Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

ইতিবাচক সিদ্ধান্ত প্রাথমিকে

প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক শিক্ষা আপাতত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত হচ্ছে না। আগের মতোই পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা এবং অষ্টম শ্রেণিতে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা চলতে থাকবে। চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করার প্রস্তাব দিয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতিতেও বলা হয়েছে, ‘প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে বৃদ্ধি করে আট বছর অর্থাৎ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। এটি বাস্তবায়নে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অবকাঠামোগত আবশ্যকতা মেটানো এবং প্রয়োজনীয়সংখ্যক উপযুক্ত শিক্ষকের ব্যবস্থা করা। ’ শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা অবকাঠামোগত সমস্যার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের দেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা অবহেলার শিকার। দেশের বেশির ভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই। যেসব রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ হয়েছে, সেগুলোর অবস্থাও খারাপ। এ ছাড়া রয়েছে মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব। দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষকের অভাব রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আধুনিক পাঠ্যক্রম বুঝে উঠতে না পারার সমস্যা। দেশে যখন প্রথমবারের মতো সৃজনশীল পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয় তখন ধারণা করা হয়েছিল, বিশ্বমানের শিক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে দেশজুড়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলেও এখনো সৃজনশীল পদ্ধতির সঙ্গে অনেক শিক্ষক খাপ খাইয়ে নিতে পারেননি। ফলে দেখা যায় পিইসি, জেএসসি পরীক্ষাসহ পাবলিক পরীক্ষায় গাইড বই থেকে হুবহু প্রশ্ন তুলে দেওয়া হয়। শ্রেণিকক্ষের পাঠদানও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গাইড বইনির্ভর। নোট-গাইড নির্ভরতা কমাতে যে সৃজনশীল পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছিল, তা এখন অনেক বেশি করে গাইডনির্ভর হয়ে পড়েছে। ফলে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের শিক্ষার মান উন্নীত করতে হলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন দরকার। প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করা হয়তো তারই একটি ধাপ। কিন্তু প্রস্তুতি সম্পূর্ণ না করে এ সিদ্ধান্ত নিলে তা হিতে বিপরীত হতো। সবার আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা উন্নীত করা হলে যে মানের শিক্ষক প্রয়োজন হবে, তারও অভাব রয়েছে। শিক্ষকদের মানোন্নয়নেও বড় পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। আর সে কারণে এখনই প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত না করার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা আমরা সময়োপযোগী বলে মনে করি। আগে অবকাঠামো তৈরি হোক, মানসম্পন্ন শিক্ষক নিশ্চিত করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন করা হোক, তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।