॥আশিকুর রহমান॥ রেজিস্টার্ড চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে চলতি বছরের ২৫শে এপ্রিল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এরপর ৩০শে মে দেশের সকল জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনদের প্রতি এ বিষয়ে পরিপত্র জারি করেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এতদ্বারা ফার্মেসী মালিকদের জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে যে, ‘রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ব্যাতিরেকে কোন ফার্মেসী হতে কোন ধরণের অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি ও বিতরণ করা যাবে না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মালিকদের কঠোরভাবে অনুসরণ করার জন্য বলা হলো।’
কিন্তু হাইকোর্ট ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এই নিষেধাজ্ঞার কোন তোয়াক্কাই করছে না রাজবাড়ী সদর উপজেলার সুলতানপুর চৌরাস্তা মোড়ের আব্দুল্লাহ্ ফার্মেসীর মালিক মিলন সেখ।
তিনি নিজেকে পল্লী চিকিৎসক দাবী করে নিজের ও দোকানের নামে ব্যবস্থাপত্র ও সীল বানিয়ে প্রতিদিন শিশুসহ বহু রোগীর হাতে তুলে দিচ্ছে উচ্চ ক্ষমতার অ্যান্টিবায়োটিকসহ নানা ধরনের ওষুধ।
সুলতানপুর গ্রামের রাজিয়া বেগম(৪০) নামে ভুক্তভোগী এক নারী বলেন, ‘১৫ দিন আগে ঘাস কাটতে গিয়ে কাঁচিতে আমার হাত কেটে যায়। এর ৩/৪ দিন পর আমি চৌরাস্তা মোড়ের আব্দুল্লাহ্ ফার্মেসীর মালিক মিলনের কাছে চিকিৎসার জন্য যাই। এরপর মিলন অনেকগুলো ঔষধ দিয়ে বলেন ঔষধগুলো খেলে আমার মাথা ঘুরাসহ দুর্বল লাগতে পারে। এ জন্য যেন আমি নিয়মিত ফল-মূল ও দুধ-ডিম খাওয়া চালিয়ে যাই।’ ঔষধগুলো দেখতে চাইলে রাজিয়া বেগম একটি ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) ও ঔষধের খালি প্যাকেট বের করে দেখান। ব্যবস্থাপত্রে দেখা যায়, মিলন সেক রাজিয়া বেগমকে ফ্লুক্সিক্যাপ নামের ৫০০ মিলিগ্রাম পাওয়ারের ক্যাপসুল দিয়েছেন দিনে ৪টি করে, যা এক সপ্তাহে ২৮টি খেতে বলেছেন। এর পাশাপাশি আরও কয়েকটি ঔষধও দেওয়া হয়েছে।
রাজিয়া বেগম আরও বলেন, ‘আমি লেখাপড়া জানি না। কাটা নখ নিয়ে মিলনের দোকানে গিয়েছিলাম চিকিৎসা নিতে। মিলন আমার কাছ থেকে ৪০০ টাকা নিয়ে ঔষধগুলো দেয়। সবগুলো ঔষধ খাওয়ার পর এখন আমার কাটা নখ সারাতো দূরের কথা, ফুলে এখন ঢোল হয়ে গেছে। সবসময় ব্যাথা করে ও পুঁজ বের হয়। ফরিদপুরে বড় ডাক্তারের কাছে যাবো।’
সুলতানপুরের গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্রামটি রাজবাড়ী জেলার একদম শেষ সীমানায় এবং প্রত্যন্ত অঞ্চল। ওই গ্রামে আর কোন ওষুধের দোকান না থাকায় খেটে খাওয়া মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে মিলন সেক নিজের বানানো প্রেসক্রিপশনে খেয়াল-খুশিমতো ওষুধ লিখে মানুষের কাছে বিক্রি করে। জেলার শেষ সীমানা হওয়ায় প্রশাসনের কোন নদরদারি না থাকায় বর্তমানে সে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ফার্মেসী মালিক মিলন সেখ বলেন, ‘রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঔষধ বিক্রি করা আমার ভুল হয়েছে। শুধু আমি একাই এমন কাজ করছি তাতো না। হাজার হাজার ফার্মেসী দোকানী এমন কাজ করে চলেছে। আমার আর এমন ভুল হবে না।’
অবাধে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি ও এর ক্ষতিকর দিক নিয়ে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আরএমও) ডাঃ শাহনিমা নার্গিস বলেন, ‘রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) ছাড়া কোন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি ও বিতরণ করা অপরাধ। এছাড়া সঠিক রোগ নির্ণয় ছাড়া ডোজ মেইনটেইন না করে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার ফলে মানুষের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরী হয়ে যায়। এর কারণে পরবর্তীতে রোগীর শরীরে যদি কোন অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় তখন ওই অ্যান্টিবায়োটিক আর তার শরীরে কাজ করে না এবং তার অসুখও ভালো হয় না। একটার পর একটা অ্যান্টিবায়োটিক চেঞ্জ করার পরও শরীর সুস্থ হয় না। এটা একজন রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।’