॥সোহেল মিয়া॥ অবিশ্বাস্য হলেও সত্য-আধুনিক এই যুগেও ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার আড়পাড়া ইউনিয়নের আড়পাড়া ‘রূপদিয়ার ভিটা’ নামের একটি জায়গা এখনও ভূতের দখলে রয়েছে।
ভূতের ভয়ে সুদীর্ঘকাল ধরে কেউ ওই ভিটায় প্রবেশ করে না। ভূত কি জিনিস, দেখতে কেমন তা কিন্তু এখনও ওই এলাকার কেউ চোখে দেখেনি। তবে ভূতের আজব কর্মকান্ড অনেকে দেখেছে বলে তাদের দাবী।
গত ২৯শে নভেম্বর রূপদিয়ার ভিটায় গিয়েছিলাম ভূতের সন্ধানে। কেন ওই এলাকার মানুষ এখনও ভূতের ভয় পায় সেই অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে নানা অলৌকিক আর মুখরোচক গল্প।
স্থানীয় গবেষক ও প্রাবন্ধিক এম. ইকরামুল হক বলেন, মুঘল স¤্রাট আওরঙ্গজেবের সময় প্রায় তিন একর জমির উপর গড়ে ওঠে রূপদিয়ার ভিটাটি। সেখানে কয়েকশত পরিবার বসবাস করতো বলে ধারণা করা হয়। যেটি রাজা সীতারাম রায়ের দখলে ছিল। হঠাৎ করে একদিন সেখানে মহামারী দেখা দেয়। সেই মহামারীতে বেশীর ভাগ মানুষ প্রাণ হারায়। যারা বেঁচে গিয়েছিল তারা ভয়ে তখন ওই ভিটা থেকে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়। তারপর থেকে আর কেউ ভয়ে ওই ভিটাতে বসতি গড়ে তোলেনি। এখন পর্যন্ত কেউ মহামারীর ভয়ে ওই ভিটাতে প্রবেশ করে না। শত শত বছর ধরে মানুষ প্রবেশ না করার কারণে বর্তমানে ওই ভিটা অনেক গাছপালা ও পশুপাখির আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। এ অঞ্চলের মানুষ এখনও মনে করে, ওখানে বসত গড়ে তুললে তাদের জানমালের ক্ষতি হতে পারে।
রূপদিয়া ভিটার পার্শ্ববর্তী ডুমাইন গ্রামের কিরণ চন্দ্র শীল ও শত কুমার মন্ডল বলেন, ওখানে ভূতের আস্তানা আছে। তাই দিন-দুপুরেও কেউ ওই ভিটার আশেপাশে একা যায় না। ভিটার কাছে গেলেই নাকি সাঁ সাঁ শব্দ আর তীব্র বাতাসের সৃষ্টি হয়। ওই ভিটার পাশের মাঠে যারা কাজ করে তারা সন্ধ্যার আগেই কাজ শেষ করে চলে আসে। বছর দশেক আগে আমাদের গ্রামের ননী বিশ্বাস ওই ভিটার একপাশ পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ করেছিল। প্রথম দিন চাষ দেওয়ার পর দ্বিতীয় দিন থেকে সেই পাওয়ার টিলারটি আর চালু হয়নি। এখন পর্যন্ত সেটি বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া ভিটাটি চাষ দেওয়ার পর ননী বিশ্বাস প্যারালাইসিসে পঙ্গু হয়ে ঘরে পড়ে আছে।
বালিয়াকান্দির মীর মশাররফ হোসেন সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুন্সী আমীর আলী ও স্বরলিপি কিন্ডার গার্টেনের অধ্যক্ষ চৌধুরী রফিকুন্নবী টিটো বলেন, এটা মূলতঃ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। বিজ্ঞানের এই যুগে এর কোন ভিত্তি নেই। জন্মগতভাবেই অন্ধ বিশ্বাস আর কুসংস্কার এখনও আমাদের সমাজে রয়েছে।
কলেজ শিক্ষক আলীম-আল রাজী বলেন, বাস্তবতায় ভূতের কোন ভিত্তি নেই। এটা কাল্পনিক। ভূত সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত কোন ব্যাখা নেই। তবে সমাজ-প্রকৃতির সাথে মানুষের জীবনের বাস্তবতার অনেকটা মিল রয়েছে। কাকতালীয়ভাবে তা মানুষের জীবনের সাথে মিলেও যাচ্ছে। তাহলে রূপদিয়ার ভিটার মূল রহস্য কি, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন ওই অঞ্চলে একটি শিশু জন্মগ্রহণ করছে তখন শিশুটি তার চারপাশের পারিপার্শ্বিকতায় বেড়ে উঠছে। শিশুটি কাল্পনিক গল্প শুনতে শুনতেই বড় হচ্ছে। যার কারণে শিশুটির মন-মানষিসতার বিকাশও সেভাবেই ঘটছে। এভাবেই ওখানে যুগের পর যুগ, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মাধ্যমে কুসংস্কার চলে আসছে। আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে ভূতের অস্তিত্বের কোন প্রমাণ মেলেনি। অন্ধ বিশ্বাস আর কুসংস্কারের কারণেই সমাজে ভূতের কথা শোনা যায়। বিজ্ঞানে এর কোন ভিত্তি নেই। কেউ এখন পর্যন্ত বলতে পারেনি যে নিজ চোখে ভূত দেখেছে। যারা উদ্বিগ্ন ও হতাশাগ্রস্ত তাদের উপরই ভূত ভর করে।