Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

গোয়ালন্দে পানি উন্নয়ন বোর্ডে অপরিকল্পিত খননে খালের পেটে এলজিইডির পাকা রাস্তা

॥এম.এইচ আক্কাস॥ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিতভাবে খননের ফলে খালের পেটে চলে গেছে গোয়ালন্দ উপজেলার চর আন্ধারমানিক এলাকার এলজিইডি’র পাকা সড়কের প্রায় ২শত মিটার এলাকা।
গত তিন মাস ধরে ওই সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। দ্রুত মেরামত করা না হলে যে কোন মুহুর্তে পায়ে চলার মতো পথটুকুও বন্ধ হয়ে যাবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে গোয়ালন্দের ছোট ভাকলা ইউনিয়নের চর আন্ধারমানিক রেল লাইন-চর কৃষ্ণপুর হয়ে সেলিম ডাক্তারের বাড়ী পর্যন্ত চেইনেজ ১০০০ মিটার থেকে ১৬৩৫ মিটার পর্যন্ত পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়। ৪০ লাখ টাকা ব্যায়ে সড়কের পাকা কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ করার পর গত বছর ১২ই মে পোস্টওয়ার্ক গ্রহণ পূর্বক চূড়ান্ত বিল প্রেরণ করে। রাস্তার দুই পাশে মাটির কাজ শেষে দৃশ্যমান সুন্দর করে সম্পন্ন করা হয়। রাস্তার চেঃ ১৩৫০ থেকে ১৫৫০ মিটার পর্যন্ত অংশের বাম পাশর্^ দিয়ে পদ্মা নদীর শাখা খাল প্রবাহিত হয়েছে। গত বর্ষার আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই শাখা নদীতে গভীর করে খাল পুনঃখনন করে। অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা ঘেঁষে খাল পুনঃ খনন করায় ভরা বর্ষায় খালটি দিয়ে পানির তীব্র স্রোত বয়ে যায়। এতে রাস্তার ১৩৫০ থেকে ১৫৫০ মিটার অংশের বাম পাশের পেভমেন্টসহ ভেঙ্গে নীচে ধসে পড়ে। পরবর্তীতে গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকশৌলী বজলুর রহমান খান চলতি বছরের ১৬ই জানুয়ারী নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবগত করে পত্র দেন। নির্বাহী প্রকৌশলী এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গত ২১শে জানুয়ারী রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে পত্র দেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, এলজিইডির কার্পেটিংয়ের রাস্তাটি ছোট ভাকলা ইউনিয়নের মাহমুদপুর, চরকৃষ্ণপট্টি ও চরআন্ধারমানিক ৩টি মৌজার উপর দিয়ে বয়ে গেছে। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদীর শাখা খাল। রাস্তাটির বয়স এক বছর পার না হতেই পাশের খালে ধসে গেছে। রাস্তার ২০০ মিটারের বেশী অংশ খালে ধসে গেছে। রাস্তার পাশে রোপন করা বেশ কিছু গাছ মাটিসহ ধসে গেছে। খালের বিপরীত পাশে স্থানীয়দের চাষাবাদকৃত জমি। সে জমি খালের ভিতর ধসে পড়েছে।
মাহমুদপুর এলাকার কৃষক আবজাল শেখ (৫০) বলেন, গত বন্যার কিছুদিন আগে রাস্তার পাশের খাল খনন করা হয়। প্রায় ৭ ফুট করে গভীর ও ৩০ ফুট করে প্রশস্ত করায় খালে বর্ষায় পানির প্রবাহ বেড়ে যায়। বর্ষার পানি কমতে শুরু করায় ধীরে ধীরে পাকা রাস্তার পাড় ধসে পড়তে থাকে। এভাবে খালের দুই পাড়ের মাটি ধসে পড়ায় রাস্তা ভেঙ্গে যেতে থাকে।
স্থানীয় বরাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী নাইস আক্তার জানায়, সে প্রতিদিন বাইসাইকেল নিয়ে এ রাস্তায় দিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করে। আগে রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিন ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা, মাহেন্দ্র, রিক্সা, ভ্যানসহ ছোট গাড়ী চলাচল করতো। স্কুল-কলেজের অনেক শিক্ষার্থী তিন চাকার গাড়ীগুলোতে আসা-যাওয়া করতো। পাকা রাস্তার অর্ধেকের বেশী অংশ খালে ধসে পড়ায় এখন তিন চাকার গাড়ী চলাচল করতে পারছে না না। বাইসাইকেল নিয়ে অনেক কষ্টে ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন ২/৩ কিলোমিটার যাতায়াত করতে হয়।
রাস্তার পাশেই সরকারীভাবে পাওয়া ঘরে বসবাসকারী বিধবা বৃদ্ধা ছামিরুন নেছা(৭০) বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় স্বামী গোলাগুলিতে মারা যায়। এরপর চার মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিন যাপন করেছেন। মানুষের কাছ থেকে ধার-কর্জ করে নিজের সহায়-সম্বল বিক্রি করে মেয়েদের বিয়ে দেন। থাকার জায়গা না থাকায় গত বছর সরকারীভাবে ঘর বরাদ্দ পান। রাস্তার বেশীর ভাগ ভাঙনে খালে যাওয়ায় নিজের ঘর রক্ষা করা নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন। তাদের মতো স্থানীয় গৌড় কীর্তনিয়াসহ কয়েকজন স্কুল শিক্ষার্থী অপরিকল্পিতভাবে খান খননের ফলে পাকা কার্পেটিং করা সড়ক খালে ধসে পড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে এলজিইডির গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকৌশলী বজলুর রহমান খান বলেন, গত বর্ষার আগে পাউবোর খাল খননের পর সড়কের পাশ ধসে পড়তে থাকে। ধীরে ধীরে মাটিসহ পাকা কার্পেটিং সড়ক ধসে এমনই ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়েছে। ফলে গত তিন-চার মাস ধরে তিন চাকার গাড়ী চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর মাধ্যমে একাধিকবার পাউবোকে অবগত করেছি। দ্রুত মেরামত করা সম্ভব না হলে রাস্তাটি দিয়ে পথচারীদেরও চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবায়েত হায়াত শিপলু বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের খাল খনন প্রকল্পের আওতায় পাউবো খাল পুনঃখনন করেছে। এলজিইডির প্রকৌশলীর মাধ্যমে পাউবোকে অবগত করে প্রাথমিকভাবে মাটি ফেলে চলাচলের ব্যবস্থা ঠিক রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজবাড়ীর উপ-সহকারী প্রকৌশলী আরিফ সরকার বলেন, রাস্তার অনেকটা খালের জায়গার মধ্যে। এ বিষয়ে বিতর্কে না জড়িয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট খাল পুনঃখনন প্রকল্পের ঠিকাদারের সাথে আলাপ করে রাস্তার ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পাইলিং করে মেরামতের ব্যবস্থা নিচ্ছি। খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে।