॥চঞ্চল সরদার॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় রাজবাড়ী শহরের লোকোসেড বধ্যভূমিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং একই স্থানে সন্ধ্যায় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, অতিথি হিসেবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান পিপিএম(বার), রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মাহফুজার রহমান সরকার বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেদায়েত আলী সোহ্রাব, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবুল হোসেন, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বাকাউল আবুল হাশেম ও সাবেক মুক্তিযোদ্ধা মহসিন উদ্দিন বতু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সভা সঞ্চালনা করেন শেরে বাংলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা চায়না রাণী সাহা।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানীদের দোসর অবাঙালী বিহারীরা অসংখ্য বাঙালীকে এখানে ধরে এনে নির্মমভাবে জবাই করে হত্যা করেছিল। এ জন্য এখানে আসলে বুকটা ভারী হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর আমরা রাজবাড়ী ছেড়ে কুষ্টিয়ার খোকসা অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমরা দুই ভাই(কাজী কেরামত আলী ও কাজী ইরাদত আলী) মুক্তিযুদ্ধে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে আমরা দুই ভাইয়ের দু’পা ফুলে অসুস্থ হয়ে পড়ায় মুক্তিযুদ্ধে যেতে পারিনি। অনেক রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা পেয়েছি। রাজবাড়ীর বিহারীরা ভেবেছিল বাংলাদেশ কখনো স্বাধীন হবে না। তাই তারা বেপরোয়া হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল। পাকিস্তানী ও তাদের দোসররা সারা দেশেই এ ধরণের বধ্যভূমি বানিয়ে বাঙালীদের তুলে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় যখন দ্বারপ্রান্তে তার মাত্র ২দিন আগে ঢাকায় পাকিস্তানীদের দোসর আল বদর বাহিনীর ঘাতকরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল। আজকের এই দিনে আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করছি।
জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, রাজবাড়ীতে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস রয়েছে। এখানে অবাঙালী বিহারীদের শক্তিশালী অবস্থান ছিল। তারা ব্যাপক গণহত্যা চালিয়েছিল। এখানকার বধ্যভূমিতে নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালীদের ধরে এনে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। ২৫শে মার্চের কালো রাতে পাকিস্তানী হানাদাররা যে হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছিল তা মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাস ধরে চলেছে। যুদ্ধের শেষ সময়ে পাকিস্তানীরা যখন নিশ্চিত হয়ে গেল এই দেশকে তারা আর দখলে রাখতে পারবে না তখনই তাদের সেনাবাহিনী ও তাদের দোসররা বুদ্ধিজীবীদের গণহত্যার নীলনকশা করে ১৪ই ডিসেম্বর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ধরে বধ্যভূমিতে নিয়ে হত্যা করেছিল। আজকের এই দিনে আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এবং তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।
পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান পিপিএম(বার) বলেন, আজকের দিনটি বাঙালী জাতির জন্য অত্যন্ত শোকাবহ একটি দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালী জাতি যখন তাদের বিজয়ের জন্য উন্মুখ সেই সময়ে পাক হানাদার বাহিনী তাদের এদেশীয় দোসরদের সহায়তায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছিল। এদিন তারা বেছে বেছে তাদেরকে হত্যা করেছিল, যাতে বাঙালী জাতি স্বাধীন হলেও তাদেরকে নেতৃত্বশূন্য করে রেখে যাওয়া যায়।