॥এম.এইচ আক্কাছ॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলায় পদ্মা নদীতে ইলিশ শিকারের ধুম পড়েছে। নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে জেলেরা নদীতে নেমে পড়ছে।
প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের অভিযানে জেলেদের আটক করে জেল-জরিমানা এবং জাল-মাছ জব্দ করা হলেও অভিযান তেমন ফলপ্রসু হচ্ছে না। অনেকে আবার বাহাদুরী দেখানোর জন্য অভিযানকে চ্যালেঞ্জ করে রীতিমত ফেসবুকে ইলিশ শিকারের ছবিও পোস্ট করছে।
মৎস্য বিভাগ বলছে, জনবলের ঘাটতি, আর্থিক সংকট, জেলেদের অধিক গতি সম্পন্ন ইঞ্জিনের নৌকা ব্যবহার ও ইলিশ রক্ষা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যদের মধ্যে আন্তরিকতার ঘাটতি থাকায় অভিযান ফলপ্রসু হচ্ছে না। সবসময় অভিযান চালানোও যাচ্ছে না।
সরেজমিনে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম এলাকায় পদ্মা নদীর কয়েকটি পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, নদীতে অসংখ্য জেলে নৌকা ইলিশ শিকার করে চলেছে। চারদিকে শুধু নৌকা আর নৌকা। দ্রুত গতির ইঞ্জিন চালিত নৌকাগুলো কালো ধোঁয়া ছেড়ে ছুটাছুটি করছে। অনেক উজানে গিয়ে নদীতে জাল ফেলে ফের ভাটির দিকে ভেসে যাচ্ছে। ভাসতে ভাসতে জাল তুলে ফেলছে। তাতে আটকা পড়ছে ইলিশ। অনেক নৌকায় থাকা লোকজনের মুখ আবার কাপড় দিয়ে ঢাকা দেখা যায়।
অন্তার মোড় এলাকার নদীর পাড়ে কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, এ এলাকায় অন্ততঃ ২০০ নৌকা তো মাছ ধরছেই। এতো নৌকার বিষয়ে তারা বলেন, স্থানীয়দের পাশাপাশি পাবনা ও মানিকগঞ্জ থেকে অনেক নৌকা এসে মাছ ধরছে।
নদীর পাড়ে মাছ কেনার অপেক্ষায় থাকা কয়েকজন বলেন, প্রতিটি নৌকায় বর্তমানে ২০ কেজি থেকে এক-দেড় মণ করে ইলিশ মাছ রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার সময়ে অনেকে জেলে ভয়ে নদীতে নামে না। যারা নামে তাদের নৌকায় মাছ পাওয়া যায়। তুলনামূলকভাবে দামও কম, তাই অনেকে কিনতে আসেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, যখন প্রশাসন নদীতে নেমে ধাওয়া দেয় তখন তাড়াহুড়া করে জেলেরা নদী পাড়ি দিয়ে পালায় বা গ্রামে ঢুকে পড়ে নিজেদের রক্ষা করতে। তখন অনেক কম দামে তাদের কাছ থেকে মাছ কেনা যায়।
তিনি আরো বলেন, নদীতে অভিযানের সময় গোয়ালন্দ উপজেলা মৎস্য বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী আগে ভাগেই মোবাইলে জানিয়ে দেওয়ায় অভিযান সফল হয়না এবং এ কারণেই জেলেরা নদীতে বেপরোয়াভাবে নামছে। এসব জেলেরা কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রধান প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে ইলিশ ধরার উপর গত ৯ই অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ২২দিনের সরকারী নিষেধাজ্ঞা চলাকালে এ পর্যন্ত (১৮ই অক্টোবর) ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ৬২ জনকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদানের পাশাপাশি ৩ লক্ষ ৬০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে ধ্বংস এবং ৫৬০ কেজির মতো ইলিশ মাছ উদ্ধার করে বিভিন্ন এতিমখানা-মাদ্রাসা ও গরীব মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল শরীফ বলেন, আমাদের জনবল ঘাটতি ও আর্থিক সংকটের পাশাপাশি অভিযানে নামলে জেলেদের নৌকার ইঞ্জিনের গতি এত বেশী যে তাদের সাথে পেরে উঠতে পারি না। তাছাড়া টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যদের মধ্যেও আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে। যেমন গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মোঃ রবিউল ইসলাম নিজের ইচ্ছে মতো নদীতে নামছেন। তিনি কাউকে না জানিয়ে বা সাথে না নিয়ে নদীতে নামছেন। কি করছেন জানতে পারছি না। আমার মতে যা মোটেও ঠিক হচ্ছে না।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, মৎস্য বিভাগের চেয়ে আমরা অনেক বেশী সক্রিয় রয়েছি। নিয়মিত নদীতে নেমে অভিযান চালাচ্ছি। অভিযানে গেলে উপজেলা প্রশাসন বা মৎস্য কর্মকর্তাকে ফোনে জানিয়ে দেই। কাউকে আটক করলে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তাদের বিচার করা হচ্ছে।