Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ীর উজানচর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ম্যানহোলে মিললো বিপুল পরিমাণ সরকারী ওষুধ

॥এম.এইচ আক্কাছ॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ম্যানহোলে ভিতর থেকে বিনামূল্যে বিতরণের বিপুল পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ সরকারী ওষুধ পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধগুলো উদ্ধার হওয়ার পর স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দাবী, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা গরীব মানুষকে ওষুধ দেয়া হয় না-অথচ হাসপাতালের ম্যানহোলে ফেলে দেয়া হয়। উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা লোকজন ওষুধ ব্যবসায়ীদের সাথে মিলে এই চরম গর্হিত কাজ করে আসছে।
গতকাল ১০ই ফেব্রুয়ারী সকালে সরেজমিনে গিয়ে উজানচর ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পিছনের ম্যানহোলে বিভিন্ন ধরনের সরকারী বিনামূল্যের বিপুল পরিমাণ ওষুধ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা হাসিবুল হাসান রিপন, আলাউদ্দিন শেখ আলাল, মুরাদ মৃধাসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার মোকলেছুর রহমান এখানে চিকিৎসা নিতে আসা বেশীর ভাগ দরিদ্র রোগীকে সরকারী ওষুধ না দিয়ে প্রেসক্রিপশনকৃত ওষুধ বাজার থেকে কিনে নিতে বলে। সরকারী ওষুধের কথা বললে সে রোগীদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া টাকার বিনিময়ে ওষুধ দিয়ে থাকে। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ফেলে দেয়ার বিষয়টি এলাকাবাসীর নজরে আসলে মোকলেছুর রহমান ওই ম্যানহোলের ভেতর থেকে আরো কিছু ওষুধ অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছে বলে তারা দাবী করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সালাউদ্দিন মৃধা জানান, সরকারী বিনামূল্যে বিতরণের ওষুধগুলো মোকলেছুর রহমান দরিদ্র রোগীদের না দিয়ে বাইরে বিক্রি করে। তার নিজেরও রাজবাড়ী সদর উপজেলার লালগোলা বাজারে দেশ ফার্মা নামে একটি ওষুধের দোকান রয়েছে। সে প্রতিদিনই কিছু কিছু করে ওষুধ নিয়ে যায়। দরিদ্র রোগীদের বাইরের থেকে কিনতে বাধ্য করে সরকারী ওষুধগুলো ফেলে দেয়। কিছুদিন আগেও এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাশে দুই বস্তা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়া গিয়েছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা জবেদা বেগম(৬০) জানান, তিনি বিভিন্ন সময় শারীরিক অসুস্থ্যতা নিয়ে এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এসেছেন। কোনদিনও তাকে ওষুধ দেয়া হয়নি। মোকলেছুর রহমান তাকে প্রেসক্রিপশন দিয়ে বাজার থেকে ওষুধ কিনে নিতে বলেছে। সরকারী ওষুধের কথা বললে তাকে অপমানজনক কথা শুনতে হয়েছে।
অভিযুক্ত মোকলেছুর রহমান বলেন, সরকার থেকে সব ধরনের ওষুধ সরবরাহ করা হয় না। যেগুলোর সরবরাহ থাকে না সেই ওষুধগুলোই কেবলমাত্র বাজার থেকে কিনতে বলা হয়। নিজের ওষুধের দোকান থাকার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমার দোকানে কোন সরকারী ওষুধ বিক্রি করা হয় না। ম্যানহোলের মধ্যে কীভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ এলো এ ব্যাপারে আমার জানা নেই।
উজানচর ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডাঃ আফরোজা সুলতানা কয়েকদিন আগে এখানে যোগদান করেছেন জানিয়ে বলেন, পরিত্যাক্ত ম্যানহোলের মধ্য থেকে উদ্ধার হওয়া মেয়াদোত্তীর্ণ সব ওষুধ স্বাস্থ্য বিভাগের নয়। কিছু ওষুধ বিদেশী এবং কিছু ওষুধ পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগের।
এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আসিফ মাহমুদ বলেন, বিষয়টি জানার পর অভিযুক্ত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার মোকলেছুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। নোটিশের জবাব পেলে এবং কোন প্রকার অনিয়ম হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবায়েত হায়াত শিপলু বলেন, অভিযোগটি গুরুতর হওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি করার নির্দেশ দিয়েছি। তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে তিনি কাজ করবেন।