॥চঞ্চল সরদার॥ রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলাদীপুরে অবস্থিত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) গতকাল ১৭ই ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়।
সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করা হয়। বিকাল ৩টায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলায় বঙ্গবন্ধু কর্ণার-এর উদ্বোধন করেন অতিথিরা। এরপর অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী। রাজবাড়ী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ ফাতেমা নারগিসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান পিপিএম (বার), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) খন্দকার মুশফিকুর রহমান, রাজবাড়ী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার আকতার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এস.এম নওয়াব আলী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সভা সঞ্চালনা করেন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষক (মেকানিক্যাল) আইয়ুব আলী মন্ডল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, সাধারণ শিক্ষার মাধ্যমে দেশের বেকারত্বের সমাধান হবে না। এ জন্য কারিগরি শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কর্মমুখী শিক্ষা নীতি চালু করেছিলেন। সেখানে কথাটা (কারিগরি শিক্ষা) পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী থাকার সময় চীনে, সিঙ্গাপুর গিয়ে দেখেছি কারিগরি শিক্ষায় তারা খুবই উন্নত। যে দেশ যতো উন্নত সে দেশ কারিগরি শিক্ষায়ও ততো উন্নত। উন্নত দেশে ৭০% শিক্ষার্থীই কারিগরি শিক্ষার দিকে যায়। চীনের এতো উন্নতির কারণ তারা কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত। সে জন্য বিশ্বের সকল দেশেই এখন তাদের তৈরী পণ্য পাওয়া যায়। বিদেশে বাংলাদেশী শ্রমিকরা সবচেয়ে কম বেতনে চাকরী করে, কারণ তারা দক্ষ না বা কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত না। কারিগরি ট্রেডের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে গেলে তারা ভালো বেতনে চাকরী করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, অচিরেই রাজবাড়ীতে পূর্ণাঙ্গ একটি সরকারী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হবে। ইতিমধ্যে এর অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। এখন জায়গা খোঁঁজা হচ্ছে। জায়গা পাওয়া গেলেই নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। এখানকার যারা শিক্ষার্থী তারা লেখপড়ায় ফাঁকি দিবে না, ফাঁকি দিলে তোমরা নিজেরাই ফাঁকির মধ্যে পড়বে। আমার অনুরোধ কেউ প্রশিক্ষণ ছাড়া বিদেশে যাবেন না। প্রশিক্ষণ ছাড়া গেলে অনেক ঝামেলার মধ্যে পড়তে হয়। আমি সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলাম প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্ততঃ ২টি করে ট্রেডে কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা চালু করার জন্য। তাহলে শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষা সহজ হবে। কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করলে তাদেরকে আর চাকরীর জন্য ঘুরতে হবে না। দেশের বেকারত্ব সমস্যার সমাধান হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান পিপিএম (বার) বলেন, এখন প্রায় ১৮ কোটি মানুষ হলেও দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। অনেক কিছুই এখন বিদেশ থেকে আমদানী করতে হয় না। ডিম, মাংস এখন আর আমদানী করতে হয় না। মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশে^ ৫ম। এসব কারণে বৈশ্বিক মন্দার সময়েও বাংলাদেশের সমস্যা হয়নি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী জানেন কীভাবে দেশের উন্নয়ন করতে হয়। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেয়েছে। অনেক কিছুতেই আমরা ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে গেছি। বেকারত্বের যে সমস্যা সেটা দূর করতে হলে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব অনেক বেশী। বিদেশে আমাদের শ্রমিকরা অনেক কম বেতন পায় কারণ তারা দক্ষ না, বা কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত না। যে দেশে কারিগরি শিক্ষার হার যতো বেশী সেই দেশ ততো উন্নত। কারিগরি শিক্ষার পাশাপাশি বিদেশে গমনকারীদের ইংরেজী ভাষা জানাও জরুরী। কারিগরি শিক্ষা আর ইংরেজীতে কথা বলতে জানলে সাফল্য কেউ ঠেকাতে পারবে না।
সভাপতির বক্তব্যে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ ফাতেমা নারগিস বলেন, বিজয়ের এই মাসে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হৃদয়ে ধারণ করে আমরা সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাবো। রাজবাড়ী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ২০১৫ সালে কার্যক্রম শুরু করেছে। এখানে ২ বছর মেয়াদী ৩টা কোর্স রয়েছে। এছাড়া ৬ মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। ২ মাস মেয়াদী ইংরেজী কোর্স আছে। ১ মাস মেয়াদী হাউজ কিপিং কোর্স আছে। বিনা খরচে মোটর ড্রাইভিং ট্রেনিং এর ব্যবস্থা আছে। তিনি এসব সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদেরকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। আলোচনা সভার শেষে অতিথিগণ প্রতিযোগিতার বিভিন্ন ইভেন্টে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।