Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ী জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি ও করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত সভা

॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ১৫ই মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা ও করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক ও কমিটি সভাপতি দিলসাদ বেগমের সভাপতিত্বে সভায় সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ নুরুল ইসলাম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক মোঃ বাকাহীদ হোসেন, রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ, কালুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলিউজ্জামান চৌধুরী টিটো, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোহাম্মদ আশেক হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর) মোঃ ফজলুল করিম, গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই’র উপ-পরিচালক মোঃ শরিফুল ইসলাম, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী বিমল কুমার দাস, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কে.বি.এম সাদ্দাম হোসেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোপাল কৃষ্ণ দাস, জেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ হাবিবুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ এবং বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, বর্তমানে বিশ্বের ১২০টিরও বেশী দেশের বহু মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। ইতিমধ্যে অনেকে মারা গেছেন, অনেকে হাসপাতালে দিন কাটাচ্ছেন। সে কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ভাইরাসকে বিশ্ব মহামারী হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত ৫জন শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩জন সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরে গেছেন এবং দু’জনকে এখনও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারা সকলেই বিদেশ থেকে এসেছেন। বর্তমানে অন্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে আক্রান্তের সংখ্যা কম থাকলেও আমাদের দেশও করোনা ভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েছে। সরকার এই করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে জনসাধারণকে সচেতন করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, সদর হাসপাতালসহ সকল উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ৫টি করে বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাতে কেউ আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে তার চিকিৎসা শুরু করা যায়। এছাড়া জেলা পর্যায়ে যদি রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় সে জন্য প্রাথমিকভাবে আরো ১শত রোগী রাখার মতো অগ্রীম ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে ১২ জন বিদেশ থেকে দেশে এসেছেন তাদেরকে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য বলা হয়েছে। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার সময় তারা বাইরে যাচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে খোঁজ রাখা হচ্ছে। কিন্তু অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়, তাদের মধ্যে কয়েকজন এই বিষয়গুলো না মেনে ১৪দিনের আগেই বাইরে বের হয়ে বিভিন্ন জায়গায় চলাফেরা করছে। এ অবস্থায় যারা কোয়ারেন্টাইনে থাকার বাধ্যবাধকতা মানছে না, ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া গোপন করছে বা তার পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী, ঐ এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ তার সাথে সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি গোপন করে প্রশাসনকে তথ্য দেয়া থেকে বিরত থেকেছে, বিদেশ ফেরত যাত্রী যে গাড়ীতে করে এলাকায় এসেছে সেই গাড়ীর চালক-মালিক সেই তথ্য জানায়নি এমন উদাসীন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জনস্বার্থে জরুরী অবস্থা মোকাবেলা এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি হ্রাসকল্পে সংক্রামক রোগ(প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন-২০১৮ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে ওই সকল ব্যক্তির বিরুদ্ধে জনস্বার্থে তিন মাসের জেল ও জরিমানা করার জন্য সরকার ইতিমধ্যে নির্দেশনা প্রদান করেছে।
তিনি আরো বলেন, জেলার সকল ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ৩টি পৌরসভার মেয়রদের সদস্য ও কাউন্সিলদের নিয়ে বিশেষ সভার মাধ্যমে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রদানসহ তাদের ওয়ার্ডে বিদেশ ফেরত কোন প্রবাসী বিদেশ থেকে এসেছে কিনা, তার আসার বিষয়ে প্রশাসন জানে কিনা, সে কতদিন এসেছে, বিদেশ থেকে আসার ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনের সময় অতিবাহিত হয়েছে কিনা সে বিষয়ে ঁেখাজ-খবর নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনকে জানানোর অনুরোধ করা হচ্ছে।
এছাড়াও ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক জনসচেতনতা গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হচ্ছে। জেলায় যে সমস্ত সরকারী-বেসরকারী বিভাগ, এনজিওসহ যে সকল অফিস আছে সে সমস্ত বিভাগের প্রধানদের তাদের আধীনস্ত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সরকার প্রদত্ত স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা সম্পর্কে সচেতন করার পরামর্শ প্রদান করা হলো।
জেলা প্রশাসক বলেন, সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে আমাদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীসহ যারা এ সচেতনতার বিষয়গুলো সম্পর্কে জানে না তাদেরকে সচেতন করা যায় তবেই আমরা রাজবাড়ী জেলাকে এই ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখতে পারবো। সেই লক্ষ্যে আমাদের নিজেরদেরসহ সকলকে এর মুক্ত রাখতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, মহান স্বাধীনতা দিবস, মুজিববর্ষের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যে সমস্ত দিবসগুলো রয়েছে সেগুলো সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী পালন করা হবে। এছাড়াও জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারী বিভাগের উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজের অগ্রগতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
উল্লেখ্য, সভার পূর্বে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাথে জমি আছে ঘর নাই প্রকল্পের তালিকা প্রদান ও প্রকল্প সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান, এমপি’র সভাপতিত্বে ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসসহ বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকগণ অংগ্রহণ করেন।