Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার জন্য ব্যবস্থা একমাত্র শেখ হাসিনা করেছেন —এমপি জিল্লল হাকিম

॥চঞ্চল সরদার॥ মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ১৬ই ডিসেম্বর দুপুরে জেলা প্রশাসকের সরকারী বাসভবনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিম বক্তব্য রাখেন।
জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান পিপিএম(বার), সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মাহফুজার রহমান সরকার, রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, রাজবাড়ী সরকারী কলেজের প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ ফকরুজ্জামান মুকুট, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন মন্টু, মহসিন উদ্দিন বতু, আবুল হোসেন, আব্দুল জলিল, অন্যান্যের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ আহমেদ, বাকাউল আবুল হাশেম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিম বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের ভালোভাবে সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার জন্য একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই যা কিছু করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মানের ব্যবস্থা করেছেন। বর্তমানে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে সম্মানী ভাতা ও বছরে ৫টি করে বোনাস দেয়া হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যেই এই মাসিক সম্মানী ভাতা বাড়িয়ে ১২হাজার টাকা করা হবে। তাতে করে মুক্তিযোদ্ধারা ভাতা-বোনাস মিলে মাসে গড়ে ১৫ হাজার টাকার মতো পাবেন। এই রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের দুরবস্থা দূর হয়েছে। তারা এখন ভালোই আছে।
এমপি জিল্লুল হাকিম বলেন, আমি জব্বার ভাইকে (জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার) বলেছিলাম আপনি মাঝে মাঝে জেলা পরিষদের তহবিল থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের যে ১ হাজার-১২শত টাকা করে দেন তা আর দিয়েন না। তার পরিবর্তে যেসব মুক্তিযোদ্ধার প্রকৃতই প্রয়োজন, চিকিৎসার প্রয়োজন, মেয়ে বিয়ে দেয়ার প্রয়োজন তাদেরকে এককালীন বেশী টাকা করে দেন। তাহলে তারা উপকৃত হবেন। প্রধানমন্ত্রী যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি মাসে অনেক টাকা দিচ্ছেন, বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন, কেবিনের ব্যবস্থা করেছেন, ওষুধের ব্যবস্থা করেছে, বাড়ী করে দিচ্ছেন-সেখানে এভাবে সামান্য কিছু টাকা দেয়া বন্ধ করার দরকার। আপনারা মুক্তিযোদ্ধাদের আর ভিক্ষুক বানাবেন না। অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছে যারা ৫শত টাকা নিতে ৬শত টাকা খরচ করে আসছে। আমি বলবো এটা মানসিক বিকৃতি।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির কারণে এখন অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য ধর্না দিয়ে বসে আছে। যারা এই ধর্না দেয় তাদের মনে কী একটুও কষ্ট লাগে না, একটু অনুশোচনা হয় না। যদি একজন অমুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাধীস্থ হয় তখন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা কষ্ট পায়। আমাকে অনেকেই বলেন যারা মুক্তিযোদ্ধা না তাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাধিত হচ্ছে-এটা আপনারা দেখেন না। এই বিষয়গুলো আমাদেরকে লজ্জা দেয়। আজকে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে, এটা খুব ভালো কথা। কিন্তু এ ব্যাপারে আমার একটা কথা আছে। মজনু রাজাকারের নাম আপনারা অনেকেই নাম শুনেছেন। সেই মজনু রাজাকার ভারতে যাওয়ার পথে একটা ব্রীজে পাহারা দিতো। সেখান দিয়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের তিনি নিরাপদে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আপনারা বলেন সে মুক্তিযোদ্ধা না রাজাকার। তালিকা প্রকাশ করার আগে এই বিষয়গুলো একটু চিন্তা করা উচিত। কিন্তু যারা নিরুপায় হয়ে রাজাকারী করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছে তাদের বিষয়টিও বিবেচনা করা দরকার। জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আগে অনেক বিভ্রান্তি ছিলো, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দেওয়ার পর এসব বিভ্রান্তি আর নাই। কিন্তু চক্রান্ত এখনো আছে। আমরা যারা দেশকে স্বাধীন করেছি সেই সব মুক্তিযোদ্ধাদের উচিত একসাথে প্রধানমন্ত্রীর কাজগুলো সমর্থন করে তার হাতকে শক্তিশালী করা, যাতে এই দেশটা উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে-আমরা গৌরবের সাথে বলতে পারি আমরা বাংলাদেশী।
জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, আমরা জাতির পিতার হাত ধরে একটা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছিলাম। এখন তার সুযোগ্য কন্যার হাত ধরে দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী একটি দেশ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছি। আপনারা হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে এই দেশটাকে স্বাধীন করেছেন, এখন দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী করার জন্য আমাদের যে যুদ্ধ সেই যুদ্ধেও আপনারা থাকবেন। আমরা সবাই একসাথে কাজ করে এই দেশকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবো।
পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান পিপিএম(বার) বলেন, স্বাধীনতার যুদ্ধের ২৫শে মার্চ রাতে তখনো বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা করেন নাই। রাজারবাগ পুলিশ লাইনে কিন্তু তখন হামলা হলো এই হামলায় কিন্তু তখন ১১৮০ জন এই হামলায় নিহত হয়েছিলো সেদিন। তারা কিন্তু সেই সময় কোন পদকই পাই নাই। আজকে এই পুলিশকে আমরা সম্মনা দিবো। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের যদি চেতনা না থাকে। আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধে মূল জিসিন হচ্ছে আমরা নির্যাতিত হয়েছিলাম, আমরা বঞ্চিত ছিলাম, আমরা শোষণ হয়েছিলাম। এই শোষণ নির্যাতন থেকে শোষণ থেকে মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু কিন্তু স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু একটা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে এই দেশের মানুষকে একত্র করেছিলো। তিনি চেয়েছিলেন এই দেশে অর্থনীতি ভাবে এই দেশের মানুষের বৈষম্য সেটা দূর করতে চেয়েছিলো। তারা এই দেশের উপর নানা ভাবে শোষণ করছিলো এই কারণেই কিন্তু মানুষের মধ্যে একটা জনমত গড়ে উঠেছিলো। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধব্বংস করে দিতে চেয়েছিলো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই চেতনাকে আবার ফিরে এনেছে। মুক্তিযোদ্ধা যারা আছে রাষ্ট্রীয় ভাবে সামাজিকভাবে আপনাদেরকে সম্মানিত করা হয়েছে। তারা এখন গর্ব করতে পারেন আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আপনারা সেইভাবে কিন্তু সমাজে সম্মানিত। এটা যেন অটুট থাকে। পাকিস্থানের চেয়ে সকল বিষয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, পাকিস্থানের অর্থনৈতিক মূল জিনিস এক্সপোর্ট। ওদের যে রপ্তানী সেটা কিন্তু ২০১২ সালে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে যায়। আমরা পাকিস্থানের রপ্তানীর দেড় গুণ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পরও বলতে পাড়ি আমাদের স্বাধীনতা বৃথা যায়নি। আমরা মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে রয়েছি। আপনারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধরে রাখবেন। আর পরমপরা আপনার সন্তান আপনার সন্তানের সন্তান তার সন্তানকে সবাইকে এই চেতনা যেন অব্যাহত থাকে।
অনুষ্ঠানে উপস্থপনা করেন জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল অফিসার পার্থ প্রতিম দাস, শেরে বাংলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা চায়না রানী সাহা ও ডাঃ আবুল হোসেন কলেজের সহকারী অধ্যাপক শামিমা আক্তার মুনমুন।