Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

২১ বছর পর দেশসেবার সুযোগ লাভের পর থেকেই আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সার্বিকভাবে দেশের উন্নয়নের- প্রধানমন্ত্রী

॥মাতৃকন্ঠ ডেস্ক॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের কক্সবাজারে উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। প্রকল্পগুলো হলো-দীর্ঘ প্রতীক্ষিত কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ,কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বড় আকারের ৭৩৭-৮০০ বোয়িং এয়ারক্রাফটের মুভমেন্টের জন্য কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ, কক্সবাজার আইটি পার্ক, নাফ ট্যুরিজম প্রকল্প এবং মহেশখালিতে দুইটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল সম্প্রসারণ। কক্সবাজারে দেশের সর্ববৃহৎ মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কক্সবাজারের কলাতলী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্রের পাড় দিয়ে চলে যাওয়া এই ৮০কি.মি দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের সড়ক পথটি ৪-লেন করার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অর্থনীতিতে কক্সবাজারের গুরুত্ব বিবেচনায় চট্টগ্রাম-কক্সকাজার সড়কটিও ৪-লেন করার ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মেরিন ড্রাইভওয়ে ’৭৫-এর পর থেকে দীর্ঘদিন অবহেলিত কক্সবাজারের সৌন্দর্য অবলোকনে শুধু পর্যটকদের আকর্ষণই করবে না বরং এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রশস্থ এই মেরিন ড্রাইভটি নির্ধারিত সময়ের ১৪ মাস আগেই নির্মাণ কাজ শেষ করে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক বক্তৃতা করেন। স্বাগত বক্তৃতা করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালযের সচিব এম এন সিদ্দিক। অনুষ্ঠানে সংসদ সদসবৃন্দ, তিন বাহিনী প্রধানগণ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও আমন্ত্রিত অতিথিবর্গসহ সরকারের সামরিক ও বেসামরিক পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার বিমানবন্দরকে একটি আন্তর্জাতিকমানের বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে কক্সবাজারের পর্যটন এলাকার সম্প্রসারণ এবং উন্নয়নের নানা পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের এই রাস্তাটিকে ৪-লেনে উন্নীত করা হবে। কারণ ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ৪-লেন আমরা করেছি। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার এই রাস্তাটিকেও ৪-লেনে উন্নীত করে যোগাযোগের ব্যবস্থা করবো। তিনি বলেন, কক্সবাজার এয়ারপোর্টে যাতে প্রতি সপ্তাহে ঢাকা থেকে অন্তত একটা ফ্লাইট আসতে পারে আপাতত সেই ব্যবস্থাটা আমরা করে দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজার বামনবন্দরটিকে একটি আধুনিক-উন্নত বিমানবন্দর হিসেবেই গড়ে তোলা হবে। সেই প্রকল্প ও আমরা শুরু করেছি। আপাতত একটি টার্মিনাল ভবন থেকে শুরু করে সবকিছুর কাজ আমরা শুরু করবো। তিনি বলেন, আর যে সমস্ত মানুষ এই এলাকায় থাকতো- আপনারা জানেন, প্রায় ৪ হাজারের মত মানুষ তাদের জন্য আমরা আলাদাভাবে নদীর (কর্ণফুলী) ওপারে আমরা ঘর-বাড়ি ও ফ্লাট তৈরি করে দিচ্ছি। এদের অধিকাংশই শুটকি তৈরি করেন, শুটকি বিক্রি করেন। তাদের জন্য সেখানে শুটকির হাটও করে দেয়া হবে। শুটকি মাছ শুকানোসহ তাদের বাসস্থানেরও জায়গা করে দেয়া হবে। ইতোমধ্যে সেই উন্নয়নের কাজও চলছে এবং নদীর ওপরে শিগগিরই ব্রীজ বানানো হবে। এখানকার মানুষগুলোকে সেখানে পুনর্বাসনের পাশাপাশি আমরা বিমানবন্দরের জন্য নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণ করবো এবং রানওয়েটাকেও আরো প্রশস্ত ও দীর্ঘ করা হবে। এটা যেহেতু আন্তর্জাতিক এয়ার রুটে পড়ে তাই ভবিষ্যতে যেকোন দেশ থেকে এখানে এসে যেন বিমান রিফ্যুয়েলিং করতে পারে তার ব্যবস্থাও করা হবে। শেখ হাসিনা বলেন, এই মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের জন্য আমাদের সেনাবাহিনী যে কষ্ট করেছে, তারা সেই ২০১০ সালে যখন কাজ শুরু করলো, এখানেতো কাজ করতে গেলেতো ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা প্রাকৃতি দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করেই কাজ করতে হয়। এখানে কাজ করতে গিয়েই পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে আমাদের সেনাবাহিনীর ৬ জন সদস্য জীবন দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের আত্মার মাগুফেরাত কামনা করেন এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবোরের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, আমার খুব কষ্ট লাগছে, আবার একদিকে আমরা আনন্দিত। আমার এতগুলো মানুষ এখানে জীবন দিয়েছেন, যারা এখানে ক্যাম্প করে ছিলেন। কিন্তু তারা সেখানে মাটিচাপা পড়ে জীবন দিয়ে যান। তাদের কথা সবসময়ই আমার মনে হয়। এত বাধাবিঘœ অতিক্রম করে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই আমাদের সেনাবাহিনী বিশেষ করে ১৬ ইসিবি এটাকে সুন্দর করে নির্মাণ করে দিয়েছেন। এজন্য তিনি এই কর্মের সঙ্গে সংযুক্ত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, সকলে খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন বলেই এই অসাধ্য সাধন সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর দেশসেবার সুযোগ লাভের পর থেকেই আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সার্বিকভাবে দেশের উন্নয়নের। তিনি বলেন, কক্সবাজার সবসময়ই অবহেলিত ছিল, এত সুন্দর আমাদের একটা সমুদ্র সৈকত। সেই সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এবং দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ আসে। কাজেই এই অঞ্চলটাকে আরো সুন্দরভাবে ও আকর্ষণীয়ভাবে গড়ে তোলাটা আমাদের কর্তব্য বলেই আমরা মনে করি। তিনি বলেন, এই কক্সবাজারে আমি অতীতে বহুবার এসেছি, শুধু যে বেড়াতে এসেছি তা নয়, ’৯১-এর প্রলংকরি ঘুর্ণিঝড়ের পর আমরা এখানে এসে দিনের পর দিন থেকেছি। বিভিন্ন দ্বীপে দ্বীপে ঘুরে বেড়িয়েছি। তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে কিছুই ছিল না, মাছের ট্রলারে করে ঘুরে বেড়িয়েছি, সাম্পানে করে বা কেউ একটু লঞ্চে পৌঁছে দিয়েছে সেভাবে ঘুরেছি। পায়ে হেঁটে প্রত্যেকটি অঞ্চল ঘুরে রিলিফ ওয়ার্ক করেছি এবং দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, সব সময়ই একটা চিন্তা ছিলো যে, কিভাবে এই দরিদ্র মানুষগুলোর ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাব। আজকে যে মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধন হলো সেই মেরিন ড্রাইভের মধ্যদিয়ে যেমন মানুষ সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ পাবে সেই সাথে সাথে এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেরও বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ অঞ্চলের মানুষের সার্বিক উন্নয়নের একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মনে করি আমাদের এই দেশটাকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই আমরা অনেক উন্নয়ন কাজ করেছি। তবে, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটাই খারাপ অবস্থায় রয়েছে যে, তা বলার মত নয়। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্যই কক্সবাজারের যোগাযোগ অববাঠামোর সার্বিক উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁর জঙ্গিবাদ বিরোধী জিরো টলারেন্স নীতির পুনরোল্লেখ করে বলেন, আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকবে, এখানে সব ধর্মের মানুষ নিরাপদে বসবাস করবেন সেটাই আমরা চাই।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার কক্সবাজারে একযোগে ৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৯টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। দুপুরে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম থেকে প্রধানমন্ত্রী একযোগে এই প্রকল্পগুলো উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ সময় সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদ ওবায়দুল কাদের, গণপূর্ত মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের ১০০ শয্যাবিশিষ্ট ছাত্রী নিবাস, কক্সবাজার সরকারি কলেজের অ্যাকাডেমিক ভবন কাম এক্সামিনেশন হল, কক্সবাজার সরকারি কলেজের ১০০ শয্যাবিশিষ্ট ছাত্রী নিবাস, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব মহিলা কলেজ, উখিয়া, কক্সবাজার এর দ্বিতল অ্যাকাডেমিক ভবন এবং মহেশখালী-আনোয়ারা গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন উদ্বোধন করেন। আর যে ৯টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন, সেগুলো হচ্ছে- কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প (১ম পর্যায়) এলজিইডি অংশ এর আওতায় কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলাধীন বাকখালী নদীর উপর খুরুস্কুল ঘাটে ৫৯৫.০০ মি. দৈর্ঘ্যরে পিসি বক্সগার্ডার ব্রীজ, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কক্সবাজার আইটি পার্ক, এক্সিলাটে এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেড কর্তৃক নির্মিতব্য মহেশখালী ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল, সামিট এলএনজি টার্মিনাল কোঃ (প্রাঃ) লিঃ কর্তৃক নির্মিতব্য কক্সবাজার মহেশখালীতে দ্বিতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায় এসপিএম (ইনস্টলেশন অব সিংগেল পয়েন্ট মুরিং) প্রকল্প, নাফ ট্যুরিজম পার্ক, কুতুবদিয়া কলেজের অ্যাকাডেমিক ভবন এবং কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অফিস ভবন।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহেশখালী থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত ৯১ কিলোমিটার গ্যাস সরবরাহ লাইন উদ্বোধন করেছেন। এরফলে দেশের জ¦ালানি নিরাপত্তার অগ্রগতি এবং গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ হবে। গ্যাস পাইপলাইনের উদ্বোধন ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারে দু’টি ফ্লটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশন টার্মিনাল ইউনিট (এফএসআরইউ) ও সিঙ্গেল পয়েন্ট মরিং (এসপিএম) নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। সরকারি সূত্র জানায়, সরকার ১ হাজার ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে মহেশখালী থেকে চট্টগ্রামের আনোয়ারা পর্যন্ত ৩০ ইঞ্চি ডায়ামিটারের ৯১ কিলোমিটার গ্যাস সরবরাহ লাইন স্থাপন করেছে। প্রস্তাবিত মহেশখালী এলএনজি টার্মিনালের মাধ্যমে আমদানিকৃত এলএনজি গ্যাস সরবরাহের জন্য এই লাইন স্থাপন করা হয়েছে। এই পাইপ লাইন স্থাপনের ফলে দেশে আরো বেশি শিল্প স্থাপন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও আমদানিকৃত এলএনজির মাধ্যমে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিদ্যমান ও পরবর্তীতে তৈরির জন্য বিদ্যুৎ প্লান্ট, সার কারখানা ও অন্যান্য শিল্প স্থাপন করা যাবে। আকাশচুম্বি চাহিদার বিপরীতে গ্যাসের রিজার্ভ শেষ হতে থাকায় সরকার ২০১৮ সালের মধ্যে বিদেশ থেকে এলএনজি গ্যাস আমদানি করে প্রত্যেক এফএসআরইউ হতে দৈনিক ৫শ’ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহের চিন্তা-ভাবনা করছে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক ‘এক্সসিলারেট এনার্জি’ মহেশখালীতে প্রথম এফএসআরইউ নির্মাণ করবে, যা দৈনিক ৫০ কোটি মিটার স্ট্যান্ডার্ড কিউবিক ফিট (এমএমএসসিএফডি) ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন। দ্বিতীয়টি নির্মাণ করবে সামিট গ্রুপের সামিট এলএনজি টার্মিনাল কোম্পানি। যার দৈনিক ধারণক্ষমতাও ৫শ’ এমএমসিএফডি। বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসএমপি প্রকল্প সূত্র জানায়, চীনের এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৮ সালের মধ্যে ‘গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট’ (জিটুজি) চুক্তিতে চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ব্যুরো (সিপিপিবি) ডাবল পাইপলাইনের এই প্রকল্প সম্পন্ন করবে। এর আগে এ ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষিতে আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প গ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, সরকার বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি সংক্রান্ত প্ল্যান্ট নির্মাণে বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহিত করছে। এছাড়াও জ¦ালানি নিরাপত্তা ও ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সরকার অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। দেশের জ¦ালানি নিরাপত্তায় এসব প্রকল্প খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের ভিশন-২০২১কে উপলক্ষ করে এসব প্রকল্পের ডিজাইন করা হয়েছে।
কক্সবাজার থেকে সারাদেশে ইয়াবা সরবরাহে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সে যেই হোক না কেন কঠোর শান্তি পেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারের বদনাম রয়েছে- এখান থেকে নাকি ইয়াবা সারা বাংলাদেশে সরবরাহ হয়। এই ইয়াবা সরবরাহ বন্ধ করতে হবে। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদেরকে শাস্তি পেতেই হবে। তাদের কোনরকম রেহাই দেয়া হবে না। কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কক্সবাজার শাখা আয়োজিত জনসমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। তিনি মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে বলেন, মাদক এক একটা পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়। এই মাদকের ছোবলে এক একটা মানুষের জীবন শেষ হয়ে যায়। এক একটা মানুষ যখন মাদক সেবন শুরু করে সে পৌরষত্ব হারায়, সে তার চিন্তা শক্তি হারায়, সে অসুস্থ হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করে। কোন বাবা-মা চায় না যে তার সন্তান এভাবে অকালে মৃত্যুর পথে চলে যাক। এভাবে শেষ হয়ে যাক, কাজেই এই মাদকদ্রব্য থেকে আমাদের সন্তানদের রক্ষা করার জন্য সমাজের সকল স্তরের জনগণের কাছে আমি আহবান জানাবো। শেখ হাসিনা এ সময় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ বাংলার মাটিতে কোনভাবে চলবে না, চলতে পারে না। এর বিরুদ্ধে সকলকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আমি আহবান জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলামের নাম নিয়ে কেউ জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস সৃষ্টি করবে এটাকে আমরা বরদাশত করবো না। তাই এই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের হাত থেকে আমাদের ছেলে-মেয়েদের রক্ষা করতে হবে। অন্যান্যের মধ্যে সমাবেশে গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বক্তৃতা করেন। কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা সভায় সভাপতিত্ব করেন। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের মত সামাজিক ব্যাধি থেকে উত্তোরণে দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটা জিনিসই চাই সারাদেশের ইমাম, মুয়াজ্জিন, ওলামা-মাশায়েখ শিক্ষক সহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষ যারা আছেন এই কক্সবাজারবাসী সবাইকে আমি বলব সারাদেশে আমাদের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের প্রেক্ষাপট স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে বাংলার মানুষের জন্য আমার বাবা জীবন দিয়েছেন, আমার মা জীবন দিয়েছেন, আমার ভাইয়েরা জীবন দিয়েছেন সেই বাংলার মানুষেরা ভালভাবে বাঁচবে, উন্নত জীবন পাবে তাঁদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শিখে বড় হবে, মানুষের মত মানুষ হবে তাঁর বাবার সেই স্বপ্ন পূরণেই তিনি এবং তাঁর সরকার দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন।