Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ীতে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপিত

॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে যথাযথ মর্যাদায় বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে।
এ উপলক্ষে গতকাল ১৬ই ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারী, বেসরকারী, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, পুলিশ লাইনস্ ে৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের শুভ সূচনা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মুখস্থ বঙ্গবন্ধু চত্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, শ্রীপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলক, লোকোসেড বধ্যভূমি, রেলগেটের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলক এবং লক্ষীকোলস্থ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ রফিক, সফিক, সাদিক ও নিউ কলোনীস্থ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আঃ আজিজ খুশির কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
জেলা প্রশাসনের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক মোঃ বাকাহীদ হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোহাম্মদ আশেক হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) খন্দকার মুশফিকুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাঈদুজ্জামান খানসহ জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও রাজবাড়ী রেলগেটের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলকে বিভিন্ন সরকারী দপ্তর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
সকাল সাড়ে ৮টায় কাজী হেদায়েত হোসেন স্টেডিয়ামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ সম্প্রচার করা হয়। ৯টায় একই স্থানে জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান পিপিএম(বার) মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর জেলা প্রশাসক মহান বিজয় দিবসের তাৎপর্যের উপর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
এরপর রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম ও পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান পিপিএম(বার) বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা অবমুক্ত করার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনের পর বীর মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি, বিএসসিসি, সরকারী শিশু পরিবার, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, রোভার স্কাউট, বয়েজ স্কাউট, গার্লস গাইড, কাবস্, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর শারীরিক কসরত ও ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হয়। কুচকাওয়াজ এবং শারীরিক কসরত ও ডিসপ্লে প্রদর্শনের পর ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অর্জনকারীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
এছাড়া কুচকাওয়াজের পর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম স্বাস্থ্য বিভাগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী উদ্বোধন করেন। দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসকের বাসভবনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগমের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিম উপস্থিত ছিলেন।
দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজবাড়ীর সাধনা সিনেমা হলে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়। বাদ যোহর সকল মসজিদে জাতির শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত এবং সুবিধামতো সময়ে বিভিন্ন মন্দির, গীর্জা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। দুপুরে হাসপাতাল, জেলখানা, এতিমখানা ও সরকারী শিশু পরিবারে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়।
বিকাল ৩টায় রাজবাড়ী অফিসার্স ও মহিলা ক্লাবে মহিলাদের অংশগ্রহণে আলোচনা অনুষ্ঠান ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।
বিকাল সাড়ে ৩টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশি রেলওয়ে ময়দানে সরকারী কর্মকর্তা/কর্মচারী বনাম বেসরকারী কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মধ্যে দাঁড়িয়াবাধা প্রতিযোগিতা এবং জেলা প্রশাসন বনাম রাজবাড়ী পৌরসভা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বনাম চেম্বার অব কমার্স ও রাজবাড়ী বাজারের ব্যবসায়ী, জেলা পুলিশ বনাম সরকারী/বেসরকারী শিক্ষক ও রাজবাড়ী প্রেসক্লাব বনাম জেলা বার এসোসিয়েশনের মধ্যে প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিযোগিতার শেষে জেলা প্রশাসক ও পৌর মেয়রের সৌজন্যে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
বিকাল ৪টায় রাজবাড়ীর বিসিক চাঁদমারীতে শ্যূটিং প্রতিযোগিতা, সন্ধ্যা ৬টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশি রেলওয়ে ময়দানে ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক আলোচনা ও সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যা ৭টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পুরস্কার বিতরণ ও মনোজ্ঞ অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনীর মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।