৫০২৯৫৫০ এবং ০২-৫৮১৫৩০২২, ফ্যাক্স নম্বর ০২-৯১০২৪৮৯ এবং ইমেল pmomonitoring cell@gmail.com.
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তারা ইতোমধ্যে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সব দেশের অন-এরাইভাল ভিসা নিষিদ্ধ করেছেন, এই সময় আরো বাড়ানো হতে পারে।
বিদেশের বাংলাদেশী মিশনগুলো এই মুহুর্তে দেশে না ফেরার জন্য প্রবাসীদের নিরুৎসাহিত করতে কাজ করছে।
তথ্য সচিব কামরুন নাহার বলেন, চীনের করোনাভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকেই তথ্য মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মিডিয়ায় দুটি ভিডিও ক্লিপ এবং এ সংক্রান্ত আলোচনা সম্প্রচার করে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বলেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁরা বিদেশ থেকে ফিরে আসা ব্যক্তি যাদের কোয়ারান্টাইনে থাকার প্রয়োজন জনগণ যাতে সহজেই তাদের শনাক্ত করতে পারেন সেজন্য অমোচনীয় কালির সিল ব্যবহারের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছেন।