॥মাহবুব হোসেন পিয়াল॥ ফরিদপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। দ্রুত গতিতে নি¤œাঞ্চলগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে বন্যার পানি।
অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রীরচর, নর্থ চ্যানেল, আলীয়াবাদ, চরমাধবদিয়া ও ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা। ফলে দুর্ভোগে পতিত হয়েছে এসব এলাকার হাজার হাজার মানুষ।
পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টের গেজ রিডার ইদ্রিস আলী জানান, ‘গত ২৪ ঘন্টায় পদ্মা নদীর পানি আরও ২০ সেঃ মিঃ বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল ১৯শে জুলাই সকাল ৬টায় ওই পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৪ সেঃ মিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।’ ফরিদপুরের বন্যা কবলিত এলাকাবাসী জানিয়েছেন, আগামী দুই দিন এই গতিতে পানি বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রীরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টু জানান, তার ইউনিয়নের প্রায় ৮০ ভাগ এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। নতুন করে পূর্বডাঙ্গী, মুন্সিডাঙ্গী ও ব্যাপারীডাঙ্গীতে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ক্ষেতের ফসল ও গবাদীপশু নিয়ে মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে। আলীয়াবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক ডাবলু জানান, তার ইউনিয়নের পদ্মা নদী সংলগ্ন এলাকায় দ্রুত গতিতে বন্যার পানি ডুকে পড়ায় ইউনিয়নের সাদীপুর, গদাধরডাঙ্গী ও আলীয়াবাদ এলাকার পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। চরমাধবদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মীর্জা সাইফুল আজম জানান, তার ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বাঘেরটিলার প্রধান সড়কটি বন্যার পানির তোড়ে ভেসে যাওয়ায় ওই এলাকার প্রতিটি বাড়ীতে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে ফলে কয়েকশত মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মজনু জানান, তার ইউনিয়নের দূর্গাপুর, জমাদ্দারডাঙ্গী ও বাঘেরটিলা এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় প্রায় ৫০টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাকুজ্জামান মোস্তাক জানান, পানি বৃদ্ধিতে তার ইউনিয়নের কয়েকশত বাড়ী-ঘরসহ আউশ ধান ও ভুট্টা ক্ষেত তলিয়ে গেছে। মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে।
নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের কাইমদ্দিন মাতুব্বরেরডাঙ্গী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকার যোগাযোগের একমাত্র পাকা রাস্তাটির কালুর বাজার থেকে পান্নুর দোকান পর্যন্ত সোয়া কিলোমিটার অংশ তলিয়ে গেছে। তার উপর দিয়েই শিক্ষার্থী ও পথচারীদের চলাচল করতে হচ্ছে। আয়েশা পারভীন নামের স্থানীয় এক স্কুল ছাত্রী রাস্তায় পানি উঠে যাওয়ায় যাতায়াতের সমস্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, যেভাবে পদ্মার পানি বাড়ছে তাতে শনিবার থেকে স্কুলে যেতে পারবো কিনা বলতে পারছি না। পানিতে ¯্রােতও অনেক বেশী। গৃহবধূ মাজেদা বেগম বলেন, পানি বেড়ে যাওয়ায় ছোট ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না। যাদের নৌকা নাই তাদের বাজারঘাটে যেতেও সমস্যা হচ্ছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সদরপুর ও ভাঙ্গা উপজেলার বেশকিছু পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মনিটরিং সেল চালু করা হয়েছে।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) রোকসানা রহমান জানান, নদীতে পানি বাড়ায় ৪টি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ৫০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। দুর্গতদের সাহায্যের জন্য ফরিদপুর সদর ও সদরপুরে ১৫ মেট্রিক টন করে, চরভদ্রাসনে ১০ মেট্রিক টন এবং ভাঙ্গায় ২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া এই ৪টি উপজেলার সকল সরকারী কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো ছাড়াও সংশ্লিষ্ট স্কুল ও মাদ্রাসাগুলো খোলা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ এনামুল হক জানান, পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য ৯২টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
পদ্মা নদীর অব্যাহত পানি বৃদ্ধির কারণে ফরিদপুরের বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে
