॥মোক্তার হোসেন॥ রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলায় ‘বঙ্গবন্ধুর দর্শন, সমবায়ে উন্নয়ন’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গতকাল ২রা নভেম্বর জাতীয় পতাকা ও সমবায় পতাকা উত্তোলন, বর্ণাঢ্য সমবায় র্যালী, আলোচনা সভা এবং পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে ৪৮তম জাতীয় সমবায় দিবস-২০১৯ পালিত হয়েছে।
পাংশা উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় এসোসিয়েশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবিএম লিয়াকত আলী খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, পাংশা মডেল থানার ইন্সপেক্টর(তদন্ত) জে.ও.এম তৌফিক আজম, পাংশা উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া বেগম, পাংশা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা এম.এ নাহার, বিআরডিবি কর্মকর্তা মোঃ চাঁদ আলী ও ডাঃ জয়নাল আবেদীন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
স্বাগত বক্তব্য দেন পাংশা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা এস.এম কামরুন নাহার। উপস্থাপনা করেন ছায়া সঞ্চয় ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম সেলিম।
স্বাগত বক্তব্যে সমবায় কর্মকর্তা এস.এম কামরুন নাহার বলেন, প্রতি বছর নভেম্বর মাসের প্রথম শনিবার জাতীয় সমবায় দিবস দেশব্যাপী উদযাপিত হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে এই দিবসের প্রবর্তন করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের সফল উদ্যোগ ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের স্থায়ী নিবাসের জন্য সৃষ্ট আশ্রয়ন প্রকল্প। পাংশা উপজেলায় সমবায় অধিদপ্তরের অধীন আশ্রয়ন প্রকল্পের ১টি সমিতি আছে। যার উপকারভোগী পরিবারের সংখ্যা ২৬০। বর্তমান সরকার দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সমবায় অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিশেষ দুগ্ধ প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। তারই অংশ হিসেবে পাংশা উপজেলায় হাবাসপুর ও বাহাদুরপুর ইউপিতে ২টি দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও পাংশা উপজেলায় মিল্কভিটার ৩টি সমবায় সমিতি আছে। যার মাধ্যমে বাহাদুরপুর ইউনিয়নে দুগ্ধ শীতলীকরণ কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। এসব ছাড়াও কৃষি ব্যবস্থাপনায় পানি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়ন, মৎস্য চাষ প্রভৃতির মাধ্যমে সমিতির সদস্যদের উন্নয়নের লক্ষ্যে ১০টি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি রয়েছে। এ ব্যাপারে এলজিইডি সমিতিতে খালখনন, বাঁধ ও কালভাট-স্লুইজগেট নির্মাণে কার্যকরী ভূমিকা রাখছে।
এস.এম কামরুন নাহার আরো বলেন, বর্তমানে পাংশা উপজেলাতে বেশির ভাগ সমিতিই তাদের মূলধন বিনিয়োগ ও আয়ের উৎস হিসেবে ঋণদান কর্মসূচী পরিচালনা করছে। কিন্তু ভালো ঋণগ্রহিতার কাছে ঋণ না পৌঁছালে ঋণটি এক পর্যায়ে খেলাপী ও কুঋণে পরিণত হয়। যা সমিতির উন্নয়নে বাঁধাগ্রস্ত করে তোলে।
তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে-সমবায় সমিতিগুলোর বিনিযোগ খাতে পরিবর্তন আনার। কৃষি ও ভোগ্যপণ্যখাতে বিনিয়োগ করলে সমিতি লাভবান হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, শতবর্ষী সমবায়ের একটি প্রাচীন ও গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস আছে। সেই ইতিহাসের কলেবর যুগের সাথে তাল মিলিয়ে দীর্ঘতর হচ্ছে। দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সমবায়ীদের আন্তরিক প্রচেষ্টার গুরুত্বারোপ করেন তিনি। সভায় সমবায়ের মূলনীতি অনুসরণের আহবান জানানো হয়।
জানা যায়, এবছর উপজেলা প্রশাসন, সমবায় বিভাগ ও সমবায়ীদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত জাতীয় সমবায় দিবসের অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ সমিতি হিসেবে বাহাদুরপুরের বাঁধন বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড, ছায়া সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড, হাবাসপুর প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লিমিটেড, ঢেঁকিপাড়া খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড, পাংশা কল্যাণ সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেড ও মাছপাড়ার সেডনা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড, শ্রেষ্ঠ সমবায়ী পদ্মা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের নাসিরুল হক, অগ্রণী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের আকরাম হোসেন, হাবাসপুর প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লিমিটেডের শিপন মাহমুদ, বাহাদুরপুর প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লিমিটেডের নূর আলী প্রামাণিক ও চর আফড়া মধ্যপাড়া কৃষক সমবায় সমিতি লিমিটেডের রফিকুল ইসলামকে পুরস্কৃত করা হয়।
কাশফুল-১৮ সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেড ও সাড়া সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডসহ বিভিন্ন সমবায় সমিতি ব্যানার সহকারে জাতীয় সমবায় দিবসের কর্মসূচীতে অংশ নেয়।